ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী, এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় শিক্ষকরা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০১৯, ১৫:০৮

দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী, এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় শিক্ষকরা

প্রায় তিন সপ্তাহের যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এর আগে লন্ডন সময় বুধবার বিকেল ৬টা ৫৫ মিনিটে ওই ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশ্যে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বিদায় জানান প্রধানমন্ত্রীকে।

গত ১৯ জুলাই লন্ডনে যান শেখ হাসিনা। সেখানে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী ২০ জুলাই ইউরোপে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের সম্মেলনে যোগ দেন।

লন্ডনে কমনওয়েলথ মহাসচিব পেট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড এবং লর্ড আহমেদ অব ঊইম্বলডন পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে বলা হচ্ছিলো প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশ করা হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন এমপিও দেওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। যে কোনো সময় তা ঘোষণা করা হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানই এমপিও পাবে। মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

অবশ্য কতগুলো প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেওয়া হবে সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।

বৃহস্পতিবার নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ১ হাজার ৭৬৭টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হলে তা হবে অমানবিক। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা গত আট বছর খেয়ে না খেয়ে, বিনা বেতনে অথবা স্বল্প বেতনে জ্ঞানের আলো বিলিয়ে যাচ্ছেন। তাদের চাওয়া, আবেদন করা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই এমপিওভুক্ত করা হোক।

তিনি বলেন, একযোগে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নতুন ১ হাজার ৭৬৭টি বেসরকারি স্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্ত করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যে ১ হাজার ৭৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে এমপিওভুক্তির সব শর্ত পূরণ করে বাছাইয়ে টিকেছে এক হাজার ৬৪৯টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

নীতিমালার ধারা প্রয়োগ করে ৮৯টি উপজেলার মধ্যে এমপিওভুক্তির শর্ত পূরণে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মানদণ্ড হিসেবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ন্যুনতম ১০০ জন এবং কমপক্ষে দুই বছরের স্বীকৃতি থাকার বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বাদপড়া প্রতিটি উপজেলা বা থানা থেকে একটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়েছে। এই মানদণ্ডে ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে। বিশেষ বিবেচনায় বাছাই করা হয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানকে। ২২ ধারা প্রয়োগ করে মোট ৬১টি প্রতিষ্ঠানকে তালিকায় স্থান দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া দেশের দুর্গম ও পার্বত্য এলাকা, পাহাড়ি, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল এবং উপকূলীয় এলাকায় নীতিমালার ১৪ ধারা অনুসারে এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, এমন ৫৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫০০ জন বা তার বেশি এবং কমপক্ষে দুই বছরের স্বীকৃতি থাকার শর্ত পূরণ করতে হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাদপড়া ৮৯টি উপজেলায় ২২ ধারা প্রয়োগ করে ৬১টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার পরও ২৯টি উপজেলা ও থানা বাদ থেকে যায়- যেগুলোর মধ্যে উপজেলা ১২টি ও থানা ১৭টি। এই ১২ উপজেলার সাতটি থেকে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে। যোগ্য না হওয়ায় অপর পাঁচটি উপজেলার কোনো প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি।

অপরদিকে, দেশের ২৩টি উপজেলা বা থানা এলাকা থেকে এমপিওভুক্তির জন্য এ বছর কোনো আবেদনই পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারাদেশে এমপিওভুক্তির জন্য চূড়ান্ত করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৫১টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০০২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৭টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৯৪টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এবং ৫৩টি ডিগ্রি (অনার্স-মাস্টার্স) পর্যায়ের।

এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মোট আবেদন জমা পড়েছিল ছয় হাজার ১৪১টি। যাচাই-বাছাই শেষে সব শর্ত পূরণ করে অথবা বিশেষ বিবেচনায় যোগ্য হয়েছে এক হাজার ৭৬৭টি। এমপিওভুক্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে চার হাজার ৪৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রস্তুত করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নথিতে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ব্যয়ও তুলে ধরা হয়েছে। ৫৫১টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে এক বছরে ব্যয় হবে ১৯১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। একইভাবে ১০০২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৪৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ৬৭টি স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য ৪২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, ৯৪টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের জন্য ৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং ৫৩টি ডিগ্রি (অনার্স-মাস্টার্স) পর্যায়ের কলেজের এমপিওভুক্তিতে ২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে। মোট ব্যয় হবে ৭৯৬ কোটি ৮৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।

নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বশেষ এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল আট বছর আগে ২০১০ সালের ১৬ জুন। সেদিন সারাদেশের এক হাজার ৬০৯টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে (স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি) এমপিওভুক্তি করা হয়। প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী তখন সরকারি বেতনের আওতায় এসেছিল। বর্তমানে সারাদেশের প্রায় সাড়ে আট হাজার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত