ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

কোনদিকে যাচ্ছে শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন!

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ২০:৩৫

কোনদিকে যাচ্ছে শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন!

উপাচার্য ফরিদউদ্দিন আহমেদকে অপসারণের দাবিতে ১০ দিন ধরে উত্তাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। একদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে ঘরবন্দি উপাচার্য। অন্যদিকে টানা অনশনে হাসপাতালে ভর্তি অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী।

দফায় দফায় সরকারের সঙ্গে আলোচনার কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এখন পর্যন্ত হয়নি কোনো সমাধান। পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়েও সংশয় অনেকের। তবে তা যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে সরকার।

তবে সরকারের একটি মহলের ধারণা আন্দোলনের ঘটনার পেছনে কাজ করছে তৃতীয় শক্তি। তবে এই তৃতীয় শক্তি কে বা কারা তা এখনো অধরাই। একটি পক্ষ বলছে বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করে একটি গোষ্ঠী ফায়দা নিতে চায়। অন্য একটি পক্ষ বলছে, উপাচার্যকে অপসারণ করাই একটি গোষ্ঠীর প্রধান টার্গেট।

এদিকে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলনে অর্থ সহায়তা দেয়ার অভিযোগে সাবেক পাঁচ জনকে আটক করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। এদের সবাই শাহজালালের সাবেক শিক্ষার্থী।

সংস্থাটি জানায়, তাদের ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) জালালাবাদ থানায় হস্তান্তর করা হয়।

এর আগে, সোমবার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর উত্তরা ও ফার্মগেট এলাকা থেকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক তিন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছিলো তাদের পরিবার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পরিস্থিতি যেমন হয়েছে তাতে শাবি উপাচার্য ফরিদউদ্দিন আহমেদকে অপসারণ কিংবা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হতে পারে।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১৩ বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন ভিসি শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মধ্যে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরে একজন মাত্র ভিসিকে অপসারণ করেছে সরকার। এ বিষয়ে শাবি শিক্ষক সমিতি জানায়, উপাচার্যের বিষয়টি সরকারের এখতিয়ারভুক্ত। তবে তিনি যদি পদত্যাগ করেন তা হবে দেশের ষষ্ঠ নম্বর উপাচার্য।

এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে তাদের যে ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে সেখানে দাবি মানার কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘অনশনকারীরা ক্লান্ত-বিধ্বস্ত-অসুস্থ। তাদের অবস্থা মৃত্যুপথযাত্রীর মতো। এরপরও উপাচার্যের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা একচুলও সরবেন না।

এর আগে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহাজালালের ভিসিকে পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন দানা বাঁধছে। একাধিক শিক্ষক বলেন, আন্দোলনের সূত্রপাত নিম্নমানের খাবার ও প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে। সেখান থেকে হঠাৎ করে ভিসিকে অবরুদ্ধ করা যেমন শিক্ষার্থীদের উচিৎ হয়নি। ঠিক তেমনি ফরিদউদ্দিন আহমেদেরও উচিত হয়নি পুলিশ দিয়ে তাদেরকে আক্রমণ করা। তবে অবস্থা বিবেচনায় সরকারের উচিত একটি উত্তম সমাধান করা।

আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার সবকটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর সোমবার দুপুরের পর থেকে কাজ করছে না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে যে মেডিকেল টিম উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছিলেন, তারাও সেবা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ এবং শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি সরকারকে দ্রুত মেনে নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশের সামনে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’। গত সোমবার দুপুরে একাধিক কর্মসূচি পালন করেন।

অন্যদিকে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) বেলা ১১ টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকবৃন্দের উদ্যোগে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রফেসর আনু মোহাম্মদ। অন্যায় অবিচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে এ ডাক দিয়েছেন তিনি।

আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষা উপমমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, অতি উৎসাহী হয়ে অযৌক্তিক দাবি যদি উপস্থাপিত হয় এবং কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ব্যতীত, এমন অযৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেয়া রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, মন্ত্রী মহোদয়ের পর্যায় থেকে আলোচনা করা হচ্ছে। সেই আলোচনার পর আমরা যেটা বুঝতে পারছি এখানে ইগো সমস্যা বেশি, বাস্তব সমস্যার চেয়ে।

সর্বশেষ সিলেট প্রতিনিধি জানান, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরুর সপ্তম দিনে নমনীয় অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে। একদল শিক্ষার্থী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে সমবেত হয়ে অনশনকারীদের অনশন ভাঙার অনুরোধ জানান। পরে অনশন ভাঙার পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার শপথ পাঠ করেন।

শপথ পাঠের সময় শাবি শিক্ষার্থী মোহাইমনুল বাশার রাজ বলেন, আমরা আন্দোলনকারীদের কষ্ট আর নিতে পারছি না। তারা মৃত্যুমুখে পতিত। এভাবে চলতে পারে না। তাদের জীবন আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান। তাই আমরা তাদেরকে অনশন ভাঙার অনুরোধ করছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/একে/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত