ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

পদোন্নতির মাধ্যমে শতভাগ প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৩৮  
আপডেট :
 ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৪৮

পদোন্নতির মাধ্যমে শতভাগ প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবি

সরকারি প্রাইমারি স্কুলে প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগের অবসান চান সহকারী শিক্ষকেরা। তাদের দাবি প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ নিয়োগ পদোন্নতির মাধ্যমে করা হোক।

প্রধান শিক্ষকের ৬৫ ভাগ শূন্যপদ পূরণ করা হয় সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে। বাকি ৩৫ ভাগ শূন্যপদ পূরণ করা হয় সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে।

প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ নিয়ে সহকারী শিক্ষক, পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে অনেক দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। অনেকে ২৫ থেকে ৩০ বছর চাকরি করেও প্রধান শিক্ষক হতে পারেন না। আবার অনেকে এমএ পাস করে সরাসরি প্রধান শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন।

ছাত্র ও সন্তানতুল্য এসব প্রধান শিক্ষকদের অধীনে চাকরি করতে হচ্ছে প্রবীণ অভিজ্ঞ শিক্ষকদের। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ। তা ছাড়া অনেক সহকারী শিক্ষক দীর্ঘ দিন চাকরি করার পর যে বেতন পান দেখা যায় সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা চাকরির শুরুতেই তাদের সমান বা বেশি বেতন পান।

অনেক সহকারী শিক্ষক সারা জীবন সহকারী শিক্ষক হিসেবেই এক পদে চাকরি করে অবসরে চলে যান। তাদের আর পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই। প্রধান শিক্ষকের শতভাগ পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ হলে আরো ৩৫ ভাগ সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পাবেন।

বর্তমানে সরাসরি যাদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাদের ক্ষেত্রে তিন বছর স্কুলে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসহ বিএ পাস অথবা শুধু এমএ পাস করলেই হয়। তাদের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন কোর্স (সিইনএড) থাকার কোনো শর্ত নেই। কিন্তু সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতে হলে এক বছরব্যাপী এ কোর্স করা বাধ্যতামূলক।

আগে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে যাদের বিএড কোর্সের ডিগ্রি থাকত তারা পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হতে পারতেন কিন্তু ২০০৩ সাল থেকে এ নিয়ম বাতিল করা হয়। পিটিআই থেকে সিইনএড কোর্স না করলে বিএড বা এমএড কোর্স করা শিক্ষকেরা আর প্রধান শিক্ষক হতে পারবে না মর্মে নতুন নিয়ম চালু করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।

এ নিয়ম চালুর ফলে ২০ থেকে ২৫ বছর চাকরিরত অনেক শিক্ষক যাদের অনেকের আবার বিএড, এমএড কোর্স করা, তারা প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। এত বছর চাকরির পর নতুন করে আবার দীর্ঘমেয়াদি কোর্স করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন অনেক শিক্ষক। ফলে অনেক অভিজ্ঞ সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষক না হয়েই অবসরে যান।

অনেক শিক্ষক আফসোস করে বলেন, সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ তো হচ্ছেই না, বরং দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে সারা দেশে পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক নিয়োগই বন্ধ হয়ে গেছে। ২০০৯ সালে একটি মামলার কারণে সারা দেশে পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সারা দেশে হাজার হাজার প্রধান শিক্ষকের পদ বছরের পর বছর শূন্য পড়ে থাকে।

২০১৪ সালে এ মামলার সুরাহা হলেও একই বছর প্রধান শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করায় প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পিএসসির অধীনে চলে যায়। ফলে আবার বন্ধ হয়ে যায় পদোন্নতির মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ। দীর্ঘ এ সময়ে অনেক সহকারী শিক্ষক অবসরে চলে যান যারা প্রধান শিক্ষক হতে পারতেন।

২০১৭ সালের ২৩ মে থেকে প্রধান শিক্ষক শূন্যপদে চলতি দায়িত্ব দেয়া হয় সহকারী শিক্ষকদের। এভাবে প্রায় ১০ বছর পর সহকারী শিক্ষকেরা প্রধান শিক্ষক পদে আসীন হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন আবার।

প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বিষয়ে শিক্ষকদের সাথে আলাপকালে অনেক সহকারী শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০-২৫ বছর শিক্ষকতা করেও অনেক সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পান না। আবার শিক্ষকতার কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই একজন সরাসরি পরীক্ষা দিয়ে প্রধান শিক্ষক হবেন এটি বড় ধরনের বৈষম্য। অনেক সময় বিএ পাস করা একজন লোক অখ্যাত কোনো স্কুলে হয়তো তিন বছরের শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট জমা দিয়ে সরাসরি পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পেয়ে যান প্রধান শিক্ষক পদে। তারা এসে খবরদারি করেন অভিজ্ঞ মাতৃতুল্য বা পিতৃতুল্য শিক্ষকদের ওপর। এটি মানা যায় না।

অনেক শিক্ষক বলেন, পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ শূন্যপদ পূরণ করা হলেই সব সহকারী শিক্ষক যে প্রধান শিক্ষক হতে পারবেন, তা নয়। কিন্তু এতে সুবিধা যেটা হবে তা হলো বৈষম্য, ক্ষোভ আর দ্বন্দ্ব দূর হবে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ প্রতিষ্ঠা হবে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার জন্যই মঙ্গল হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত