ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘নকশীকাঁথা’র ১৩ বছর

  রেজাউর রহমান রিজভী

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:৪১

‘নকশীকাঁথা’র ১৩ বছর

প্রচলিত অর্থে ১৩ বা থার্টিনকে আনলাকি বলা হলেও নকশীকাঁথা ব্যান্ডের জন্য তা সব সময়ই লাকি। আগামী ২৫ জানুয়ারি সেই লাকি থার্টিন পূর্ণ হচ্ছে নকশীকাঁথা ব্যন্ডের।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগান বিশ্বর দরবারে এবং বিশ্বের নানান দেশের লোকগান এ দেশের দর্শক- শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে নকশীকাঁথা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের প্রায় সব অঞ্চলের বহু লোক গান সংগ্রহ করে সেগুলো এ সময়ের উপযোগী করে মঞ্চ ও টেলিভিশনে পরিবেশন করছেন এই ব্যান্ডের সদস্যরা।

২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টে গান পরিবেশন করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে নকশীকাঁথা ব্যান্ড। এই ব্যান্ডের ভোকাল সাজেদ ফাতেমী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগান নিয়ে গত প্রায় ১৫ বছর থেকে গবেষণা করছেন। দীর্ঘ ২২ বছর দেশের প্রথম সারির ছয়টি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে তিনি রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পাবলিক রিলেশন্স ডিরেক্টর হিসেবে যোগদান করেন। চাকরি ও গানে সমান মনোযোগ তার।

ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘নজর রাখিস’ প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে। ওই অ্যালবামের ‘ভোরের শিশির’, হাটের গোলমাল, নজর রাখিস, ভালোবাসার গান ও একশ বছর শিরোনামে গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘নকশীকাঁথার গান’। এই অ্যালবামের নয়া বাড়ি, চোর, সাত আসমান, তুকে লিয়ে শিরোনামে গানগুলো দারুণ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। এরপর আরও অন্তত ২০টি নতুন গান কম্পোজিশন করেছে নকশীকাঁথা। রোহিঙ্গা সংকট, সীমান্ত উত্তেজনা, ফেলানী হত্যা, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বেশ কিছু সংকট নিয়েও গান তৈরি করেছেন ব্যান্ডের ভোকাল সাজেদ ফাতেমী। উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো- ভালোবাসার মালা, প্রেমনদীতে তুফান ভারী, বাংলা ভাষার দুর্গতি ইত্যাদি।

স্বপ্নের শুরু: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থিয়েটারে জড়িত ছিলেন সাজেদ ফাতেমী। এ সময় ১৭ টি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন ও চারটি নাটকের নির্দেশনা দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে ১৯৯৯ সালে কয়েক বন্ধু মিলে থিয়েটার ফর রিসার্চ এডুকেশন অ্যান্ড এম্পাওয়ারমেন্ট (ট্রি) নামে নাটকের একটি এনজিও গড়ে তোলেন। সেই এনজিও নিয়ে তিনি ডেঙ্গু, এইডস, কিশোরী স্বাস্থ্য, শিশুশ্রম, বর্ণবাদসহ নানান ইস্যুতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে পথ নাটক তৈরি করে বিভিন্ন জেলায় পরিবেশন করেছেন। বিশেষত এইডস প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির কাজে বড় সাফল্য পায় ট্রি। ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন এইডস ইন এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক (আইক্যাপ) অংশগ্রহণের সুযোগ পান তারা।

সাজেদ ফাতেমীর প্রথম একক অডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে। অ্যালবামটি সুপারহিট হওয়ার সুবাদে এনটিভি থেকে ডাক আসে বাউল গান নিয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার। শুরু হয় লোকগান নিয়ে তার স্বপ্নের শুরু।

বাউল গান নিয়ে গবেষণা:

সাজেদ ফাতেমী বাউল গান নিয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপনার জন্য ২০০৪ সালে ডাক পান এনটিভি থেকে। বিশেষ ওই অনুষ্ঠান ‘মন আমার সন্ধান করি’ উপস্থাপনা শুরু করার মধ্য দিয়ে লোক গান নিয়ে গবেষণার নতুন এক দিশা পান তিনি। শুরু হয় এক নতুন জীবন। টেলিভিশনের শ্যুটিং ইউনিট নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াতে থাকেন। প্রতিভাবান বাউল শিল্পীদের খুঁজে বের করে তাদের জীবন, গান ও তাদের বাউল হয়ে ওঠার গল্পগুলো তুলে আনতে থাকেন টেলিভিশনের পর্দায়। বাউল গান নিয়ে সাপ্তাহিক ওই অনুষ্ঠান বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। অনুষ্ঠানটি চলে ২০০৭ সাল পর্যন্ত।

‘মন আমার সন্ধান করি’র পর বাউল গান নিয়ে বৈশাখী টেলিভিশনে ‘জীবন এতো ছোট ক্যানে’, বিটিভিতে ‘অনুসন্ধান’ ও সময় টিভিতে ‘অন্তরে অচিন পাখি’ শিরোনামে আরও তিনটি গবেষণামূলক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সাজেদ ফাতেমী।

নকশীকাঁথা ব্যান্ডের বর্তমান লাইনআপ:

সাজেদ ফাতেমী: দল প্রধান ও ভোকাল

জে আর সুমন: অ্যাকুইস্টিক গিটার, রাবাব ও দোতারা

বুলবুল সাহা: কাহন ও পারকেশন্স

রোমেল হাসান: মেলোডিকা ও অ্যাকোর্ডিয়ান

শামস : বেইজ গিটার

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত