ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

‘কাজ-টাকা আমাদের, লাভ শুধু অনুপ সাহেবের’

  আসিফ কাজল

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:২৬  
আপডেট :
 ২০ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:২৭

‘কাজ-টাকা আমাদের, লাভ শুধু অনুপ সাহেবের’
অনুপ রায়

কখনো সাইট পরিদর্শন করেন না। ব্যক্তিগত লোক দিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলেন। চাঁদা না পেলে করেন খারাপ ব্যবহার। তার অধীনে চলমান সব প্রকল্পের সুইচ, সকেট, তার, ফ্যান, লাইট কিনতে হবে নির্দিষ্ট দোকান থেকেই। তবেই মিলবে কাজের বিল।

এমন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের গাজীপুর জেলার সহকারী প্রকৌশলী অনুপ রায়ের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ জমা পড়েছে। ঠিকাদাররা বলছেন, এই ব্যক্তির কাছে আমরা জিম্মি হয়ে আছি। আমাদের দুঃখ একটাই তা হলো- ‘কাজ আমাদের, টাকা আমাদের, লাভ শুধু অনুপ রায় সাহেবের।’

কার্তিক চন্দ্র রায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, সহকারী প্রকৌশলী অনুপ রায় ১০ আর এম তারের বিপরীতে ৪ আর এম তার ব্যবহার করে পুকুর চুরি করছেন। যে সব ঠিকাদার প্রতিবাদ করেছেন, তাদের বিল কেটে দিয়েছেন এবং বিল নিতে ২০ শতাংশ টাকা দিতে বাধ্য করেন। তিনি সবসময় হুমকি দিয়ে বলেন, আমি বিএসসি ইনঞ্জিনিয়ার আগামীতে নির্বাহী প্রকৌশলী হবো, বেশি কথা বললে লাইসেন্স বাতিল করে দেবো।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর জেলার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়ার পর অনুপ রায় সীমাহীন দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। অনুপ রায় কখনও সাইট পরিদর্শন না করে তার ব্যক্তিগত নিয়োগপ্রাপ্ত নজরুলকে সাইটে চাঁদার টাকার জন্য পাঠান। সঠিকভাবে চাঁদা না পেলে ঠিকাদারদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সব প্রজেক্টের মালামাল নির্দিষ্ট লোক ও দোকান থেকে ঠিকাদারদেরকে নিতে বাধ্য করেন। যারা মালামাল নিয়ে আসেন তাদের ভাষ্যমতে কোনো টেস্ট দরকার নেই। আমরা স্যারকে টাকা বা কমিশন দিয়ে থাকি। আপনারা সঠিক বিল পেলেই তো হলো।

এ বিষয়ে ঠিকাদার সেজে অনুপ রায় কোথায় নজরুলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি অফিসে আছেন বলে জানান। পরে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বলেন, আসলে যিনি এই অভিযোগ করেছেন তার সই জাল করে এই অভিযোগ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। পরে এই ঠিকাদার মুচলেকা দিয়ে এই অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন।

জানা যায়, গাজীপুর উচ্চ বিদ্যালয়, গাজীপুর স্কুলটি ভার্টিক্যাল, ২ কিলোওয়াট সোলার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সোলার স্থাপনের জন্য এক কিলোওয়াট সোলার স্থাপন করা হয়েছে। এই বিষয়ে ঠিকাদাররা বলেন, ২ কিলোওয়াটের বিল দেয়ার আশ্বাস দেন অনুপ রায়। তিনি বলেন, আপনার সমস্যা কোথায়। এক কিলোওয়াট বসালেও ২কিলোওয়াটের বিল পাবেন।

ইলেকট্রিক কাজগুলো সাবকন্ট্রাক্ট ডিজাইন পরিবর্তন করে তারসহ যাবতীয় মাল কম পরিমানে ফিটিং করে সব অর্থ লুটপাট করে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনুপ রায় ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে গাজীপুরে সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা মেট্রো এলাকার ঠিকাদারদেরও নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে কাজ করেছেন অনুপ রায়। সেখানেও কাজের মান ভাল নয় বলে খোদ শিক্ষা প্রকৌশলের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ জার্নালকে জানান। এছাড়াও তেঁজগাও কলেজে তার অধীনে নিম্নমানের কাজ হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক সময় কাজ না করেও ঠিকাদারদের বিল দিয়ে দেন তিনি। এ জন্য অনেক ঠিকাদারের কাছে পূজনীয় এই সহকারী প্রকৌশলী।

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে অনুপ রায় বলেন, একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক ঠিকাদারের নাম ব্যবহার করে এই অভিযোগটি করেছেন, যা সত্য নয়। গাজীপুরের যে স্কুলের সোলার প্যানেলের কথা বলা হচ্ছে তার কাজ এখনো শুরু হয়নি।

ঢাকা মেট্রোর অনেক প্রকৌশলী আপনার বিরুদ্ধে কাজ শুরু না হওয়ার পরও বিল দেয়ার কথা জানিয়েছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কখনোই এভাবে বিল দেইনি। তবে কাজের নিম্নমানের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান শওকতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো অভিযোগও আসেনি। যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ জার্নাল/একে/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত