ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

জাবি ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে বিব্রত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ

  জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ১২:৪৫

জাবি ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে বিব্রত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ

বিগত দুই সপ্তাহ ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যেভাবে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে চলছে তাতে বিব্রত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ। এর আগে জাবি ছাত্রলীগকে গেলো এক বছরে এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করতে দেখা যায়নি। জাবি ছাত্রলীগের এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাশাপাশি বিব্রত ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় বাঁধা দেয়া, সাংবাদিক মারধর, ছাত্রী অপহরণ চেষ্টা, হলের রুম ভাড়া নেয়া, ছিনতাই, ক্যান্টিন কর্মচারীদের বেধড়ক মারধরসহ ইভটিজিংয়ের মতো নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে চলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এদিকে ছাত্রলীগের এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলাকে কেন্দ্র করে ইংরেজি বিভাগের ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী কাজলকে মারধরের ঘটনায় গত শুক্রবার (৫ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে বটতলায় কাজলসহ তার বন্ধুরা শাখা ছাত্রলীগের গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক নিলাদ্রি শেখর মজুমদারকে মারধর করে।

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ছিনতাইয়ে বাঁধা দেয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৪৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ও চ্যানেল আই অনলাইনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাহমুদুল হক সোহাগসহ একই বিভাগের এক ছাত্রীকে মারধর করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।

এ ঘটনায় ২ অক্টোবর দুপুরে মারধরে নেতৃত্বদানকারী নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ও শহীদ রফিক জব্বার হলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী নেজাম উদ্দিন নিলয়সহ সাত জনকে সাময়িক বহিষ্কার করে প্রশাসন। কিন্তু বিকালে নিলয়সহ তিন জনকে বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার কথা জানানো হয়। এই আদেশের দুইদিন পর ‘অনিবার্য কারণ’ দেখিয়ে সেই বহিষ্কারাদেশও স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করার বিষয়ে উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যই বহিষ্কার আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। সেই সাথে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষা আটকে দেয়ার হুমকি প্রদানের কথাও বিভিন্নভাবে তুলে ধরেন তিনি।

বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, বহিষ্কৃত এই চার শিক্ষার্থী সভাপতি মো. জুয়েল রানার অনুসারী। আর মূল হোতা নিলয়সহ তিনজন (যাদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়া হয়েছে) সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চলের অনুসারী। এতে সভাপতি প্যানেল চাপ দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করতে বাধ্য হয়।

এদিকে ৩ অক্টোবর পচা ও বাসি খাবার পরিবেশনের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের তিন ক্যান্টিন কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ উঠে এক ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত কর্মী মাজহারুল ইসলাম সৈকত দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। একই সাথে তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী।

২ অক্টোবর দুপুরে জাল টাকা সরবরাহের অভিযোগে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর অভিভাবককে প্রথমে বটতলা ও পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের গেস্টরুমে কয়েক দফা মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে জানা যায়, মারধরের শিকার অভিভাবক জাল টাকার ব্যবসার সাথে জড়িত নন।

একই দিন ২ অক্টোবর মধ্যরাতে ‘ইভটিজিংয়ের’ জের ধরে মীর মশাররফ হোসেন হল ও আল বেরুনি হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়।

এরই জের ধরে পরদিন বিচার দাবি করে আল বেরুনি হলের ছাত্রলীগের নেতা- কর্মীরা জীববিজ্ঞান অনুষদের ১ম শিফটের ভর্তি পরীক্ষা আটকে দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকের হস্তক্ষেপে নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পরে পরীক্ষা শুরু হয়। এ ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শাখা ছাত্রলীগ ১০ নেতা- কর্মীকে আগামী এক মাসের জন্য বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে মো. জুয়েল রানা ও আবু সুফিয়ান চঞ্চল।

এদিকে ২৭ সেপ্টেম্বর প্রেমের জের ধরে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ৪৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী জাহিদুল ইসলাম সজল তার বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে একই বিভাগের ৪৪ তম আবর্তনের এক ছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় সজলকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এখনো সজল ওই ছাত্রী ও তার পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলে নিরাপত্তা শঙ্কায় আছে ওই ছাত্রীর পরিবার এমনটি জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, যারা প্রকৃত পক্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মনেপ্রাণে ধারণ করে তারা কখনই এধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড করতে পারে না। তারা ছাত্রলীগের কলঙ্ক। কতিপয় নামধারী ছাত্রলীগ কর্মীর এহেন বিব্রতকর কর্মকাণ্ডে আমরা শিক্ষকমহল উদ্বিগ্ন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. হাসনাত ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে আমরা শিক্ষার্থীরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। যেকোনো মুহূর্তে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হতে যেতে পারে। আমরা এমন ক্যাম্পাস চাই না। নিরাপদে পড়াশোনা করতে চাই সেজন্য ক্যাম্পাসের সুষ্ঠু স্বাভাবিক পরিবেশ চাই।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি সুস্মিতা মরিয়ম বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে ছাত্রলীগের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে পুরো ক্যাম্পাস নিরাপত্তা শঙ্কায় রয়েছে। একটি ছাত্র সংগঠনের আদর্শ এমন হতে পারে না। তারা বারবার বিতর্কিত কাজ করছে আমরা বিব্রত হচ্ছি।

এ সকল বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, জাবি ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত। এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সংগঠনের আদর্শকে ক্ষুণ্ণ করছে। তিনি শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের সর্তক করে তাদেরকে আরো সংযত ও দায়িত্ববান হওয়ার নির্দেশ দেন।

জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, ছাত্রলীগের কোন কর্মকাণ্ড ভর্তি পরীক্ষা কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত হবে না। ভর্তি পরীক্ষায় শাখা ছাত্রলীগ ভর্তিচ্ছুদের জন্য মেডিকেল ক্যাম্প গঠন, তথ্য সহায়তা কেন্দ্রসহ নানা ভাবে সহযোগিতা করছে। আর যারা বিতর্কিত কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন প্রকার অন্যায় কর্মকাণ্ডকে জাবি শাখা ছাত্রলীগ আগেও মেনে নেয়নি এখনো মেনে নিবে না। ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এজন্য সকল নেতাকর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ
  • সর্বশেষ
  • পঠিত