ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিশাল সুখবর পাচ্ছেন ননএমপিও শিক্ষকরা

বিশাল সুখবর পাচ্ছেন ননএমপিও শিক্ষকরা

বেসরকরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে এ সংক্রান্ত নীতিমালায় তিন পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মফস্বলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাম্য পাসের হার ১০ শতাংশ কমানোর প্রাথমিক সিন্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি মফস্বলের প্রতিষ্ঠানে কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যায় কিছুটা শিথিল হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্কুল ও কলেজ জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮’ সংশোধন সংক্রান্ত কমিটির সভায় এসব সিন্ধান্ত নেয়া হয়।

জানা গেছে, কমিটির সদস্যরা ফের সভায় বসবেন। আগামী বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হতে পারে। নীতিমালার খুঁটিনাটি পর্যালোচনা শেষে সংশোধনীর উপর আসা প্রস্তাবগুলো শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নেতৃত্বে একটি সভা করা হবে। ওই সভায় স্টোকহোল্ডারদের কাছ থেকে আসা প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন নেয়া হবে। এরপর সংশোধিত নীতিমালা জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

নীতিমালা সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মোমিনুর রশিদ আমিনের সভাপতিত্বে কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে কমিটির সদস্য ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) গতকালের সভায় অংশ নেননি।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী পাওয়া গেলেও দুর্গম এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী পাওয়া কঠিন। এতে শহর ও গ্রামের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি তৈরি হয়। এসব বৈষম্য দূর করতে গ্রাম ও শহর ভেদে প্রতিষ্ঠানের কাম্য শিক্ষার্থী ও পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার শিথিল করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আরও কয়েকটি সভা করে তা চূড়ান্ত করা হবে।

বর্তমান নীতিমালায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য ডিগ্রি (স্নাতক) স্তরের যোগ্যপ্রতিষ্ঠান নির্ধারণের ক্ষেত্রে নানা ত্রুটি রয়েছে। ডিগ্রি স্তরের এমপিও করার ক্ষেত্রে নীতিমালায় পরীক্ষার্থী ও পাসের হার উল্লেখ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এমপিও প্রাপ্তির যোগ্যতা নির্ধারণে ১০০ নম্বরের গ্রেডি হলেও ডিগ্রি স্তরের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৫০ নম্বরের গ্রেডিং করা হয়েছে। গ্রেডিং পদ্ধতির এ অসঙ্গতির কারণে ডিগ্রি স্তরের অনেক যোগ্যপ্রতিষ্ঠান এবার এমপিওর তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এমপিও নীতিমালা-২০১৮ তে এমপিওভুক্তির জন্য পাঁচটি স্তর নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্তরগুলো হলো-নিম্ন মাধ্যমিক (৬ষ্ঠ থেকে ৮ম), মাধ্যমিক (৯ম থেকে ১০ম), উচ্চমাধ্যমিক (৬ষ্ঠ থেকে ১২শ), কলেজ (১১শ থেকে ১২শ), স্নাতক (পাস) তথা ডিগ্রি কলেজ (১১শ থেকে ১৫শ)। পাঁচ স্তরের মধ্যে শেষ স্তরে অসঙ্গতি রয়েছে। ডিগ্রি স্তর মূলত; ১৩শ থেকে ১৫ এই তিন শ্রেণি। নীতিমালায় ডিগ্রি স্তরের পরীক্ষার্থী ও পাসের হার ক্যাটাগরিতে কতজন শিক্ষার্থী থাকতে হবে তা বলা হয়নি। এতে কতজন শিক্ষার্থী পাস করলে ওই প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্তির জন্য যোগ্য হবেন তা স্পষ্ট নয়।

বর্তমান এমপিও নীতিমালার পরিশিষ্ট ‘খ’তে একাদশ-দ্বাদশ এ দুই শ্রেণিতে মফস্বলে ১৫০ জন এবং স্নাতক পর্যায়ে তিন শ্রেণিতে ৫০ জন নূন্যতম শিক্ষার্থী নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু পরিশিষ্ট ‘গ’ অনুচ্ছেদে একাদশ থেকে ১৫শ এই পাঁচ শ্রেণিতে কতজন পরীক্ষার্থী থাকবে তা আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়নি। নির্ধারণ করা হয়েছে একাদশ থেকে ১৫শ শ্রেণি পর্যন্ত। এই পাঁচ শ্রেণিতে ৪০ জন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৪০ জন কোনো স্তরের পরীক্ষার্থী তা-ও নির্ধারণ হয়নি। স্তর ভিত্তিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া বর্তমান নীতিমালায় ডিগ্রি স্তরের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও কতজন শিক্ষার্থী পাস করতে হবে তা নীতিমালায় উল্লেখ নেই। গতকালের সভায় এসব বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

সভাসূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত নীতিমালায় কাম্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিম্নমাধ্যমিক (শহরের প্রতিষ্ঠানে ২০০ ও মফস্বলে ১২০), মাধ্যমিকে (শহরে ২০০ ও মফস্বলে ১৫০), উচ্চ মাধ্যমিকে (শহরে ৩৫০ ও গ্রামে ২২০), কলেজ পর্যায়ে উচ্চ মাধ্যমিক একাদশ-দ্বাদশে (শহরে ১৫০ ও মফস্বলে ১২০ এবং মফস্বলের মহিলা কলেজে ১০০জন) এবং ডিগ্রী পর্যায়ে (শহরে ২১০ ও মফস্বলে ১৮০) জন কাম্য শিক্ষার্থীর শর্ত পূরণ করতে হবে প্রাথমিক সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিদ্যমান নীতিমালায় কাম্য শিক্ষার্থীর ক্যাটাগরিতে পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। নিম্ন মাধ্যমিক (শহরের প্রতিষ্ঠানে ২০০ শিক্ষার্থী ও মফস্বলে ১৫০ শিক্ষার্থী), মাধ্যমিকে (শহরে ৩০০, মফস্বলে ২০০), উচ্চমাধ্যমিক (শহরে ৪৫০ মফস্বলে ৩২০), কলেজ পর্যায়ে উচ্চমাধ্যমিক একাদশ-দ্বাদশ (শহরে ২০০ ও মফস্বলে ১৫০)।

কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল ক্যাটাগরিতে স্নাতক পর্যায়ে কতজন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে তা উল্লেখ নেই। স্নাতক ক্যাটাগরিতে একাদশ-দ্বাদশ ও স্নাতক পর্যায়ে মোট পাঁচটি শ্রেণির পরীক্ষার্থী একসঙ্গে শহরে ৬০ জন এবং মফস্বলে ৪০ জন নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে গতকালের সভায় আলোচনা হয়।

সভা সূত্রে আরো জানা গেছে, কাম্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার শিথিল করার বিষয়ে প্রাথমিক কিছু সিন্ধান্ত নেয়া হয়। সিন্ধান্ত অনুযায়ী, সংশোধিত নীতিমালায় কাম্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা নিম্নমাধ্যমিক (শহরের প্রতিষ্ঠানে ৫০ ও মফস্বলে ৩৫), মাধ্যমিক (শহরে ৫০ ও মফস্বলে ৩৫), কলেজ (শহরে ৫০ ও মফস্বলে ৩৫) এবং ডিগ্রী (শহরে ৫০ ও মফস্বলে ৩০) প্রাথমিক সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে পাসের হার গ্রামের প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ শিথিল করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে নিম্ন মাধ্যমিক (শহরের প্রতিষ্ঠানে আগের ৭০ ও মফস্বলে ৬০), মাধ্যমিক (শহরে ৭০ ও মফস্বলে ৬০) কলেজে (শহরে ৭০ ও মফস্বলে ৬০) এবং ডিগ্রী (শহরে ৭০ ও মফস্বলে ৫৫) করার ব্যাপারে প্রাথমিক সিন্ধান্ত হয়েছে।

নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, বৃহস্পতিবারের সভায় এমপিও’র চার শর্তের তিনটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরাও এ ব্যাপারে একটি যৌক্তিক প্রস্তাব দিয়েছি। সেগুলো বিবেচনা করতে বলেছি। সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে আরো দুই একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

বর্তমান নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির যোগ্যতা হিসেবে চারটি যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। চারটি ক্যাটাগরিতে ১০০ নম্বরের গ্রেডিং ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা হয়। একাডেমিক স্বীকৃতিতে ২৫ নম্বর (প্রতি দুই বছরের জন্য পাঁচ নম্বর, অর্থাৎ ১০ বা তার চেয়ে বেশি বয়স এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৫ নম্বর)। শিক্ষার্থীর সংখ্যার ওপর ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার জন্য ১৫ নম্বর।

এরপর ১০ শতাংশ বৃদ্ধিতে পাঁচ নম্বর)। পরীক্ষার্থীর সংখ্যার জন্য ২৫ নম্বর (কাম্য সংখ্যার ক্ষেত্রে ১৫ ও পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য পাঁচ নম্বর)। পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের জন্য ২৫ নম্বরের (কাম্য হার অর্জনে ১৫ নম্বর ও পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশ পাসে পাঁচ নম্বর) গ্রেডিং নম্বর নির্ধারিত আছে।

গত অক্টোবর মাসে ২৭৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত ঘোষণা করা হলে শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য স্পষ্ট হয়। গত ১২ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মোমিনুর রশিদ আমিনকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট এমপিও নীতিমালা সংশোধন কমিটি গঠন করা হয়।

এনএইচ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত