ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনে গুরুত্বারোপ

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:০৭

আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনে গুরুত্বারোপ

বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতির আলোকে বিদ্যমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা-ভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তে আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনে গুরুত্বারোপ করেছেন জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম। এই পরিবর্তন গণতন্ত্র চর্চার জন্য সবচেয়ে সহায়ক হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদস্থ অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর সভাকক্ষে সমাজ গবেষণা কেন্দ্র আয়োজিত এক সেমিনারে এক নিবন্ধে এসব বিষয় উঠে আসে। নজরুল ইসলামের পক্ষে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিকাশে আনুপাতিক নির্বাচনের ভূমিকা’ শীর্ষক এই নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ।

‘নির্বাচন পদ্ধতি’ ও ‘রাজনৈতিক ইশতেহারে অর্থনৈতিক ইস্যুর প্রতিফলন’ দু’টি পর্বে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বের মূল প্রবন্ধ রচনা করেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। দ্বিতীয়টির লেখক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন।

সেমিনারে আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, এর মাধ্যমে বিভিন্ন দলের ভোটানুপাতের সামান্য পরিবর্তনের কারণে নির্বাচনী ফলাফলের (অর্থাৎ সংসদে আসনানুপাতের) বড় ধরনের পরিবর্তন রোধ, কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার বিষয়গত সুযোগ এবং বিষয়ীগত প্রণোদনা হ্রাস, স্থানীয় সরকারসমূহের বিকাশের অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

প্রবন্ধে গণতন্ত্রের বিকাশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ভিত্তিক নির্বাচন-ব্যবস্থার পরিবর্তে আনুপাতিক নির্বাচন-ব্যবস্থার দশটি ইতিবাচক ও তিনটি নেতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়। ইতিবাচক দিকগুলো হলো- বিভিন্ন দলের ভোটানুপাতের সামান্য পরিবর্তনে নির্বাচনী ফলাফলে বড় ধরনের পরিবর্তন রোধ, কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করার বিষয়গত সুযোগ ও বিষয়গত প্রবণতা হ্রাস, আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কারচুপির প্রয়োজনীয়তা হ্রাস, অধিকতর যোগ্যতম ব্যক্তিদের সংসদে যোগদানের সম্ভাবনা সৃষ্টি, নির্বাচনী প্রচারের মানোন্নয়ন, প্রাক-নির্বাচনী জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস, রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা ও শক্তি বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকারসমূহের বিকাশের অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি, নির্বাচনে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল এবং জনগোষ্ঠীর জন্য সম-উচ্চতার জমিন সৃষ্টি এবং তার ফলে আরও অন্তর্ভুক্তিসম্পন্ন সংসদ গঠন, অধিকতর ন্যায্যতা অর্জন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক সংঘাতের প্রশমন।

অন্যদিকে নেতিবাচক দিকগুলো হলো- ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্বের সমস্যা, ঘন ঘন সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা এবং মনোনয়ন বাণিজ্য ও দলের পিঠে সওয়ার হওয়ার সমস্যা। তবে সুচিন্তিত কর্মপন্থা অনুসরণ করলে নেতিবাচক দিকগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে প্রবন্ধে বলা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতা ভিত্তিক পদ্ধতিতে বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনগুলোতে বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত ভোট ও আসনের অস্বাভাবিকতা তুলে ধরে প্রবন্ধে বলা হয়, আনুপাতিক পদ্ধতি বাংলাদেশের জনগণের মনস্তত্ত্বের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ।

নজরুল ইসলামের নিবন্ধে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের সারা দেশ থেকে প্রাপ্ত মোট ভোট ও আসনের অনুপাত তুলে ধরা হয়। যেখানে ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ৬টি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ভোট ও আসনের অনুপাত তুলে ধরা হয়।

‘রাজনৈতিক ইশতেহারে অর্থনৈতিক ইস্যুর প্রতিফলন’ শীর্ষক প্রবন্ধে ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইশতেহার উন্নয়নের ডিসকোর্সের আবর্তে আটকে গেছে। তাদের ইশতেহারের মূল ফোকাস উন্নয়নের ওপর। বিএনপির ইশতেহারে গণতন্ত্রকে নিত্যদিনের অনুশীলনে পরিণত করার কথা আছে। তাদের মূল ফোকাস রাজনৈতিক। কিন্তু মৌলিক কিছু প্রশ্নের উত্তর তাদের কারও ইশতেহারেই আসেনি। যেমন সংবিধানের চার মূলনীতির আজকের অর্থ কী, আমরা কী ধরনের রাষ্ট্র চাই- এসব প্রশ্ন আলোচিত হয়নি। বিএনপির ইশতেহারে পুনরায় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির অঙ্গীকার দেশে নতুন করে বিভাজন সৃষ্টি করবে।

বিনায়ক সেন বলেন, ইশতেহারে আয়-সম্পদ ও শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য নিয়ে তেমন কথা নেই। দুই-এক লাইনের বাইরে বোঝার উপায় নেই, এই বৈষম্য দূরীকরণ কীভাবে হবে। বৈষম্য দূরীকরণের উপায় বা পদ্ধতি নিয়ে ইশতেহারে বিস্তারিত থাকা উচিত ছিল। ষাটের দশকে মধ্যবিত্ত শ্রেণী একটা জাগরণ সৃষ্টি করেছিল। মধ্যবিত্তের ভূমিকা ছাড়া সরকারব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। মধ্যবিত্তের প্রসঙ্গটিতে আলাদা ও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু শুধু তারুণ্যের আলোচনা করে সেটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, বিকেন্দ্রীকরণের প্রসঙ্গটি ইশতেহারে তেমন আলোচিত হয়নি। বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে প্যারাডক্সটি হচ্ছে, যে সরকারকে আমরা স্থানীয় সরকারে নির্বাচন করছি, তাকে আমরা ক্ষমতায়ন করছি না। যেমন উপজেলা সরকার- নির্বাচন করেছি, ক্ষমতায়ন করিনি। অন্যদিকে যেটি নির্বাচিত এবং ক্ষমতায়িত, যেমন ইউনিয়ন পরিষদ সরকার- তার ক্ষমতা অতিসংকুচিত। বড় শহর, ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চল নিয়ে আলাদা কোনো আলোচনা ইশতেহারে নেই, যেটি থাকা উচিত ছিল। রাজস্ব কাঠামো সংস্কারের কোনো অঙ্গীকারও ইশতেহারে নেই। এনলাইটেনমেন্ট ছাড়া উন্নয়ন কখনো ভালো ফল বয়ে আনে না। তাই উন্নয়নের ধারণাসমূহের ওপর আলোচনা প্রয়োজন ছিল। সেটিও হয়নি।

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ, সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুব উল্লাহ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’র ডিস্টিংগুয়িস্ট ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক কাবেরী গায়েন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমাজ গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি ড. তাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত