ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

নানা নামে সান্ধ্য কোর্স: ঢাবির ৪২ বিভাগে চলছে ৮০ কোর্স

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:০৭

নানা নামে সান্ধ্য কোর্স: ঢাবির ৪২ বিভাগে চলছে ৮০ কোর্স

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স শুরু হয়েছিল দেড় দশক আগে। বাণিজ্যিকভাবে চলা সে সব কোর্সে যারা ভর্তি হন তাদের অধিকাংশই পেশাজীবী। প্রতি বছর সান্ধ্য কোর্স ভর্তি হচ্ছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। বাণিজ্যিকভাবে চলা সেসব কোর্সের বিষয়ে দীর্ঘ দিনের সমালোচনা ছিল। অবশেষ চলতি মাসের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ নিয়ে নাখোশ মনোভাব ব্যক্ত করেন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

ওই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহিদুল্লাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সামনেই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাণিজ্যিক ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের কারণে দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে ‘সরকারি’ আর রাতে ‘বেসরকারি’ চরিত্র ধারণ করেছে।’

ভরা মজলিসে রাষ্ট্রপতির এমন মন্তব্যের দুই দিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সান্ধ্য কোর্স বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। এ ছাড়াও নতুন বিভাগ ও পদ সৃষ্টিতে ইউজিসির পূর্বানুমতি, নিয়োগ এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসরণসহ মোট ১৩টি নির্দেশনা দিয়ে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের চিঠি দেয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের চারটি বিভাগে সান্ধ্য কোর্স চালু হয়। ২০০২ সালে চালু হওয়া সেই সান্ধ্য কোর্স নামের ছোট্ট গাছটি এখন শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে বিশাল বটবৃক্ষ রূপ ধারণ করেছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রমের বাইরে ইভিনিং মাস্টার্স, স্পেশালাইজড মাস্টার্স, এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স, প্রফেশনাল কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্সসহ নানা নামে বেশ রমরমাভাবে চলছে বাণিজ্যিক কোর্স।

সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৪২টি বিভাগ ও ইন্সটিটিউটে প্রায় ৮০টি কোর্স চালু রয়েছে।

‘শিক্ষকরা বাণিজ্যিক কোর্স নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের প্রতি যত্নবান থাকেন না’- এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সময় সকল ছাত্র সংগঠনের ইশতেহারে সান্ধ্য কোর্স বাতিল করার প্রতিশ্রুতি ছিল জানিয়ে ডাকসু’র সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নূর বলেন, ‘এটা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি নয়, সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্য কোর্স বন্ধের জন্য আগে প্রশাসনকে একাধিকবার বলা হয়েছে। তখন তারা ওইভাবে কর্ণপাত করেনি। এখন রাষ্ট্রপতি বলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এটাকে উপেক্ষা করার উপায় নেই।’

এবার সান্ধ্য কোর্স বন্ধ না হলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যাবে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভিপি নূর ও এজিএস সাদ্দাম হোসেন। নূর বলেছেন, ‘এখানে যেহেতু শিক্ষকদের একটা অর্থনৈতিক বিষয় জড়িত, সুতরাং অনেকে এটার বিপক্ষে অবস্থান নেবে। সেখান থেকে যদি প্রশাসন সিদ্ধান্তে না আসতে পারে তাহলে ছাত্ররা হয়ত এটা বন্ধের দাবিতে প্রয়োজনে আন্দোলন করব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বাণিজ্যিক কোর্স চালু রাখা যাবে না উল্লেখ করে ডাকসুর এজিএস ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি প্রশাসনিক জটিলতার অজুহাতে কিংবা স্বায়ত্তশাসনের অজুহাতে এই বিষয়টিকে দীর্ঘায়িত করতে চায়, সেটা ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। সেক্ষেত্রে ছাত্রসমাজ আন্দোলন করে সান্ধ্য কোর্সের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে।’

তবে সাদ্দাম হোসেন মনে করেন, শিক্ষার্থীরা যদি প্রয়োজন মনে করে তবে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণমূলক কোর্সগুলো রাখা যেতে পারে। এর জন্য শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের দিয়ে একটি নীতিমালা গঠন করতে হবে। কিন্তু সেই কোর্সগুলো বাণিজ্যিক হতে পারবে না।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, সান্ধ্যকালীন, প্রফেশনাল, এক্সিকিউটিভসহ বিভিন্ন কোর্সের বিষয়ে গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতি এক ধরনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির সেই নির্দেশনা মোতাবেক কোর্সগুলো পর্যালোচনার জন্য চলতি বছরের গত মে মাসে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ চৌধুরীকে প্রধান করে এবং পাঁচটি অনুষদের ডিনের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে।

কমিটির প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমদের কাছে প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সান্ধ্য কোর্সের বিষয়ে আমরা এখনও সুপারিশ করার মতো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি।’ তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামী এক মাসের মধ্যে তারা উপাচার্যের কাছে সুপারিশ দাখিল করতে পারবেন।

ওই কমিটির সুপারিশ পেলে তা সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে জানিয়ে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শুধু সান্ধ্যকালীন বিষয়টি বললেই হবে না, এখানে প্রফেশনাল, এক্সিকিউটিভসহ বিভিন্ন বিষয় আছে। নিয়মনীতি অনুসরণ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা ও জাতীয় প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তবে আমরা মূলধারার শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়ন ও উৎকর্ষতা সাধনে চেষ্টা অব্যাহত রাখব।’

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত