ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৫৫

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ

শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ও মানসিক আঘাত প্রতিরোধে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং-সেবা বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে একটি জাতীয় নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে এ-সংক্রান্ত করণীয় সকল নির্দেশনা দেওয়া থাকবে এবং তা অনুসরণ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে নিয়মিত কাউন্সেলিং কার্যক্রমের আয়োজন করা হবে।

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর রাজধানীর শান্তিনগরের বাসা থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের অভিযোগ, পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন পাওয়ার পর অরিত্রী নকল করছে এ অভিযোগে বাবা-মাকে ডেকে ‘অপমান’ ও মেয়ের ছাড়পত্র নিয়ে যেতে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরে লজ্জা ও ক্ষোভে বাসায় ফিরে আত্মহত্যা করে অরিত্রী। এ ঘটনাকে ‘হৃদয়বিদারক ও বাজে দৃষ্টান্ত’ বলে অভিহিত করে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। একই সঙ্গে আত্মহত্যা ও বিভিন্ন ঝুঁকি এড়িয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ও নিরাপদ রাখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এরপর টনক নড়ে ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষের। পরে নিজ উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তায় বেইলি রোডের মূল ক্যাম্পাসের মিলনায়তনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠানটির সকল শাখাতেও কাউন্সেলিং করানো হয়। প্রতি মাসে একবার করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করানো হবে বলেও জানান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাউন্সেলিং-সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য জাতীয় নীতি প্রণয়নে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে আইনজীবী, মনোবিজ্ঞানী, চিকিৎসক, জাতীয় পর্যায়ের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সদস্য করা হবে। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব সালমা জাহান বলেন, আদালতের নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও বিভাগে চিঠি দিয়ে প্রতিনিধি চেয়েছি। প্রতিনিধি নির্বাচন করা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের সমন্বয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, আমি এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। প্রতিটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ব্যবস্থা থাকে। তবে কাউন্সেলর নিয়োগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সেই ব্যক্তি নিজে যোগ্য কি না তা যাচাই করতে হবে। মনের ব্যাপারগুলো সেনসিটিভ, সুতরাং যারা কাউন্সেলিং করাবেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকতে হবে। শুধু ডিগ্রি নয়, ভালো কাজের মানসিকতাও থাকতে হবে। তারা যেন ভালোর চেয়ে আরও ক্ষতি না করেন।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, একটা মানুষ যখন মানসিক চাপের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায় তখন আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এই সিদ্ধান্তটা আসলে ওই সাময়িক চাপের কারণে, কোনো মানুষই অস্বাভাবিক মৃত্যু চায় না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানসিক চাপ কমানোর জন্য কাউন্সেলিং কাজে লাগতে পারে বলে মনে করি। তবে পারিপার্শ্বিক, পারিবারিক, সামাজিক কারণে ছেলেমেয়েরা যেভাবে হতাশায় চলে যায় তা আসলে দূর করা খুব কঠিন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা হয় আত্মহত্যা করছে না হলে পরিবার-সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা বাস করছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটনাগুলো যেন না ঘটে সেক্ষেত্রে এই উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত