ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস!

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৪ মে ২০১৯, ১৬:৩৫  
আপডেট :
 ২৪ মে ২০১৯, ২০:১২

প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস!

সারাদেশে আজ (শুক্রবার) প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রথম ধাপের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও প্রশ্ন ফাঁসের জন্য সাতক্ষীরায় ২১ প্রতারককে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে যে প্রশ্নপত্র উদ্ধার করা হয়েছে তার সাথে মূল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরা ছাড়াও পাবনায় ৮ জন, পটুয়াখালী ১ জন ও গোপালগঞ্জে ১ জনকে আটক করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

সাতক্ষীরা: র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এন.এস.আই) সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ৫ হোতাসহ ২১ সদস্যকে আটক করেছে। পরে তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হলে আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুর রহমান প্রত্যেককে ২ বছরের সাজা প্রদান করেন। সাজা প্রাপ্তদের মধ্যে ৫ জন মূল হোতা ও বাকি ১৭ জন পরিক্ষার্থী ছিলেন।

এর আগে শুক্রবার সকালে কলারোয়া থানার পার্শ্ববর্তী সোনালী সুপার মার্কেটে অবস্থিত কিডস কোচিং সেন্টারের ব্লাক বোর্ডে ফাঁসকৃত প্রশ্ন পত্রের উত্তর লিখে দেয়ার সময় ওই চক্রকে আটক করা হয়। আটক ৫ হোতারা হলেন, কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা থানার পরানখালি গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম, সাতক্ষীরার কলারোয়ার ঝাপাঘাটা গ্রামের জনতা ব্যাংক ম্যানেজার আফতাবুজ্জামান, একই উপজেলা একই গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে শিক্ষক আমিরুল ইসলাম, আশাশুনি উপজেলার চেউটিয়া গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে কৃষি ব্যাংক ম্যানেজার মনিরুল ইসলাম, একই উপজেলার কাকবাশিয়া গ্রামের রইছ উদ্দীনের ছেলে শিক্ষক তরিকুল ইসলাম।

র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ নুর সালেহীন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কলারোয়া থানার পাশে সোনালী সুপার মার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ নারীসহ ২৮ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তালা উপজেলার ধানদিয়া এলাকা থেকে আব্দুল হালিম নামের এই চক্রের আরো এক হোতাকে আটক করা হয়। এ নিয়ে মোট ২৯ জনকে আটক করে র‌্যাব। এর মধ্যে ২১ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২ বছরের সাজা প্রদান করা হয়। বাকি ৮ জনের (অভিভাবক) বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না পাওয়ায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

তিনি আরো জানান, আমরা জানতে পেরেছি ঢাকায় বসে একটি প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্র ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে তাদের কাছে মোবাইল ফোনে প্রশ্ন ও তার উত্তর বলে দেবে। এসব প্রশ্ন ও উত্তর ব্লাকবোর্ডে লিখে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার সময় তাদের আটক করা হয়। এজন্য সিন্ডিকেটের হাতে অগ্রিম পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। বাকি টাকা পরীক্ষা শেষে দেওয়ার কথা ছিলো। তিনি বলেন, প্রতারক চক্রটির কাছ থেকে যে প্রশ্নপত্র উদ্ধার করা হয়েছে তার সাথে মূল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে।

পাবনা: পাবনায় প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষায় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

পাবনার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, শুক্রবার সকালে পরীক্ষা শুরুর পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাবনা শহরের শুভ ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে ৪ জন বহিরাগত যুবককে আটক করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে বেশকিছু ডিভাইস সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলো, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের দয়রামপুর গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে শাকিব উদ্দিন (২০), তেথুলিয়া গ্রামের জাকির হোসেন লেবুর ছেলে আব্দুস সোবাহান (২১), চাটমোহর উপজেলার আটলংকা নতুনগ্রামের আব্দুস সামাদ সরকারের ছেলে আনোয়ার হোসেন (২৪) ও একই গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে সানাউল্লাহ সানি (২৪)।

এ আটক অভিযানে নেতৃত্ব দেন পাবনার (ভারপ্রাপ্ত) পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন (ভারপ্রাপ্ত) জেলা প্রশাসক শাফিউল ইসলাম।

অপরদিকে পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে অসুদাপায় অবলম্বনের দায়ে ৪ পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। তবে তাদের নাম পরিচয় জানাতে পারেনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।

উল্লেখ্য, পাবনা জেলার ৬২টি কেন্দ্রে মোট ৫১ হাজার ২৩১ জন পরীক্ষার্থী সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন।

গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইসের মাধ্যমে অসুদাপায় অবলম্বন করার অভিযোগে প্রতাপ মণ্ডল নামে এক পরীক্ষার্থীকে ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শুক্রবার দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ সালাউদ্দিন দিপু এ সাজা প্রদান করেন। প্রতাপ মণ্ডল গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় গ্রামের পুলিন মণ্ডলের ছেলে। গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ সালাউদ্দিন দিপু জানান, পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পর থেকেই প্রতাপের মোবাইল ফোনে প্রশ্ন পত্রের উত্তর আসতে ছিল। এসময় বিষয়টি টের পেয়ে প্রতাপকে হাতে-নাতে ধরে ফেলা হয়। পরে তাকে ৩ কারাদন্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

পটুয়াখালী: পটুয়াখালীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় নকল সরবরাহের অভিযোগে পুলিশের উপ সহকারী পরিদর্শক মাহবুবুর রহমানকে একমাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শুক্রবার পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে শহরের রশিদ কিশালয় বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে তার স্ত্রীকে নকল সরবরাহ কালে হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি। পরীক্ষা শেষে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা তাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে শহরের রশিদ কিশালয় বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে সদর সার্কেল পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কর্মরত উপ সহকারী পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান তার স্ত্রীকে নকল সরবরাহ করতে গেলে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা বিষয়টি দেখে ফেলেন। পরে তার কাছ থেকে নকল পত্র উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল জসিম উদ্দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরে ভাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হাফিজ জানান, পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব না থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর পুলিশ সদস্য মাহবুবুর রহমান পুলিশের পোশাক পরে নৈর্বক্তিক প্রশ্নপত্র (এমসিকিউ) পরীক্ষার সংশোধিত উত্তরপত্র সরবরাহ করেন। এ সময় কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট তাকে একাধিকবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ সময় অন্য পুলিশের উপস্থিতিতে তার কাছ থেকে উত্তরপত্রের সংশোধিত একটি কাগজ উদ্ধার করা হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত পুলিশের উপ সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মাহবুবুর রহমান পটুয়াখালী সদর সার্কেল অফিসে কর্মরত আছেন।

লক্ষ্মীপুর: সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মুঠোফোন নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করায় সোলায়মান নামে এক পরীক্ষার্থীকে আটক করছে পুলিশ।

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্র থেকে তাকে আটক করা হয়। তার ব্যবহৃত ওই মুঠোফোনে প্রশ্নপত্রের আংশিক মিল থাকার তথ্য রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আটককৃত সোলায়মান সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের আবদুল করিমের ছেলে।

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ফেনী জেলার একজনের ম্যাসেঞ্জার থেকে তার ফোনে একটি হাতে লেখা প্রশ্নপত্র আসে। যার কিছুটা মিল রয়েছে আসল প্রশ্ন পত্রের সাথে। তবে প্রশ্নপত্রের সিরিয়াল এ মিল ছিল না। তবুও তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি মো. লোকমান হোসেন জানান, আটককৃতের কাছ থেকে উদ্ধার করা মুঠোফোনটিতে প্রশ্নপত্রের সাথে আংশিক মিল পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত