ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিক্ষিকার জন্য অনশনে শিক্ষার্থীরা

শিক্ষিকার জন্য অনশনে শিক্ষার্থীরা

মাদরাসার ছাত্রীরা জানতে পারে তাদের প্রিয় শিক্ষিকা, স্কুল ছেড়ে অন্যত্র বদলি হয়ে যাচ্ছেন। এটুকুই যথেষ্ট ছিল, ১০ আগস্ট থেকে তারই প্রতিবাদে রীতিমতো রাস্তায় নেমেছে ভারতের এসএআরএম গালর্স হাই মাদরাসার মেয়েরা।

স্কুলের বারান্দা থেকে দেবকুন্ড গ্রাম যেখানে পেরেছে দেয়া হয়েছে পোস্টার। চলেছে মিছিল করে স্কুল পরিক্রমা। তাদের একটাই কথা, ‘আপনি কোথাও যাবেন না ম্যাম!’

প্রধান শিক্ষিকাকে সামনে রেখে হাতে কাগজে লেখা পোস্টার নিয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত। আপনি কোথাও যাচ্ছেন না। আমরা আপনাকে ছাড়বো না। ম্যাম আপনি আমাদের। অন্য কারো নয়। এই পোস্টারের আবেদনে কাজ না হওয়ার পরে টোটোয় মাইক বেঁধে গ্রামের রাস্তায় আট কিলোমিটার পদযাত্রা। দাবি, ‘ম্যাম আমাদের ছেড়ে কোথাও যাবেন না।’ গ্রামবাসীদের সেই আন্দোলনে সামিল করতে এই পদযাত্রা। পরে ১৫ আগস্ট বেলা ১১টার সময় তাতেও কাজ না হওয়ায় স্কুলের সামনের গেটে অনশনের ঘোষণা করে ছাত্রীরা।

এত চাপ নিতে পারেননি বেলডাঙা দেবকুণ্ড এসএআরএম গালর্স হাই মাদরাসার প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন। তিন দিনের আন্দোলনে হার মানলেন মাদ্রাসার শিক্ষিকা। বৃহস্পতিবার মাইক হাতে ঘোষণা করলেন, ‘তোদের ছেড়ে যাচ্ছি না।’ তখন ছাত্রীদের বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়ে এলাকা।

মাদরাসার ছাত্রীদের সঙ্গে মিশে কাজ করছিলেন দশ বছর ধরে। বেলডাঙার প্রত্যন্ত গ্রাম দেবকুন্ড, ১২০০ ছাত্রীর তিনি এক প্রকার নয়নের মনি। হবেন নাই বা কেন? মাদরাসা বোর্ডের পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ উত্তীর্ণ ছাত্রী। কেউ কোনোদিন ভেবেছে। স্কুলে চলছে নাটক, গান, নৃত্য, কুইজ, বিতর্ক। ছাদে ফুলের বাগান। মাদরাসার প্রাঙ্গনে তৈরি হয়েছে স্থায়ী সাংস্কৃতিক মঞ্চ। সেখানে নাবালিকা বন্ধ করতে নাটক চলছে। সেই নাটক দেখছে সেই অভিভাবকরা যারা আগে নিজের সন্তানের নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে দিয়েছেন। দেবকুন্ড গ্রামের মানুষ, ছাত্রী ও তাদের পরিবার তাই প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। বৃহস্পতিবার মাদরাসায় এসে প্রধান শিক্ষিকার ঘরে অবস্থান শুরু করেন।

গত ১০ আগস্ট হাতে পোস্টার নিয়ে শিক্ষিকার বদলি রোখার চেষ্টা করে যে ছাত্রীরা তারা বৃহস্পতিবার সকালে স্বাধীনতা দিবস পালনের পর চোখের জল সামলাতে পারেনি। প্রধান শিক্ষিকাকে ঘিরে ধরে ২০০ ছাত্রী ক্রমান্বয়ে কেঁদে চলছে। ‘দিদিমনি আমরা কী দোষ করলাম।’ আমাদের একেবারে ছেড়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছা কেন হলো। তার জবাব আপনাকে দিতে হবে। এই কথা শুনে শিক্ষিকাও কেঁদে চলেছেন। তাকে তার সহকারি শিক্ষিকা থেকে পরিচালন সমিতির সদস্যরাও বুঝিয়ে চলেছেন। অবশেষে বরফ গলল।

দেবকুণ্ড এসএআরএম গালর্স মাদরাসার প্রধান শিক্ষিকা মুর্শিদা খাতুন বলেন, ‘ওদের সোমবার থেকে স্কুলের পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার সকা‌লে ওরা কেউ খেয়ে আসেনি। স্কুলে টিফিনের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ওরা কেঁদে যাচ্ছে। আর কি নিজেকে বেঁধে রাখতে পারি! তাই থেকে গেলাম।’

এনএইচ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত