ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

অন্য চাকরি না পেয়ে শিক্ষকতায় ৪২ শতাংশ শিক্ষক

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:৩৮

অন্য চাকরি না পেয়ে শিক্ষকতায় ৪২ শতাংশ শিক্ষক

গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, অন্য কোনো পেশায় চাকরি না পেয়ে শিক্ষকতায় এসেছেন ৪২ শতাংশ।

রোববার রাজধানীর এলজিইডি মিলনায়তনে প্রকাশিত শিক্ষা বিষয়ক এনজিও সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের ‘এডুকেশন ওয়াচ রিপোর্ট ২০১৮-১৯’-এ এসব তথ্য উঠে আসে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন। মোট ৬০০টি সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার তিন হাজার শিক্ষকের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এবারের বিষয় ছিল ‘চতুর্থ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের আলোকে বাংলাদেশে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের শিক্ষকবৃন্দ’।

এসময় শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করার প্রয়োজন রয়েছে। এই রিপোর্ট একটি চমৎকার পদক্ষেপ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষকতাকে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশাগুলোর একটি ভাবা হলেও পেশা, প্রতিষ্ঠান ও সম্মানী—এই তিনটি মিলিয়ে দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার মাত্র ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষক সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাকি ৭৩ শতাংশ শিক্ষকই নিজেদের পেশা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। অন্য কোনও চাকরি না পেয়ে শিক্ষকতায় এসেছেন ৪২ শতাংশ। এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষক তাদের বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আর শিক্ষকতা পেশা ছাড়তে চান ৫ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষক। তবে পেশা, প্রতিষ্ঠান ও সম্মানী মিলিয়ে তুলনামূলকভাবে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে সন্তুষ্টি বেশি। তাঁদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ তিনটি ক্ষেত্রেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের মাধ্যমিক স্তরের (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি) ৩৭ শতাংশ শিক্ষক বাজার থেকে কেনা নোট-গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীল। তাদের ২২ দশমিক ৪ ভাগ নিজের বাসায় অর্থের বিনিময়ে প্রাইভেট পড়ান। প্রশ্ন তৈরি করতে পারেন না বেশিরভাগ শিক্ষক। ১৪ দশমিক ৪ ভাগ শিক্ষক সরাসরি শিক্ষক সমিতি বা খোলাবাজার থেকে প্রশ্নপত্র কিনে পরীক্ষা নেন নিজ স্কুলে। গণসাক্ষরাতা অভিযানের 'এডুকেশন ওয়াচ ২০১৮-২০১৯'-এর প্রতিবেদনে মাঠ পর্যায়ের এমন চিত্রই উঠে এসেছে। গত ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষার উন্নয়নের কথা বলে বিদেশ থেকে হাজার কোটি ডলার এনেছে গণসাক্ষরতা অভিযান। সময় সময় তারা এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে।

গবেষণায় বলা হয়, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেসব শিক্ষক রয়েছেন তাঁদের ৪২ শতাংশই শিক্ষকতা করতে চাননি। তাঁদের জীবনে যে লক্ষ্য ছিল তা পূরণ না হওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই এই পেশায় এসেছেন। বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় থাকা ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন। বাকিদের মধ্যে ১১ দশমিক ১ শতাংশ ডাক্তার অথবা প্রকৌশলী, ১৩ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা, ১ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যবসায়ী হতে চেয়েছিলেন। এ ছাড়া পুলিশ ও প্রতিরক্ষায় চাকরি করতে চেয়েছিলেন ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ব্যাংকে ৪ দশমিক ২ শতাংশ, অন্যান্য ২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ৩ দশমিক৩ শতাংশ শিক্ষকের কোনো লক্ষ্য ছিল না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নমুনাভুক্ত শিক্ষকদের ৫৩ দশমিক ২ শতাংশের ক্ষেত্রে বর্তমান প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করাই ছিল প্রথম পেশা। এক-পঞ্চমাংশ শিক্ষক এর আগে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন, ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ অন্য পেশা থেকে এসেছেন। আর মোট শিক্ষকের দুই-তৃতীয়াংশ জানিয়েছেন, তাঁদের দ্বিতীয় একটি পেশা আছে। ২৩ দশমিক ২ শতাংশের দ্বিতীয় পেশা কৃষিকাজ, ১১ দশমিক ৩ শতাংশের গৃহশিক্ষকতা, ৪ দশমিক ৪ শতাংশের ব্যবসা, ২ দশমিক ৮ শতাংশের মৎস্য চাষ, ৫ দশমিক ৭ শতাংশের অন্যান্য, ১৯ দশমিক ৫ শতাংশের গৃহর্কম। ৩৩ শতাংশের কোনো দ্বিতীয় পেশা নেই।

গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার জন্য ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ নিজেরাই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করছেন। অন্যদিকে ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষক বলেছেন, সমিতি থেকে প্রশ্ন কেনা হয়। ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষক জানিয়েছেন খোলাবাজার থেকে প্রশ্ন কেনার কথা আর ১০ দশমিক ৩ শতাংশ অন্য শিক্ষকের সহায়তায় প্রশ্ন প্রণয়ন করছেন।

গবেষণাভুক্ত ৩১ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ পাওয়া গেছে, ৫ দশমিক ২ শতাংশে তথ্য-প্রযুক্তি ল্যাব আছে, ২২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব দুটিই আছে। আর ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে কোনোটিই নেই। মাধ্যমিকের শিক্ষকদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী, ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং বাকি ৩ শতাংশ উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। শিক্ষকদের ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ সরকারি প্রাথমিকে পড়ালেখা করে এসেছেন। মাধ্যমিক স্তরে মানবিক শাখায় পড়ালেখা করা শিক্ষকের হার ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ, আর স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৭৪ দশমিক ৮ শতাংশই মানবিকে পড়ালেখা করেছেন। তবে দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষকেরই বিএড, এমএড, বিএমএড, বিপিএডের মতো পেশাগত প্রশিক্ষণ রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত