ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

যৌন নিপীড়ন: উপাচার্যের পক্ষে বিপক্ষে মানববন্ধন

  খুবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২০, ১৯:০০

যৌন নিপীড়ন: উপাচার্যের পক্ষে বিপক্ষে মানববন্ধন

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য প্রফেসর মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের নির্মাণ দুর্নীতি, অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তাল ক্যাম্পাস। এরই মধ্যে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে উপাচার্যের যৌন-নিপীড়নের খবর। যা নিয়ে তোলপাড় পুরো বিশ্ববিদ্যালয়।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দুটি গ্রুপ উপাচার্যের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ উপাচার্যের যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করলেও উপাচার্যপন্থী অপর গ্রুপটি বলছে, উপাচার্য দীর্ঘদিন ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন, আমরা তার সাথে বিভিন্ন ফোরামে কাজ করছি, ফেসবুকে তার বিরুদ্ধে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি এমন মানসিকতা লালন করেন না বলেই বিশ্বাস আমাদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, প্রায় দেড় বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে বোর্ড সভায় এক নারী প্রার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর শিক্ষকদের একটি অংশ এর প্রতিবাদে গত ৯ জানুয়ারী খুবির হাদী চত্বরে মানববন্ধন করে বিচার দাবি করেন। সেখানে তারা নিয়োগ বোর্ডে যৌন-হয়রানির তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং উপাচার্যের কাছে জবাব চান।

মানববন্ধনের শুরুতেই ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত তৎকালীন কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন শেখ মো. রজিকুল ইসলামের বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়। জাতীয় পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শুরুতেই ওই ছাত্রীর প্রতি উপাচার্য এমন আচরণ করেন যে আমরা সবাই বিব্রত হই। পরে বিষয়টিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হলেও উপাচার্য একের পর এক বিব্রতকর প্রশ্ন করে তাকে হেনস্তা করেন।

এছাড়াও উক্ত বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য প্রফেসর ড. সরকার সুজিত কুমারের বক্তব্যও পড়ে শোনানো হয় মানববন্ধনে। তিনি বলেছেন, আমরা চেষ্টা করেছি ওকে অ্যাকাডেমিক প্রশ্ন করতে। তবে ধূমপান ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা তুলেছিলেন উপাচার্য মহোদয়। বিভাগের সভাপতির সঙ্গে উপাচার্য একমত না হওয়ায় ওই বোর্ড তিনি (ভিসি) বাতিল করেন। যা সত্য তার পক্ষে সকলের সমর্থন ও অবস্থান করা নৈতিক দায়িত্ব।

মানববন্ধনে শিক্ষকগণ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইউজিসি কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই বিষয়ে তদন্ত করলে প্রকৃত তথ্য বের হয়ে আসবে। এই সমাবশে ১২টি ডিসিপ্লিনের ২০ জন শিক্ষক বক্তৃতা করেন।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে পাল্টা-মানববন্ধন করেছেন খুবির কিছু শিক্ষক। সেখানে তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে একটা মহলের ইন্ধনে সংগঠিত হচ্ছে বলে বিবৃতি দেন এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান।

শিক্ষকদের ওই অংশের পক্ষে বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. সারওয়ার জাহান এবং সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মো. শরীফ হাসান লিমন।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সমিতির সভাপতি বলেন, শিক্ষার্থীদের অন্দোলনে শিক্ষকদের প্রকাশ্য ইন্ধন দুঃখজনক, নজীরবিহীন। ছাত্রদের অধ্যাদেশ পরিবর্তনের দাবি মেনে নিলে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি আমরা চাই না।

অপরদিকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মো. শরীফ হাসান লিমন এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সমস্যা অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনায় নিয়েই কাজ করি। সেভাবেই আমরা তাদের উত্থাপিত দাবি নিয়ে কাজ করছি।

এদিকে ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের আহ্বানে এই মানববন্ধ অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এই বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাসুদুল আলম বলেছেন, শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে একটি মানববন্ধন আয়োজন করা হয়েছে, সাধারণ শিক্ষকদের জানার আগে এ বিষয়টি কার্যনির্বাহী পরিষদের সকল শিক্ষকদের জানা এবং মতামত নেয়ারও প্রয়োজন ছিল। বিষয়বস্তু নিয়ে ভালো-মন্দ আলোচনা না করেই শিক্ষক সমিতিকে ছাত্র আন্দোলনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া প্রকারন্তরে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ককে ধ্বংস করার শামিল।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত