ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

১৫ ও ২১ আগস্ট নিয়ে মন্তব্য, মাউশি পরিচালক ওএসডি

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০১৯, ২২:০৫  
আপডেট :
 ২২ আগস্ট ২০১৯, ২২:২০

১৫ ও ২১ আগস্ট নিয়ে মন্তব্য, মাউশি পরিচালক ওএসডি

১৫ আগস্টে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনাকে ‘নিছক দুর্ঘটনা’ বলে মনে করা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনকে ওএসডি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এ তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বুধবার শিক্ষা ভবন সংলগ্ন সিরডাপ মিলনায়তনে একটি গোল টেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে কথা বলার সময় তিনি ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের নির্মম খুন সম্পর্কে উপরের মন্তব্যটি করেন।

তার এই নেতিবাচক মন্তব্যে শিক্ষাভবনে তোলপাড় শুরু হয়। বিভিন্ন মহল থেকে ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।একপর্যায়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারা এঘটনার প্রতিবাদ জানাতে তার অফিসকক্ষেও ঢুকে যান।কিন্তু এর আগেই ড. জাহাঙ্গীর অফিস থেকে বেরিয়ে যান।

এরকম পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বিদেশ সফররত শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৃহস্পতিবার দুপুরে মোবাইল ফোনে আলাপ করেন। সবশুনে শিক্ষামন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে জানান মহাপরিচালক।

জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, নেতিবাচক মন্তব্যের জন্য ড. জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মাউশি থেকে নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই ব্যবস্থা নেবে। কারণ শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন যা করার তা মন্ত্রণালয় থেকেই হবে।এজন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আলাদা করে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না।

অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ড. জাহাঙ্গীর হোসেনকে ওএসডি করা হতে পারে। আর এমন খবর পেয়েই ড. জাহাঙ্গীর ওএসডির আদেশ ঠেকাতে বিভিন্ন মহলে ছোটাছুটি করছেন।তবে ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, সেই বক্তব্যটি ছিল ‘স্লিপ প অব টাং’। আমি আসলে এমনভাবে বলতে চাইনি। আমি নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করতে চেয়েছিলাম।

এদিকে, ড. জাহাঙ্গীরের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. কাওছার আলী শেখ।

বৃহস্পাতিবার একসভায় সমিতির নেতারা বলেন, ১৫ ও ২১ আগস্ট বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসে দু’টি কলঙ্কজনক অধ্যায় ও হৃদয় বিদারক ঘটনা। শোকাবহ এ দিন দু’টিতে সারাদেশের শিক্ষক-কর্মচারীরা যখন নিহতদের স্মরণে শোক প্রকাশসহ রুহের মাগফেরাত কমনায় ব্যস্ত তখন দায়িত্বশীল পদে থেকে বেদনাদায়ক ঘটনা দুটিকে ‘নিছক দুর্ঘটনা’ বলে পরিহাস করা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাই এহেন বক্তব্যে সারাদেশের শিক্ষক-কর্মচারীরা অত্যন্ত মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। নেতারা মনে করেন- প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এখনও ‘শিক্ষা ও শিক্ষক স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডে’ লিপ্ত রয়েছেন। এদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে ১৫ ও ২১ আগস্টের ঘটনার মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও জনমনে হালকা করে তুলবেন এবং জাতিকে পিছিয়ে নেবার জন্য কুটকৌশলে লিপ্ত হবেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক মশিউর রহমান সুমন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ ও যুবলীগ নেতা আসাদুল ইসলাম আসাদসহ শতাধিক নেতা-কর্মী জাহাঙ্গীরকে খুঁজতে তার কক্ষে যান। তাকে না পেয়ে অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছে তাদের প্রতিবাদ ও ক্ষোভের কথা জানান। আগামী রোববার ফের তারা জাহাঙ্গীরকে খুঁজতে যাবেন বলে জানা যায়। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা রোকেয়া কবীর ড. জাহাঙ্গীরের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেন।

উল্লেখ্য, এর আগে তিনি একই অধিদফতরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপ-পরিচালক ছিলেন। নানা অভিযোগে তাকে ইডেন কলেজে বদলি করা হয়েছিল। পরে নানাভাবে ‘ম্যানেজ’ করে তিনি পরিচালক হয়ে ফিরে আসেন। ওই দফতরে যোগদানের পর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের কেনাকাটা ও বিল-ভাউচার দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে থাকে। ওইসব দেখাভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি।

বর্তমানে শিক্ষাখাত নিয়ন্ত্রণকারী গ্রুপ বাড়ৈ সিন্ডিকেটের শীর্ষ ব্যক্তিদের একজন হলেন ড. জাহাঙ্গীর হোসেন। তার মতো ওই সিন্ডিকেটের বাকি সদস্যদের বিরুদ্ধেও ভিন্নমতাবলম্বন এবং ছাত্রজীবনে শিবির সম্পৃক্ততা ও বিশেষ সুবিধা নিয়ে অধ্যাপক হওয়ার অভিযোগ আছে।

পরিচালক ড. জাহাঙ্গীরের মূল পদ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের শিক্ষক। ২০১০ সাল থেকে তিনি যথাক্রমে এই অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও পরিচালক পদে আছেন। তার নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত