ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের ‘কনসার্ট ফর সাদিয়া’

  জিটিসি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:১১  
আপডেট :
 ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:১৮

শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের ‘কনসার্ট ফর সাদিয়া’

ক্যানসারে আক্রান্ত তিতুমীর কলেজের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া সুলতানার চিকিৎসার খরচ জোগাতে অভিনব আয়োজন করেছে তিতুমীর কলেজ ‘শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ’। সংগঠনটি শনিবার কলেজের শহীদ বরকত মিলনায়তনে ‘কনসার্ট ফর সাদিয়া’ নামে একটি কনসার্টের আয়োজন করে। এ ক্যাম্পেইন থেকে প্রাপ্ত সকল টাকা সাদিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছে আয়োজকরা।

সাদিয়ার বাবা-মা মেয়ের চিকিৎসার জন্য নিজেদের ভিটেমাটিও বিক্রি করে দিয়েছেন। এমতাবস্থায় তাদের একার পক্ষে আর সাদিয়ার চিকিৎসার ভার বহন করা সম্ভবপর নয়। আর তাই সাদিয়ার চিকিৎসার খরচ জোগাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। আর তাতে কিছুটা আশার আলো দেখতে শুরু করেছে সাদিয়া।

সাদিয়ায় সহোযোগিতায় যেমন এগিয়ে এসেছে সামাজিক সংগঠনগুলো তেমনি পিছিয়ে নেই রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও। তাছাড়া সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ফেসবুক গ্রুপগুলোও।

এরই ধারাবাহিকতায় এবার সাদিয়ার চিকিৎসার খরচ জোগাতে অভিনব আয়োজন করেছে তিতুমীর কলেজ ‘শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ’।

শনিবার সকালে ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে ৫০ টাকা মূল্যে কনসার্টের টিকিট বিক্রি করা হয়। এছাড়াও শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের উদ্যোগে পিঠাপুলি কর্নার, পুষ্পকানন, বই কর্নার, ফুড কর্নার, লটারিসহ পাশাপাশি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের সভাপতি ও ‘কনসার্ট ফর সাদিয়া’ এর উপদেষ্টা মো. ইসহাক আলী বলেন, এটা একটি জীবন বাঁচানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। আমরা সাদিয়া সুলতানার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। অতীতে সংস্কৃতিকর্মীরা দেশের ক্লান্তিকালে নাচ, গান, আবৃত্তি এছাড়া আরো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পথে পথে এভাবে কাজ করেছেন। অসহায় দুস্থ মানুষের সাহায্যের জন্য এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ সরকারি তিতুমীর কলেজে পরিবার সাদিয়া সুলতানার চিকিৎসার খরচ যোগাতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

‘কনসার্ট ফর সাদিয়া’ শিরোনামের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আশরাফ হোসেন, উপাধ্যক্ষ ড. মোসা. আবেদা সুলতানা, দর্শন বিভাগের শিক্ষক নাসরিন চৌধুরী, তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিপন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়ল এবং দেশসেরা নাট্য অভিনেতা সোহেল রানা।

প্রসঙ্গত, এর আগে সাদিয়ার জন্য ‘Debate for Sister’ শীর্ষক বিতর্কের আয়োজন করেছিলো তিতুমীর কলেজ বিতর্ক ক্লাব। সাদিয়ার বাসা রাজধানীর বিমানবন্দরের কাওলা এলাকায়। বর্তমানে উত্তরার আর এম সি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাদিয়া।

সাদিয়ার বাবা মঈন উদ্দিন হেলালী বলেন, ‘আল্লাহ যেন কোনও মেয়েকে এমন রোগ না দেয়। মেয়ের কষ্ট দেখে আর থাকতে পারছি না। কয়েকদিন আগে আবারও দুটি টেস্ট করিয়েছি। প্রায় ১ লাখ টাকা লেগেছে। এ পর্যন্ত মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজের ভিটেমাটিটাও বিক্রি করে দিয়েছি। আর পারছি না। বাধ্য হয়ে মেয়ের জীবন বাঁচাতে সবার দারস্থ হতে হচ্ছে। ডাক্তাররা আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এত ব্যয়বহুল চিকিৎসার ভারে অসহায় হয়ে পড়ছি। এখন হাসপাতালে প্রতিদিনের চিকিৎসা ব্যয় ও সিট ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ কোনোভাবেই মেটাতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও বিনীত আবেদন, উনি যদি আমার মেয়েটার দিকে তাকাতেন...!’

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কোলন ও ওভারি ক্যান্সার দুটির চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই মুহূর্তে অর্থ যোগানের বিকল্প নেই। শিগগিরই তিনটি কেমোথেরাপি বিদেশ থেকে আনতে হবে, যার একেকটির ব্যয় পড়বে ৬ লাখ টাকা।

সাদিয়া রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। গত ২০১৮ সালে মে মাসে পরীক্ষার কেন্দ্রে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে উত্তরা মহিলা মেডিকেল ও পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন সেখানে চিকিৎসা নেয় সাদিয়া। পরে অবস্থার আরও অবনতি হলে উত্তরার আর এম সি হাসপাতালে জরুরি অপারেশন করা হয়। এরপর তার কোলন ক্যানসার ধরা পরে।

মাঝে কিছুদিন সুস্থ ছিলেন সাদিয়া। নিয়মিত নিজের ক্লাস ও টিউশনিও করেছেন। কিন্তু গত রমজানের আগে আবার ব্যথা শুরু হলে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান বিদ্যুতের তত্ত্বাবধানে এখন আলোক হাসপাতালে বিশোর্ধ সাদিয়ার চিকিৎসা চলছে।

সাদিয়ার মা কামরুন নাহার জানান, ৮টি কেমোথেরাপির পর আরও একটি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে ক্যানসার সমস্ত পেটে ও জরায়ুতে ছড়িয়ে পরেছে। এর মাঝে আমরা কোলকাতার টাটা মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় আবার দেশে ফিরে আসি। এখন মেয়ের পা ফুলে মোটা হয়ে গেছে। পেটও ফুলে গেছে। ব্যথ্যায় অস্থির হয়ে গেছে। সামান্য পানি ছাড়া কিছুই খেতে পারছে না। আমার মেয়েটা সব সময় মানুষের সেবায় কাজ করেছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত