ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

সফটলোন নিয়ে ধোয়াশা, আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

  জবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:১০

সফটলোন নিয়ে ধোয়াশা, আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি

করোনাকালীন অনলাইন শিক্ষার জন্য স্মার্টফোন কিনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিনা সুদে আট হাজার টাকা করে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসি। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর অথবা অধ্যয়নকালীন চারটি কিস্তিতে বা এককালীন আসল টাকা শিক্ষার্থীরা পরিশোধ করতে পারবে।

তবে এ ঋণ দেয়া নেয়া ও ভাউচার জমা দেয়া নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশাসন বলছে আগে লোন দেয়া হবে, অন্যদিকে বিভিন্ন বিভাগ বলছে আগে স্মার্টফোন কেনার ভাউচার দিতে হবে। এ যেনো 'ডিম আগে না, মুরগি আগে' এমন অবস্থায় পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, করোনা মহামারী পরিস্থিতির কারণে গত ২৫ জুন ইউজিসির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এক সভায় অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকায় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে ৯ আগস্ট দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্মার্টফোন কিনতে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর তালিকা চেয়ে উপাচার্যদের কাছে চিঠি দেয় ইউজিসি।

চিঠি পাওয়ার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিটি বিভাগ ও ইন্সটিটিউট থেকে নাম সংগ্রহ করে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থীর তালিকা ইউজিসির নিকট পাঠায়। তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা হারে ঋণ প্রদান করার নিমিত্তে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি দেয় জবি প্রশাসন।

বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, এসি পে-চেকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টাকা দেয়ার দরুন তাদের নিজ নিজ ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে এবং স্মার্টফোন কেনার ভাউচারটি ২৭ জানুয়ারির মধ্যে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের নিকট জমা দিতে হবে আর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে লোন প্রদান করা হবে। চেয়ারম্যান মহোদয়গণ ভাউচারগুলো (রশিদ) ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সফটলোন কমিটির সদস্য সচিবের নিকট জমা দিতে হবে।

এক বিভাগীয় চেয়ারম্যান সূত্রে জানা যায়, রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে দেয়া চিঠিতে আগে ভাউচার জমা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে জানানো হলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আগে টাকা পাবে এবং পরে ভাউচার জমা দেবে। তবে বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তাদের এমন ভুল গাইডলাইনে বিপাকে পড়েছেন শ্রেণী প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা।

২৭ জানুয়ারির মধ্যে ভাউচার জমা দিতে হবে আর টাকা ৩১ জানুয়ারির মধ্যে দেয়া হবে এমন অদ্ভুত তারিখ দেয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ মশিরুল ইসলাম বলেন বলেন, ডিপার্টমেন্টে যেনো শিক্ষার্থীরা কিছুদিন আগেই ভাউচার জমা দেয় তাই এমন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভাগীয় প্রধান ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের ফোন কেনার ভাউচারগুলো অর্থ দপ্তরে জমা দেবেন।

সফটলোন অনুমোদন কমিটির সদস্য সচিব কাজী মো. নাসির উদ্দীন বলেন, তিনি ছুটিতে আছেন। ভাউচার আগে না সফটলোন আগে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমস্যাটি অবশ্যই নিরসনযোগ্য। আমি রেজিস্ট্রার মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করেছি। কোথাও কোনো ভুল হয়ে থাকলে কারেকশন করে নোটিশ দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিতে অনুরোধ করেছি। বিস্তর বিষয়ে কথা বলার জন্য ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ মশিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।

রেজিস্ট্রার দপ্তরের সফটলোনের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ মশিরুল ইসলাম বলেন, ৩টি নোটিশ দিয়ে বিষয়টি বারবার জানানো হয়েছে। চেয়ারম্যানরা জানে, ডিনরা জানে, সফটলোন কমিটির বৈঠকও হয়েছে। তারা সব ডিপার্টমেন্টে বলে দিয়েছে। ছাত্ররা যদি আগেই টাকা দিয়ে মোবাইল কেনে তাহলে লোনের কী দরকার?

অন্যদিকে সফটলোনে আগে ভাউচার জমা দেয়ার মতো অফলাইন ভিত্তিক কাজসহ নানা জটিলতার জন্য অনেক শিক্ষার্থীই আগ্রহ হারিয়েছেন।

জানা যায়, তালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদের ৫ ভাগের ১ ভাগও সফটলোন নেয়ার জন্য নিশ্চায়ন করেনি।

আগ্রহ হারানোর ব্যাপারে ডেপুটি রেজিস্ট্রার মশিরুল বলেন, যখন সফটলোন দেয়ার কথা ওঠে, তখন অনেকেই জানতো না আসলে শিক্ষার্থীদের কী দেয়া হবে। সেজন্য অনেকেই আবেদন করেছিলো। এখন যখন বলা হচ্ছে টাকা দেয়া হবে আর সেটা ৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে, তখন অনেকেই আগ্রহ হারিয়েছেন। আর শিক্ষার্থীদের নামে এসি পে-চেক করা হবে, অর্থাৎ তাদের নিজ নামে চেক প্রদান করা হবে (যা তারা তাদের নিজ নিজ ব্যাংক একাউন্ট থেকে ক্যাশ করতে পারবেন)। তাই শিক্ষার্থীরা সফটলোন নিবে কী না, তা নিশ্চায়ন করার জন্য বিভাগীয় চেয়ারম্যান তাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে নতুন করে কোনো আবেদন করার প্রয়োজন নেই। কেননা শিক্ষার্থীদের আবেদনের তালিকা বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও রেজিস্ট্রার দপ্তরে ইতিমধ্যেই জমা আছে।

সফটলোনের ব্যাপারে রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সফটলোন কমিটির সদস্য কাজী নাসির উদ্দীনের সাথে এ ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। তিনি তার সাথে যোগাযোগ করবেন বলে বারবার আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত