ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

মঙ্গলবার থেকে উপাচার্য অবস্থানের ঘোষণা ডাকসু নেতার

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০১৯, ২১:২৭

মঙ্গলবার থেকে উপাচার্য অবস্থানের ঘোষণা ডাকসু নেতার

গণরুম সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না নিলে আগামী মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকালে শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য মো. তানভীর হাসান সৈকত। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এমন ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সৈকত বলেন, উপাচার্য মহোদয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হয়েও শিক্ষার্থীদের আবাসন সঙ্কট সমাধান করতে পারছেন না, শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবনযাপন করবে আর তিনি প্রাসাদোপম বাংলোয় আয়েশে থাকবেন এটা কোনোভাবেই অভিভাবকসুলভ কাজ হতে পারে না। উপাচার্য মহোদয়ের বিবেকে না বাধলেও গণরুম সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের অভিভাবকের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে চাই। ওইদি উপাচার্য মহোদয়ের সাথে সকালের নাস্তা করার মধ্য দিয়ে আমরা উপাচার্য ভবনে থাকা শুরু করবো।

গণরুমকে দোজখ হিসেবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণরুম সমস্যা চলমান এক বিভীষিকার নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে বহুদিন ধরেই শিক্ষার্থীদের তুলনায় আসন সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে অপ্রতুল। এমতাবস্থায় ‘গণরুম’ একটি দায়সারা প্রক্রিয়া, যেখানে কোনোরকম গাদাগাদির মাধ্যমে ছাত্রদের স্থানসঙ্কুলান হলেও সেখানে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের জীবনমান মানবেতর পর্যায়ে অবনমিত হয়েছে। এটি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সাথে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

এক সময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সোচ্চার থাকা এই নেতা বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপ্রতুল আবাসন একজন শিক্ষার্থীর শারীরিত ও মানসিক জীবনযাত্রার ওপর অত্যন্ত বিরুপ প্রভাব ফেলছে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে এই প্রতিকূলতাকেই মেনে নেয় প্রান্তিক পর্যায় থেকে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসনের জন্য প্রতিশ্রুতবদ্ধ হলেও এখানে নীরব ভূমিকা পালন করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণরুম নামক অপসংস্কৃতি প্রথম উদ্ভাবিত হয় স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান যখন একটি নতুন রাজনৈতিক দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন তখন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতারা তাদের কর্মী বৃদ্ধি করতে গণরুম নামক দাসত্বের কারখানার আবির্ভাব ঘটায়। পরবর্তীতে অপর স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়েও একইভাবে ছাত্র সংগঠনের কর্মী সরবরাহের উৎস হিসেবে গণরুমকে ব্যবহার করা হয়। কয়েক বছর পর এরশাদ যখন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন, তখন ডাকসু নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে কিছু সময়ের জন্য গণরুম সংস্ক্রৃতির যবনিকাপাত হলেও ‘৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতাসীন হলে ছাত্রদল স্থায়ীভাবে গণরুমের প্রচলন করে যা অদ্যাবধি বহাল রয়েছে।

গত ১ সেপ্টেম্বর ডাকসু নেতা সৈকত তার বৈধ সিট ছেড়ে গণরুমে অবস্থান নিয়ে আলোচনায় আসেন। তার নির্বাচনী প্রচারণায় গণরুম সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কাজ করার যে প্রতিশ্রুতি ছিল তা রক্ষা করতেই তিনি এই আন্দোলনে নেমেছেন বলে জানান। সৈকত তার নিজের সিটে গণরুমের শিক্ষার্থীদের পালাক্রমে থাকার সুযোগ দিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান।

গত ৩ সেপ্টেম্বর গণরুম সমস্যার সমাধান চেয়ে উপাচার্য বরাবর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বানের পাশাপাশি সাময়িক সমাধানের কয়েকটি প্রস্তাবনাসহ একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন এই ছাত্রনেতা। যার অনুলিপি প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন), প্রক্টর, সকল হলের প্রাধ্যক্ষ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং ডাকসুর সকল নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে দিয়েছেন বলেও দাবি করেন।

পরবর্তীতে গত ১ অক্টোবর সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে গণরুমবাসী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছাত্র সমাবেশ করে সমস্যা সমাধানে ১৫ কার্যদিবসের আল্টিমেটাম দেন তিনি। দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হলে উপাচার্যের বাসায় থাকতে শুরু করবেন বলে ওই সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেন।

তবে সম্প্রতি প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে আসন সংকট সমাধানে নেয়া সিদ্ধান্তকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে উল্লেখ করে সৈকত বলেন, এর জন্য প্রশাসনকে সাধুবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যা শিক্ষার্থীদেরকে পূর্বের আশার বাণী শুনিয়ে শুনিয়ে কালক্ষেপনের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

সৈকতের এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মপরিপন্থী কোনো কাজ করলে তার বিরুদ্ধে বিধি মতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সে একজন ছাত্র প্রতিনিধি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। যদি শৃঙ্খলাপরিপন্থী কোনো কাজ করে, তবে প্রয়োজনে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে।

তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে এ বিষয়ে জানালে তিনি বলেন, ঠিক আছে। তবে এ বিষয়ে সুস্থ চিন্তা করতে হবে। আশা করি, সবাই সুস্থ চিন্তা করবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত