ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

রাত পোহালেই জাবির উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন

  জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২২, ২৩:৫৬

রাত পোহালেই জাবির উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন

রাত পোহালেই ভোটের দিন। প্রায় এক দশক পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য প্যানেলের নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের তাই উৎসাহ উদ্দীপনার শেষ নেই।

এখন পর্যন্ত নয়জন প্রার্থীর তিনটি প্যানেল থেকে এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্যানেল তিনটির নেতৃত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ তিন অধ্যাপক মো. নূরুল আলম, আমির হোসেন এবং আব্দুল্লাহ হেল কাফী। উল্লেখ্য, তিনটি প্যানেলের নয়জন প্রার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক রাজনীতির সাথে জড়িত।

এক নজরে প্যানেল ও প্রার্থীরা

মো. নূরুল আলম-অজিত কুমার মজুমদার-লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ প্যানেল

অধ্যাপক মো. নূরুল আলম, অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ একই প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’-এর একাংশের এই প্যানেলের নেতৃত্বে আছেন বর্তমানে সাময়িক উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মো. নূরুল আলম।

অধ্যাপক মো. নূরুল আলম: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক (১৯৭৬) ও স্নাতকোত্তর (১৯৭৭) পাশের পর ১৯৮২ সালে নিজ বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। বর্তমানে সাময়িক উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা এই অধ্যাপক উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব), উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), বিভাগের সভাপতি ও অনুষদের ডিনের দায়িত্বের বাইরে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, হল প্রাধ্যক্ষ হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিনেট, সিন্ডিকেট ও অর্থ কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ। ৬৬ বছর বয়সী এই অধ্যাপক ছিলেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও তিন মেয়াদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি। উভয় সংগঠনে সহ-সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন বেশ কিছুটা সময়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশের পর ১৯৮৩ সালে নিজ বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। বিভাগের সভাপতি ও অনুষদের ডিনের দায়িত্বের বাইরে ছিলেন সিন্ডিকেট, সিনেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী পর্ষদের সদস্য। দায়িত্ব পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যায়ের গ্রন্থাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও আইকিউএসির (ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেল) পরিচালক হিসেবে। নির্বাচিত হয়ে ৬ মেয়াদে পালন করেছেন জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি।

অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে স্নাতক (১৯৮৮) ও স্নাতকোত্তর (১৯৮৯) পাশের পর নিজ বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ। হাউজ টিউটর ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। একাধিক কার্যকালে দায়িত্ব পালন করেছেন নির্বাচিত সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে। তিনি জাবি শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সিন্ডিকেট সদস্য।

আমির হোসেন-সুফি মোস্তাফিজুর রহমান-পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা প্যানেল

বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের আরেক সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসা একটি প্যানেলের নেতৃত্বে আছেন মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আমির হোসেন। অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ও অধ্যাপক পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা এই প্যানেল থেকেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

অধ্যাপক আমির হোসেন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক (১৯৮০) ও স্নাতকোত্তর (১৯৮২) পাশের পর ১৯৮২ সালেই নিজ বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন অধ্যাপক মো. আমির হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারি একমাত্র এই অধ্যাপক উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), বিভাগের সভাপতি ও অনুষদের নির্বাচিত ডিনের দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই মেয়াদে জাবি শিক্ষক সমিতির সম্পাদকের দায়িত্ব থাকা এই অধ্যাপক দায়িত্ব পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী পর্ষদেও। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’-এর বর্তমান সভাপতি।

অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক (১৯৮৬) ও প্রত্নতত্ব বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর (১৯৮৭) পাশের পর ১৯৯২ সালে প্রত্নতত্ব বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর ২০০৪ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ২০১৭ সালে জাবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া এই শিক্ষক সিনেটের নির্বাচিত শিক্ষক সদস্যও। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নানা সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ৫৮ বছর বয়সী এই অধ্যাপক। ছিলেন জাবির প্রত্নতত্ব বিভাগ ও উচ্চতর শিক্ষা কমিটির সভাপতি। আবাসিক হলের সহকারি হাউজ টিউটর ও ওয়ার্ডেনের দায়িত্বও পালন করেছেন বিভিন্ন সময়। তিনি আন্তর্জাতিক জাদুঘর পরিষদ (আইকম) বাংলাদেশ শাখার বর্তমান সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

অধ্যাপক পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা: সাবেক উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পরিচিত মুখ অধ্যাপক পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা। উল্লেখ্য, জাবির বাংলা বিভাগের এই অধ্যাপক এর আগে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে ছিলেন বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। বিগত সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এবং জাহানারা ইমাম হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।

আবদুল্লাহ হেল কাফী-মো. মোতাহার হোসেন-তপন কুমার সাহা প্যানেল

বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’-এর অন্য একটি অংশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আসা এই প্যানেলের নেতৃত্বে আছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফী। অধ্যাপক মোতাহার হোসেন এবং অধ্যাপক তপন কুমার সাহা এই প্যানেল থেকে নির্বাচন লড়বেন।

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফী: অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগে অধ্যাপনার পাশাপাশি বর্তমানে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করছেন।

অধ্যাপক মোতাহার হোসেন: অধ্যাপক মোতাহার হোসেন ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)-এর শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সম্পাদক। বর্তমানে তিনি বেগম সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্টের দায়িত্বে আছেন। এর আগে তিনি প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি, আইবিএ-এর পরিচালকসহ বিভিন্ন হলে ওয়ার্ডেন ও হাউজ টিউটরের দায়িত্ব পালন করেছেন।

অধ্যাপক তপন কুমার সাহা: অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রভোস্ট ও জাবি শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি নির্বাচিত সিনেট সদস্য।

আট বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভিসি প্যানেল নির্বাচন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বমূহুর্তের এই সময়টাতে ভোটারদের সাথে পুরাতন সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। অনেকের আবার মনযোগ নতুন সম্পর্ক তৈরিতে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শেষ মূহুর্তে সরাসরি সাক্ষাৎ বা মুঠোফোনে ভোটের আর্জি জানাতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩ এর নির্দেশনা বলছে নির্বাচিত ও মনোনীত সিনেট সদস্যদের ভোটে এগিয়ে থাকা তিনজন প্রার্থীকে নিয়ে ঘোষণা করা হবে বিজয়ী প্যানেল। নির্বাচিতদের নাম পাঠানো হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির কাছে। সেখান থেকে যেকোনো একজনকে পরবর্তী চার বছরের মেয়াদকালে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতি।

বাংলাদেশ জার্নাল/জিকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত