ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

নির্মাণাধীন ভবনে ফাটল, সচিবালয়ে তিতুমীরের অধ্যক্ষ

  আহমেদ ইসমাম

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:৪৬

নির্মাণাধীন ভবনে ফাটল, সচিবালয়ে তিতুমীরের অধ্যক্ষ

সরকারি তিতুমীর কলেজে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের সংকট কমাতে ১০ তলা বিশিষ্ট দুটি ভবন নির্মিত হচ্ছে। এরই মধ্যে ভবনগুলোর বেশ কিছু অংশের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু শুরু থেকেই এ নির্মাণ কাজ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। আর এবার চলমান কাজের মধ্যেই ফাটল ধরেছে নির্মাণাধীন নতুন ভবনে।

বিষয়টি স্বীকার করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কলেজটির অধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন। তিনি দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার লতিফ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘আমি সবগুলো ভবনের কাজ করিনা। ফাটলের বিষয়ে অধ্যক্ষ ডিপার্টমেন্টের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, তারা ব্যাখ্যা দিয়েছে। ভবনে কোনো ফাটল নেই। কাজ তো এখনো হস্তান্তর হয়নি, চলমান। যারা কাজ নিয়েছে তারা এটা বুঝবে। আপনারা খামোখা সংবাদ প্রকাশ করে কোনো লাভ নেই। পানি ঠিকমতো দিলে এ ফাটল ধরতো না।’

ফাটলের বিষয়ে অধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন বলেন, ‘ফাটলের বিষয়টি নিয়ে আমি ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলেছি। ঠিকাদারের সাথেও কথা হয়েছে। একটি ভবন মূলত দাঁড়িয়ে থাকে দুইটি স্ট্রাকচারের ওপর। সেটা কলাম এবং পিলার। নিচে যেটা থাকে ওটা কলাম আর উপরেরটা পিলার। ভিম এবং কলামের মধ্যে যদি কোনো ফাটল ধরে সেটা ঝুঁকিপূর্ণ। এটা হলো ভবনের মূল স্ট্রাকচার। আর মাঝে যে পাঁচ ইঞ্চি জায়গা থাকে সেটা ‘ফলস’। নির্মাণের সময় এসব দেয়ালে ফাটল ধরতে পারে। প্লাস্টার করার সময় ঠিকমতো পানি না দেয়া বা সিমেন্ট-বালু ঠিকভাবে না পরার কারণে এ ধরণের ফাটল ধরতে পারে। কোনো ভিমেই ফাটল ধরেনি। আমার সাথে ইঞ্জিনিয়াররা ছিলো। আমরা পুরোটা ঘুরে দেখেছি। আমি আজ সচিবালয়ে গিয়ে বিষয়টি সচিব মহাদয়কে অবহিত করেছি। এবং আমি আগামী দুইদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর কাছে চিঠির মাধ্যমে কী কারণে এই ফাটল, ত্রুটি কি তা জানতে চাইব। এছাড়া আমাদের এ কাজের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট যে তদারকি কমিটি আছে তাদেরকে আমি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবো।’

ইঞ্জিনিয়াররা মৌখিকভাবে বিষয়টি অবহিত করেছেন উল্লেখ করে অধ্যক্ষ বলেন, ‘সরেজমিনে ঘুরে ইঞ্জিনিয়াররা (শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর) আমাকে মৌখিকভাবে বিষয়টি অবহিত করেছেন। ওনারা বলেছেন, এটা মূল বিল্ডিংয়ের কোনো সমস্যা না।’

ভিমের ফাটলের বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারদের বরাতে অধ্যক্ষ বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়াররা মৌখিকভাবে বিষয়টি সহজভাবে বোঝানোর জন্য বলেছেন, দুই রেললাইনের পাতের মধ্যে যেভাবে ফাঁকা রাখা হয়, ওই ফাঁকটা রাখা হয় যাতে ঘর্ষণের ফলে রেললাইন বেঁকে না যায়। ঠিক একইভাবে ভবনের সাথে দেয়ালে গ্রুপ করা দরকার ছিলো কিন্তু গ্রুপ না করার ফলে তাপমাত্রার কারণে এ ধরণের সমস্যা হতে পারে। তারপরেও আমি এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানতে চেয়েছি।’

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের পিছনের অংশের দুই তলার জানালার নিচের অংশের পাঁচটি পিলারে (সাব-পিলার বা ছোট পিলার) ফাটল ধরেছে। এছাড়া ফাটল ধরেছে একটি কলামেও (ভিম)। তাছাড়া ভবনের সামনের অংশের দরজার পাশ দিয়ে যাওয়া একটি দেয়ালেও চিড় ধরেছে।

বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে একাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, নির্মাণাধীন ভবনেই যদি এভাবে ফাটল ধরে তাহলে ভবন হওয়ার পর কি হবে? আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে ক্লাস করতে হবে। মাত্র তো দুই তলার কাজ শেষ হলো। পুরো ভবন তো বাকিই!

আরমান নামের এক শিক্ষার্থী জানান, দেশের সবচেয়ে বড় এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষের অভাবে পাঠ কার্যক্রমের বেহাল অবস্থা।

তিনি বলেন, ‘দুপুরে আরেকটি ক্লাস আছে। কিন্তু আমাদের ডিপার্টমেন্টের কোথাও যে বসব সে জায়গা নেই। এমনকি সেমিনার হল, গ্রন্থাগারেও বসার জায়গা নেই। তাই বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছি। দুপুরের ক্লাসটা করব কি না ভাবছি। এর মধ্যে আবার শুনছি নতুন ভবন নির্মাণের আগেই ফেটে যাচ্ছে। এখানে কিভাবে ক্লাস করা সম্ভব!’

উপাধ্যক্ষ ড. মোসা. আবেদা সুলতানা সে সময় বলেন, ভবনে ফাটল ধরার বিষয়টি আমরা শুনেছি। এ নিয়ে আমরাও কিছুটা চিন্তিত। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছি। তারা ব্যবস্থা নিবেন। এ বিষয়ে আমাদের করণীয় কিছু নেই।

প্রসঙ্গত, এর আগেও সরকারি তিতুমীর কলেজের একাধিক সমস্যা বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছে। অভিযোগ রয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজের ওয়েবসাইট একাধিকবার ‘হ্যাক’ হয়েছে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে নিয়মিত আপডেট পাওয়া যায় না। কলেজটিতে কোনো ক্যান্টিন নেই। এছাড়া সামান্য বৃষ্টিতেই তিতুমীর কলেজের ‘মূল ফটক’ পানিতে ডুবে যায়। তাছাড়া কলেজের ওয়াশরুমগুলোর কলগুলো দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।

অভিযোগ রয়েছে, কলেজের গ্রন্থাগারটিও মানসম্মত নয়। সংখ্যায় অন্যান্য সরকারি কলেজের তুলনায় এখানে শিক্ষক ‘যথেষ্ট’ থাকলেও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত এখনো বেশি।

আবাসন সংকট: তিতুমীর কলেজে ছাত্রীদের জন্য দুটি ছাত্রীনিবাস আছে। এর মধ্যে সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাসটি কলেজের মূল ভবনের পাশেই অবস্থিত। এই ছাত্রীনিবাসে প্রায় দুই’শ আসন আছে। এই ছাত্রীনিবাসের একজন ছাত্রী বললেন, তাদের কক্ষে চারটি বিছানায় থাকেন সাতজন। ছাত্রীদের জন্য সিরাজ ছাত্রীনিবাসটি বনানীতে অবস্থিত।

ছাত্রদের জন্য তিনতলাবিশিষ্ট আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসটির অবস্থাও খুব নাজুক। কর্তৃপক্ষের দাবি নতুন হল নির্মাণ হলেই এ সমস্যার সমাধান হবে। ১০ তলা করে ছাত্রদের জন্য একটি ও ছাত্রীদের জন্য নতুন একটি হল নির্মাণের কাজ চলছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত