ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

ভুল প্রশ্নে এসএসসি পরীক্ষা, উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২০:৫২

ভুল প্রশ্নে এসএসসি পরীক্ষা, উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা

চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নপত্রের কারণে ফল নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। তবে শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

প্রশ্নপত্রের ভুলের বিষয়সহ ব্যবস্থাপনার নানা ত্রুটি এবারের এসএসসি পরীক্ষার শুরুর দিন থেকেই ঘটে আসছে। এ পর্যন্ত অর্ধেকের বেশি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষার তত্ত্বীয় বিষয় শেষ হচ্ছে। এর পরই শুরু হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী একাধিক পরীক্ষার্থীর অভিযোগ, ‘শিক্ষকদের ভুলের জন্য আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। পরীক্ষায় আমাদের ভুল প্রশ্ন দেয়া হয়েছে, তা দিয়ে আমরা পরীক্ষা দিয়েছি। পরে তা আবার পরিবর্তন করে সঠিকটা দেয়া হয়। এতে আমাদের বাড়তি চাপ তৈরি হয়।’

তারা বলেন, ‌‌‌‌‘ভুল আর সঠিক প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে এখন অনেক টেনশনে আছি। অনেকে মনের ভয়ে বাসায় গিয়ে উত্তর মিলিয়ে দেখেনি।’ পরীক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি মানসিক চাপের কারণে অনেকে যে প্রস্তুতি নিয়েছিল সে অনুযায়ী লিখতে পারেনি বলেও অভিযোগ অনেকের। তাই ভুক্তভোগীরা তাদের ফল নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছে।‌

তবে শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি পরীক্ষার ঘটনা তদন্ত করে এর দায় দায়িত্ব নিরূপণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর অভিভাবক-পরীক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন না হতে পরামর্শ দিয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান।

এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অনিয়মিতদের প্রশ্ন নিয়মিতদের হাতে দেয়া, এক বিষয়ের প্রশ্নে অন্য বিষয়ের প্রশ্ন যুক্ত হওয়া, কেন্দ্রে কম প্রশ্ন পাঠানোর কারণে ফটোকপিতে পরীক্ষা নেয়া, ট্রেজারিতে প্রশ্ন রেখে পাশের কেন্দ্র থেকে এনে পরীক্ষা নেয়া, বিলম্বে পরীক্ষা শুরুসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। অব্যবস্থাপনা ও ত্রুটির বিষয়টি এবারের পরীক্ষার পিছু ছাড়ছেই না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নপত্রের ভুলের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের প্রশ্নপত্রের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি। প্রশ্ন যেভাবে রয়েছে, উত্তর সে অনুসারেই করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা নতুন বা এবারই প্রথম ঘটেছে-এমনটি নয়।’

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘এবারের এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েছে। বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদে অর্থ পরিবর্তন হয়েছে। প্রত্যেকটি ভুল নিরূপণ করা হচ্ছে। এসব কারণে শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। প্রশ্নপত্র ভুলের জন্য শিক্ষার্থীদের ফলাফলে প্রভাব পড়বে না।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো সম্পর্কে আমরা অবহিত। প্রত্যেকটি ঘটনা তদন্ত করে এর দায় দায়িত্ব নিরূপণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। প্রশ্নপত্র অনুযায়ীই তাদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হবে।’

এবার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা না ঘটলেও পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথিত প্রশ্নপত্র দেখা যায়। ভুয়া প্রশ্ন বিক্রি করে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকজনকে আটক করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

চলমান এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ইংরেজি ভার্সনের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে প্রশ্নপত্রে অসঙ্গতি রয়েছে। সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের ৫ নম্বর প্রশ্নে (ঘ)-তে আছে, জনাব সেলিমের ইবাদতটি চিহ্নিতপূর্বক এর সামাজিক গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর। এর ইংরেজি ভার্সনে আছে, Identifying the Ibadat offered by Mr Salim evaluate the accuracy of his Ibadat. আবার ৭ নম্বর প্রশ্নের অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আরেক দিন প্রচণ্ড লোকের ভিড়ে একটি মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও সে নিজ সিট ছেড়ে তাকে বসতে দেয়নি।’ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নে আছে, But when he see a health contemporary girl he throws a comment, ‘From which shop she eat rice.’ এখানে কী বোঝাতে চেয়েছে তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক অংশে ১১ নম্বর প্রশ্নে (ঘ) জ্যোতিবিদ্যা (Astronom) শব্দকে ইংরেজি করা হয়েছে Astrology. ২৬ নম্বর প্রশ্নে ফিতনাফাসাদ শব্দের ইংরেজি করা হয়েছে Mischief and disturbance.

গণিত বিষয়ের পরীক্ষায় একইভাবে প্রশ্নপত্রে ভুল রয়েছে। এর ৮ নম্বর প্রশ্নে‘একটি আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ৫৪০ বর্গসে.মি.। এর দৈর্ঘ্য ৭ সে.মি. কম হলে এটি একটি বর্গক্ষেত্র হয়। আয়তক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফলের সমান ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট একটি সমত্বিবাহ ত্রিভুজের ভূমির দৈর্ঘ্য ৩৬ সে.মি.।’

ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নে অনুবাদ করতে গিয়ে পুরো অংকের অর্থ পরিবর্তন করা হয়েছে। ইংরেজি ভার্সনে আছে Area of a rectangular region is 540nsq.cm. If its length decreases 7 cm. then it becomes a square. Length of an isosceles triangle is 36 cm. whose area is equal to the area of the rectangular region.’

গণিত বিষয়ের ৯ নম্বর প্রশ্নে আছে- ‘একটি বেলনাকার পিলারের আয়তন ১৮০π ঘনমিটার। এর ভূমির ক্ষেত্রফল ৯ π বর্গমিটার। ৬ মিটার দীর্ঘ একটি মই ভূমির সাথে ৩০ক্ক কোণ করে পিলারে ঠেস দিয়ে রাখা আছে। মইটির গোড়া এর পূর্বের অবস্থান থেকে পিলারের দিকে কী মিটার এগিয়ে এনে ভূমির সাথে ৪৫ক্ক কোণ করে পিলারে ঠেস দিয়ে রাখা হলো।’

ইংরেজি ভার্সনের প্রশ্নে আছে, Volume of a cylindrical pillar is 180 π cubic metre and radius of base is 9 sq. metre. A ladder of 6 m. length is kept against the pillar forming 30°’ angle with ground.

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত