ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

টিকে থাকার জন্য সময় তো দিতে হবে: কনা

  বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:৫৯

টিকে থাকার জন্য সময় তো দিতে হবে: কনা

গানে গানে প্রায় দেড় যুগ ধরে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন ‘রেশমি চুড়ি’ খ্যাত সময়ের আলোচিত সংগীতশিল্পী দিলশাদ নাহার কনা। দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে ধারাবাহিক ভাবে শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন বেশ কিছু জনপ্রিয় গান। ছোট্ট আলাপচারিতায় সময় দিয়েছেন চলতি সময়ে সিনেমার গানের অন্যতম নির্ভরযোগ্য এই নারীকণ্ঠ শিল্পী। তাকে নিয়ে লিখেছেন ইমরুল নূর

বাংলাদেশ জার্নাল: সাল ঊনিশ পেরিয়ে বিশে পা দিল। গেল বছরে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির হিসেবটা কেমন ছিল?

কনা: অপ্রাপ্তি বলে কিছু নেই। যেটা পাই নি, সেটা তো পাই-ই নি। পেলে হয়তো বুঝতাম যে এটা পাওয়ার বাকি ছিল। আলহামদুলিল্লাহ যা পেয়েছি, অনেক। কাজের ক্ষেত্রে অনেক ভালো কিছু কাজ পেয়েছি। গানের মাধ্যমে দর্শকপ্রিয়তাও পেয়েছি প্রচুর। সেরা নারী সংগীতশিল্পী হিসেবে মেরিল প্রথম আলো অ্যাওয়ার্ড, বাচসাস অ্যাওয়ার্ড, আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। বলতে গেলে সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক এই তিনটি পুরস্কার। সবকিছু মিলিয়ে বেশ ভালো গিয়েছে বছরটা। আর একই বছরে বিয়েটাও করেছি। এটা আমার জীবনের প্রাপ্তি নয়,পূর্ণতা। তবে প্রাপ্তিটাই বেশি ছিল।

বাংলাদেশ জার্নাল: নতুন বছরে প্রত্যাশা কি...

কনা: আমি আসলে কোন সময়ই প্রত্যাশা করে কিছু করিনা। আমি আমার কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান। আমার কাছে যে গানগুলো আসে সেগুলো নিষ্ঠার সাথে করার চেষ্টা করি। আমি চাইবো আমি যেমন আছি নিজেকে যেন সেভাবেই ধরে রাখতে পারি আর দর্শক যেন আমাকে গ্রহণ করে। আমি এর থেকে বেশি কিছু চাইনা।

বাংলাদেশ জার্নাল: নতুন কি কি গান আসছে এই বছরে?

কনা: এখন শীতের সময় তো। শো নিয়ে বেশী ব্যস্ত থাকা হবে। ব্যস্ততার জন্য অনেক কিছুই করতে পারছি না। নিজের জন্য তিনটি গান প্রস্তুত করে রেখেছি কিন্তু শো-য়ের ব্যস্ততায় কারও সাথে যে বসবো প্রজেক্টগুলো নিয়ে সে সময়টা পাচ্ছি না এখন। ৫ তারিখ পর্যন্ত টানা শো রয়েছে ঢাকার বাইরে। এরপর দুইটা মিউজিক ভিডিও করার পরিকল্পনা আছে। এরমধ্যে বেশকিছু সিনেমার গান আসবে। বিক্ষোভ, শান, জ্বীন সিনেমাতে গান থাকছে, তিনটাতেই ইমরানের সাথে ডুয়েট করা। এরপর কাঠবিড়ালি, সিক্রেট এজেন্ট সিনেমার জন্যও গান করেছি। গানগুলো শিগগিরই আসবে। আলহামদুলিল্লাহ সিনেমার অনেকগুলো গানই করেছি এবং যেগুলো করেছি তার প্রত্যেকটা গানই ভীষণ সুন্দর। হিট বলবো না কিন্তু মানুষ পছন্দ করবে এটা আমার বিশ্বাস।

বাংলাদেশ জার্নাল: নিয়মিত স্টেজ ও টিভি শো করছেন। এত ব্যস্ততার মাঝেও চলচ্চিত্রের গান, অডিও প্রতিষ্ঠানের গান করছেন। সবকিছু একসাথে কীভাবে সামলান?

কনা: সবকিছুই আমার কাছে কাজ মনে হয়। শুধু সময়টা একটু মেইনটেইন করে নিই। যদিও একটু হাঁসফাঁস লাগে তবুও চেষ্টা করি কাজটা করে যেতে। যখন ঢাকার বাইরে শো থাকে তখন রেকর্ডিংগুলোর সময় একটু এদিক সেদিক হয়ে যায়। সেজন্য যেদিন ফ্রি থাকি সেদিন দুই-তিনটা রেকর্ডিং একসাথে করতে হয়। কিছুটা শারীরিক প্রেশার যায় কিন্তু মানসিকভাবে ঠিক থাকার চেষ্টা করি।

বাংলাদেশ জার্নাল: একটা সময় রুনা লায়লা, কনক চাঁপা, সাবিনা ইয়াসমিন চলচ্চিত্রের গানে নিয়মিত ছিলেন। তাদের সেই গানগুলো এখনও মানুষের মুখে মুখে রয়েছে। তাদের পর এই সময়ে চলচ্চিত্রের গান মানেই কনা, কতটা উপভোগ করেন?

কনা: চলচ্চিত্রের গান মানেই কনা নয়, এটা ভুল কথা। এখন সবাই গান করছে, আমি ছাড়া আরও অনেকেই কিন্তু চলচ্চিত্রের গান করছে। হয়তো আমার দুয়েকটা গান একটু বেশি জনপ্রিয় হয়েছে তাই পরিচালকরা একটু বেশি আগ্রহ দেখায় আমার প্রতি। তার মানে এটা নয় যে শুধু আমি-ই গান করছি, সবাই করছে। রুনা লায়লা ম্যাডামরা যখন নিয়মিত গান করতেন তখন কিন্তু অনেক বেশি সিনেমা নির্মাণ হতো, এখন সেই সংখ্যাটা কমে গিয়েছে। আমিও যদি আমার রেকর্ডিং হিসেবে করি তাহলে দেখব এখনের চেয়ে আগে আরও বেশি সিনেমায় গান করতাম। এখন সেই তুলনায় রেকর্ডিংটাও কম হচ্ছে। তবে আমি বেশ উপভোগ করি যখন দেখি আমার গান দর্শকরা আগ্রহ নিয়ে গ্রহণ করছে। যখন দেখি আমার গান পাঁচটা মানুষ শুনছে, পাঁচজন আমাকে গ্রহন করেছে ভালো লাগে অনেক। এটা আমার জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। আরেকটা বিষয় খুব ভালো লাগে, যখন স্টেজে উঠে সিনেমার গান গাই তখন দেখি আমার সাথে সাথে ছোট ছোট বাচ্চারাও সেই গানগুলো গাচ্ছে। এই বিষয়টা আমার কাছে বেশি ভালো লাগে। তখন মনে হয় যে হয়তো ভালো গান করছি। কারণ বাচ্চারা তো নিষ্পাপ থাকে, তারা তো আর এতকিছু জাজ করতে পারে না। তাদের কাছে যেটা ভালো লাগে সেটাই তারা গায়। সেদিক থেকে মনে একটি তৃপ্তি পাই এবং আরও ভালো কিছু করার আগ্রহটা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ জার্নাল: দিল দিল দিল, ওহে শ্যাম, প্রেমের বাক্স, তুই কি আমার হবি রে গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দর্শকমহলে। চলচ্চিত্রের গানে আপনার এই সাফল্যের রহস্যটা কি?

কনা: সাফল্যের রহস্য বলতে আসলে আমার একার কিছু না। একটা গানের সঙ্গে গীতিকার,সুরকার, সংগীত পরিচালক সবাই জড়িত থাকে। এটা আসলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। একটা গানের ক্রেডিট সবার আগে তাদের দিকেই যায়। তাদেরকে আমি সালাম জানাই। অবশ্যই চলচ্চিত্রের গানে নায়ক-নায়িকার ভূমিকাটা অনেক মূখ্য, সেইসাথে সেটার মেকিং,পিকচারাইজেশন। আমার দিল দিল গানটা ভালো ছিল, সেইসাথে শাকিব খান-বুবলীর রসায়ন, পিকচারাইজেশন যদি ঠিক না হতো তাহলে কিন্তু গানটা হিট হতো না। তাই একটা গানের সাথে জড়িত সবার প্রচেষ্টাই সাফল্যের মূলমন্ত্র।

বাংলাদেশ জার্নাল: এখনকার সময়ে জিঙ্গেল ও বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ মানেই কনা, কন্ঠ দিয়েছেন প্রায় ৫০০ এরও বেশি জিঙ্গেলে। চলচ্চিত্রের বাইরে জিঙ্গেলেও নিজেকে নির্ভরশীল করে তুলেছেন। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?

কনা: আমি জন্মের পর থেকেই জিঙ্গেল করছি, এটা আমার কাছে নতুন কিছু না। আমি সবসময়ই ভয়েস ওভার দেই। সপ্তাহের পাঁচদিনই আমাকে ভয়েস ওভার দিতে হয়। তাই স্টুডিওটাকে আমার কাছে নিজের ঘরই মনে হয়। এটা আমার জীবনে ভিন্ন কিছু না। জিঙ্গেল আর সিনেমার গান একই সাথে শুরু করেছি। তাই অনেক বছর ধরে একটা জায়গায় কাজ করছি বলেই হয়তো এই নির্ভরযোগ্যতাটা তৈরি হয়েছে। যেহেতু জিঙ্গেলটা বেশি করতাম তখন থেকে, তাই হয়তো এটা একটু ভালো বুঝি, আর সেজন্য পরিচালকরা আমার সাথে কাজ করতে পছন্দ করেন। এজন্য জিঙ্গেলে আমার ডাকটাই বেশি আসে। তবে আমি এখন জিঙ্গেলের চেয়ে টেলিভিশনের ভয়েস ওভারটা বেশি দিচ্ছি যেমন ভ্যাসলিন, প্যারাসুট, লাক্স,পন্ডস,ডাভ ইত্যাদি। এগুলার বেশিরভাগ ভয়েস ওভার আমার দেওয়া, প্রায় ৮৫ ভাগ। দেখা যায় যে আমি সারাদিনই ভয়েস ওভার দিচ্ছি। সেদিক থেকে মনে হয় যে আমি হয়তো ওরকম একটা নির্ভরযোগ্যতার জায়গায় নিজেকে নিয়ে যেতে পেরেছি।

বাংলাদেশ জার্নাল: অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা এখন খুব একটা ভালো না। এক কিংবা দেড় দশক আগে যে গানগুলো প্রকাশ হয়েছিল সেগুলো এখনও মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। কিন্তু এই সময়ে কোন গান সাময়িকভাবে হিট হলেও টিকে থাকছে না। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?

কনা: অবশ্যই টিকে থাকবে কিন্তু টিকে থাকার জন্য সময় দিতে হবে। এখন যে গানটা প্রকাশ হয়েছে সেটা টিকেছে কিনা সেটা বোঝা যাবে হয়তো আরও দশ বছর পরে। এখনই এটা জাজ করার কিছু নেই। আগে তো এরকম অনেক গানই হয়েছে, যেগুলো টিকে আছে সেগুলো হয়তো সবাই আর যেগুলো টিকেনি সেগুলো কি শুনছে না? অবশ্যই শুনছে। তেমনি আমাদের এই সময়ের গানগুলোর সময় পার হোক তখন এটা বোঝা যাবে। আমার ‘ধিম তা না’ গানটা প্রকাশ হয়েছে ২০১১ সালে, কিন্তু এই গান তো এখনও মানুষ শুনছে। ৯ বছর পার হয়ে গেলেও গানটা এখনও মানুষের মুখে তরতাজা। ‘বরষা’ গানটা প্রকাশ হয়েছে ২০০৮ সালে, কিন্তু এখনও যখন কোথাও স্টেজ করতে যাই তখন অনেকেই সেই গানের জন্য অনুরোধ করে। তাই বলবো গানকে সময় দিতে হবে এরপর বোঝা যাবে এখনকার গান টিকে থাকছে কিনা।

বাংলাদেশ জার্নাল: অনেকটা নিরবেই বিয়ে করেছেন। সেটা কেন? আর সাংসারিক জীবন কেমন যাচ্ছে? সংসার সামলানোর পাশাপাশি গান চালিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে না?

কনা: নীরবে না, পারিবারিকভাবে আমাদের আকদ হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু হয়নি, যখন সেটা হবে তখন সবাই ছবি দেখতে পাবে। আমি এখন আমার বাবার বাসাতেই আছি। সংসার জীবন ভালই যাচ্ছে। আর আমার স্বামী যেহেতু আগে থেকেই পরিচিত ছিল সেজন্য কাজ নিয়ে আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না। যেরকম ছিলাম ওরকমই আছি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত