ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ব্যর্থ কমিটিকে দিয়ে পুনরায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার তদন্ত!

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৪৩  
আপডেট :
 ২২ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৫৭

ব্যর্থ কমিটিকে দিয়ে পুনরায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার তদন্ত!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ নতুন নয়। গত বছরও এ ইউনিটে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। তখন এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু সে কমিটি এক বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারে নি। সেই ব্যর্থ কমিটিকে এ বছর ঘ ইউনিটে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় আবারও তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

সোমবার তাদের এ দায়িত্ব দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

প্রশ্নফাঁস নিয়ে অধিকতর তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি বাংলাদেশ জার্নালকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ( শিক্ষা ) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক, সিন্ডিকেট সদস্য বাহলুল মজনুন চুন্নু, জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক অসীম কুমার সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী।

জানা যায়, চলতি বছর ঘ ইউনিটের (১২ অক্টোবর) পরীক্ষার পূর্বেই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনায় প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি একজন ভর্তিচ্ছুর মোবাইলে সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে প্রশ্ন পাওয়ার প্রমাণ পায়। এই প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৬ অক্টোবর ঘ ইউনিটের ফল প্রকাশ করেন।

এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আইন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের একজন ছাত্র অনশন শুরু করে। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়। ছাত্রলীগ যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবিসহ চার দফা দাবি জানায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী ওই সময় ছাত্রলীগের দাবির বিষয়ে একমত পোষণ করেন। ভিসি দেশে আসলে তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন বলে জানান।

কিন্তু রোববার ভিসি দেশে এসে সোমবার অধিকতর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কি করা হয়েছে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘একটু অপেক্ষা কর। দেখ আমরা কতটা আগাতে পারি।’

এর আগে গত বছর ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ঘ ইউনিটের প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় এই পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিকেই তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত এক বছরেও কমিটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ভিসি কার্যালয়ে গিয়ে ব্যর্থ কমিটিকে কেন আবার অধিকতর তদন্ত কমিটিতে রাখা হলো জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘গত বছরের কমিটিকেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদেরকে দুই সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে। দেখা যাক। সব বিষয় তো আর ভিসি দেখেন না।’

এ বিষয়ে আরো কিছু প্রশ্ন করা হলেও তিনি তার জবাব দেন নি।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, যারা এক বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারে নি, তাদের আবার তদন্ত কমিটির সদস্য কিভাবে করা হয় তা বোধগম্য নয়। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়েরই দুর্নাম হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান থাকবে, কোনো প্রশ্নফাঁসকারীকে যেন ছাড় দেয়া না হয়। সেজন্য দরকার একটি সুষ্ঠু তদন্ত এবং আস্থাশীল তদন্ত কমিটি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘যারা গত এক বছরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারে নি তাদের যদি আবার তদন্তের ভার দেয়া হয়, তাহলে আমি মনে করি শষ্যের মধ্যে ভূত আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের লোক এর সঙ্গে জড়িত। কারণ প্রশাসনের লোক জড়িত না থাকলে প্রশ্নফাঁস সম্ভব হয় না। যারা এক বছরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তাদের আবার তদন্তের দায়িত্ব দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হবে।’

তিনি বলেন, ‘ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল আমাদের প্রধান দাবি৷ একই সঙ্গে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বের করে আনতে আস্থাবান শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সমন্বয়ে নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। কারণ এক বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে না পারায় এ তদন্ত কমিটির উপর ছাত্র সমাজের আস্থা নেই।’

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত