ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঢাবিতে ২ পথচারীকে আটকে মুক্তিপণ দাবি ছাত্রলীগের

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:১৪

ঢাবিতে ২ পথচারীকে আটকে মুক্তিপণ দাবি ছাত্রলীগের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুই পথচারীকে আটকের পর পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে তাদেরকে তুলে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় মধ্যরাতে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে আটক করে থানায় দেয়া হলেও পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে।

ছাত্রলীগের যে নেতাককর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন- ঢাবির শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামান। তিনি পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যজন একই হলের ছাত্রলীগ কর্মী রাজিউর রহমান। তিনি সংগীত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি করলেও সংগঠনের কোনো পর্যায়ের কমিটিতেই রাজিউরের কোনো পদ নেই। ছাত্রলীগের ৭-৮ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও বাকিদের পরিচয় জানা যায় নি।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা হলেন- ঢাকা মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি বিভাগের শিক্ষানবিশ টেকনিশিয়ান সাইফুদ্দিন সিফাত এবং ‘স্বপ্ন’ সুপারশপের বিপণনকর্মী রিয়াজুল ইসলাম। তাদের বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনায়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা শহীদ মিনার এলাকায় কথা বলছিলেন। হঠাৎ সাত থেকে আটজন লোক এসে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে তাদের ঘিরে ধরেন। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করা হয়। তারপর একজনের গ্রামের বাড়িতে ফোন দিয়ে তার বাবার কাছে এক লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

এ ঘটনা জানাজানি হলে মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের হস্তক্ষেপে পথচারী দুজনকে উদ্ধার করে টিএসসিতে আনা হয়। এদের মধ্যে সাইফুদ্দিন সিফাতকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে রিয়াজুল ইসলাম এখনো থানায় আছেন বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ কর্মী আখতারুজ্জামান ও রাজিউর রহমানকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেন তারা।

ভূক্তভোগী সাইফুদ্দিন সিফাতের বাবা মো. নেসার উদ্দিন বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে সিফাতের নম্বর থেকে একজন ফোন করে বলে আপনার ছেলে ছাত্রদল করে। ১ লাখ টাকা পাঠান। তা না হলে তাদেরকে মারধর করে থানায় দেওয়া হবে। তাদের নামে মামলা হবে। তারা দশ মিনিটের মধ্যে এক লাখ টাকা চায়। আমি বললাম, টাকা কোথায় পাব? ঠিক আছে দেখি। এর মধ্যে তাঁরা আমার ছেলেকে বোধ হয় মারধর করছিল, ফোনে আমি আমার ছেলের কান্নার শব্দ শুনেছি। একসময় তারা ফোনটা আমার ছেলের হাতে দেয়। ছেলে আমাকে বলে, আব্বা, তোমার কাছে যা টাকা আছে পাঠাও, তা না হলে আমাকে এরা মারবে। কী করব, বুঝতে পারছিলাম না। পরে ঢাকায় থাকা আমার এক ভাতিজাকে ঘটনাটা জানাই।’

তিনি আরো জানান, এসময় ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কথা বলার ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে সে বলে, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ’।

ঘটনার বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা আইনবিরোধী কাজ করেছে। যখনই আমরা ঘটনাটি জেনেছি, তখনই ব্যবস্থা নিয়েছি। কেউ আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করলে সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম রয়েছে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তাদের মাধ্যমেই কেবল তাকে আইনের আওতায় নেওয়া যেতে পারে। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজে কেউ জড়িত থাকলে সে যে সংগঠনেরই হোক, তার বিরুদ্ধে আমরা চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেবো।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমি অবহিত আছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্রকে আটক করা হয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য ছিলো যে, একজনকে আটকে রেখে তার বাবার কাছে টাকা চাচ্ছিল আটককৃত দুজন। তারা এখনো থানায় আছে। আর ভুক্তভোগী দুজনের মধ্যে একজন এখনও থানায় আছে। তবে এখন পর্যন্ত দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়নি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো। হয়তো তাদেরকে (আখতারুজ্জামান ও রাজিউর রহমান) প্রক্টরের কাছে তুলে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত