ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

সৌদি আরবে বসে অফিস করছেন শিক্ষা কর্মকর্তা

  আসিফ কাজল

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২২, ১৯:২৬  
আপডেট :
 ২১ জুন ২০২২, ১৯:৩৩

সৌদি আরবে বসে অফিস করছেন শিক্ষা কর্মকর্তা

প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে কেরানীগঞ্জের একটি স্কুলে চাকরি পেয়েছেন। এরপর দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার একটি স্কুলে চাকরি নিয়েছেন। কিন্তু বেতন পাচ্ছেন না তিনমাস। বেতন-বোনাসের সফটওয়্যারে সমস্যা থাকায় অনলাইনে সম্পূর্ণ বেতনও দেখাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসে দিনের পর দিন ঘুরছেন এক শিক্ষক।

বাংলাদেশ জার্নালকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) শিক্ষকদের ২৫ ভাগ বোনাস দেয় সরকার। কিন্তু সফটওয়্যারটি শতভাগ বোনাস দেখাচ্ছে। সমস্যা সমাধানে একাধিক দিন কেরানীগঞ্জ থেকে মিরপুরের শিক্ষা অফিসে আসছি। কিন্তু সমাধান তো দূরে থাক, কোনো কর্মকর্তাকেই পাওয়া যাচ্ছে না।

ঢাকার মিরপুরের ১ নম্বরে অবস্থিত মাউশির আঞ্চলিক অফিস। এখানে রয়েছে উপ-পরিচালকের অফিস ও জেলা শিক্ষা অফিস। মিরপুরের অফিসটির কর্মচারীরা জানান, ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মজিদ হজ পালনের উদ্দেশ্যে বর্তমানে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। ওখান থেকেই অনলাইনে অফিস করছেন তিনি।

বিষয়টি জানিয়ে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসের সহকারী প্রোগ্রামার নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, এমপিও, বেতন, এরিয়ার, বিএড স্কেল সব কিছুই অনলাইনে সম্পন্ন করতে হয়। স্যার বিদেশ বসে সেটিই করছেন। গতকালও অনেক ফাইলের কাজ সম্পন্ন করেছেন।

কল্যাণপুর গার্লস স্কুলের শারীরিক শিক্ষিকা এসেছেন ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসে। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমি শিক্ষাকতা পেশায় যোগদান করেছি ১৯৯৬ সালে। তখনকার কাগজপত্র ঝাপসা, সেকারণে বার বার রিজেক্ট করছে ডিইও অফিস। রিজেক্টের কারণ হিসেবে তারা বলছে অপর্যাপ্ত কাগজ। কিন্তু এর আগে আমি প্রথম উচ্চতর গ্রেড পেয়েছি। তখন যে কাগজ ছিল এখনো সেই কাগজ জমা দিয়েছি। এরপরও দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেড পাচ্ছি না। এই সমস্যার কথা কাকে বলবো? কেউ যদি বিদেশ বসে অফিস করেন তাহলে আমাদের আর কিছুই করার থাকে না। আমি কিছুদিন পর অবসরে যাবো। এই সময়ের মধ্যে কাজ না হলে অবসরে আমি কম অর্থ পাবো। এসময় শিক্ষায় মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের সেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

তবে শিক্ষা আইন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো কর্মকর্তাই ছুটিতে থাকা অবস্থায় অফিসিয়াল কাজ করতে পারেন না। সেটা দেশে হোক বা দেশের বাইরে। অনলাইনে বা অফলাইনে।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মজিদের সঙ্গে হোয়্যাটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সৌদি থেকে অনলাইনে এমপিওর কাজ করছি। বাকি সব কাজ অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা করছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাউশির আঞ্চলিক অফিসটি ঢিলেঢালাভাবে চলছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডটিও মাটিতে পড়ে আছে। রোববার ও সোমবার অনেক কক্ষে বিকালে তালা মারা দেখা যায়। আবার অনেক কক্ষেই বৈদুতিক পাখা চললেও কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে দেখা যায়নি।

কর্মচারীরা জানান, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৌদি আরব যাওয়ার কারণে তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহরিন খান রুপাকে চার্জ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি প্রতিদিন অফিস করেন না। অফিসে এলেও আসেন বিকাল ৪টার পর। তাদের দাবি নতুন দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হলেও আইডি পাসওয়ার্ড দেয়া হয়নি। যেকারণে কোনো সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

এছাড়াও জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জেবুন্নেসা খানম মাসখানিক আগে অবসরে যাওয়ায় জেলা শিক্ষা অফিসটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এর ফলে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে সেবাপ্রার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার বিকাল ৩টা পর্যন্ত অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অফিসে আসেননি। সোমবার সারাদিনেও তিনি অফিসে আসেননি।

এ বিষয়ে জানতে শাহরিন খান রুপাকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ বলেন, আমি জানতাম না যে তিনি অফিস করেন না। এ বিষয়ে আমি খোঁজ নেবো।

উচ্চ আদালতের আইনজীবী সিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, কেউ যদি ছুটিতে থাকে, তবে কোনোভাবেই অফিসিয়াল কাজ করা যায় না। সেটা অনলাইন অফলাইন যেভাবেই হোক।

এ ব্যাপারে জানতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক নেহাল আহমেদকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

মাউশি পরিচালক বেলাল হোসাইন এ বিষয়ে বলেন, বিদেশে থেকে এমন কাজ করা যায় না। তার দায়িত্বে যিনি এসেছেন তাকে কাজ বুঝিয়ে দেয়ার কথা। যিনি চার্জে আছেন তিনি নিয়মিত অফিস না করলে আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/একে/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত