ঢাকা, রোববার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

জাতীয়করণ নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৬:১০  
আপডেট :
 ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৮:১৩

জাতীয়করণ নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহস্রাধিক কলেজ অধ্যক্ষের অংশগ্রহণে ‘শিক্ষা সমাবেশে’ প্রধানমন্ত্রী। ছবি : পিআইডি

সরকারের শেষ বছর বলে সরকারকে চাপ দিয়ে কিছু আদায় করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ক্ষমতার পরোয়া তিনি করেন না। নানা দাবিতে একের পর এক শিক্ষক সংগঠনের আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে রবিবার রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত শিক্ষা সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কেন্দ্রসহ মোট ১১টি ভবন ও প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এছাড়া দেশের সাতটি সেরা কলেজকে সম্মাননাও দেন প্রধানমন্ত্রী।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোথায় কোথায় সরকারি করতে হবে বা করতে হবে না, সেটাও তো একটা নীতিমালার ভিত্তিতে হবে। যখন তখন যে কেউ দাবি করলে সেটা পূরণ করা সম্ভব নয়। সেটা তো সকলকে অনুধাবন করতে হবে, বুঝতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর এটা শিক্ষকদের জানা উচিত যে, আমি ৯৬ সালে এসে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কারও কিন্তু দাবি করতে হয়নি, আন্দোলন করতে হয়নি, আমরা তার আগেই করে দিয়েছি। কারণ আমরা একে গুরুত্ব দেই, দেশকে ‍উন্নত করতে চাই আমরা। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এইটুকু ভরসা রাখতে হবে যে, আওয়ামী লীগ যতক্ষণ ক্ষমতায় আছে, কাউকে বঞ্চিত করে নাই, বঞ্চিত করবে না। তবে এটুকু আমি বলব, চাপ দিয়ে কিন্তু কেউ কিছু আদায় করা যাবে না।’

গত ডিসেম্বর থেকে নানা দাবি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন শিক্ষকরা। প্রথমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেছেন প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের ‘বেতন বৈষম্য’ কমাতে বেতন গ্রেড উন্নীত করার দাবি নিয়ে।

সেই আন্দোলন শেষ হতে না হতেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অনশন করেছেন এমপিওভুক্তির দাবিতে।

এই আন্দোলন শেষ হতে না হতেই আন্দোলনে নামেন এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা। তাদের অনশন হয় প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে। এরপর আবার অনশন শুরু করেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সংগঠন। তাদের দাবি, তাদের প্রতিষ্ঠান সরকারি করতে হবে। আরও আন্দোলনে আছেনে জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক সরকারের শেষ বছর এভাবে শিক্ষক আন্দোলন হয়েছে বাংলাদেশে। শিক্ষক নেতারা জানান, সরকারের শেষ বছর দাবি আদায় সহজ হয় বলে তারা এভাবে আন্দোলনে নামেন।

এবারও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দাবি পূরণে আশ্বাস পেয়েই অনশন কর্মসূচি ভেঙে বাড়ি ফিরেছেন নন এমপিও শিক্ষক, এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর আশ্বাসে বাড়ি ফিরেছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা। তবে জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনে থাকা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আশ্বাস মেলেনি।

শিক্ষকদের এসব আন্দোলন নিয়ে এই প্রথম কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। জানিয়ে দিলেন, নীতিমালা ছাড়া কোনো দাবি পূরণে ব্যবস্থা নেয়ার ইচ্ছা তার নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে সরকারের এটা শেষ বছর, কাজেই অযৌক্তিক দাবি করলেই আমরা সব শুনে নেব, আমি কিন্তু ক্ষমতার পরোয়া করি না, এটুকু বলে দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকি, না থাকি আমার কিছু যায় আসে না। আমি করি, যেহেতু এই দেশটা আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছে, তিনি এই দেশটাকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন... সেই চিন্তা থেকেই আমার রাজনীতি, সেই চিন্তা থেকেই আমার রাষ্ট্র পরিচালনা।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে নিজের আখের গোছানো, নিজের ভাগ্য গড়ে তোলা বা নিজের ছেলেমেয়ের ভাগ্য গড়ে তোলা বা নিজের সম্পদ গড়ে তোলা, সেটা কিন্তু আমাদের নীতি না। আমরা করি না।’

গত নয় বছরে বাংলাদেশের বাজেট প্রায় সাতগুণ হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকলের বেতন ভাতা, অনুদান বাড়িয়েছি। এমনকি সরকারি বেসরকারি সব জায়গায় সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আমরা কখনও কিন্তু কাউকে বঞ্চিত করছি না।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘তবে একটা ঠিক, কিছু দিলেই যদি আরও দাও আরও দাও করলে আমরা কিন্তু দিতে অপারগ হবো। কারণ, আমাদের বাজেট নিয়ে পরিকল্পিতভাবে চলতে হয়। সেটা মাথায় রাখতে হবে কতটুকু আমরা করতে পারি।’

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যারা শিক্ষক, আপনারা মহৎ পেশায় নিয়োজিত আছেন, আপনাদের হাতেই রয়েছে জাতির ভবিষ্যত।’

শেখ হাসিনা ‘একজন শিক্ষকের কাছ থেকে আমি এটুকুই চাই যে আপনারা কতটুকু দিতে পারলেন, কতটুকু করতে পারলেন, মানুষ গড়ার কারিগর আপনারা, কী ধরনের মানুষ আনব তৈরি করতে পারলেন বা আপনাদের কাছ থেকে যারা শিক্ষা নিয়েছে তারা এই দেশকে কতটুকু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে, দেশকে কীভাবে আরও উন্নত করতে পারবে-সেটাই হচ্ছে বড় কথা।’

/এসকে/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত