ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ আপডেট : ৭ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

অবহেলা আর অনাদরেই কাটল তাপস পালের শেষ জীবন?

  বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:৩৬

অবহেলা আর অনাদরেই কাটল তাপস পালের শেষ জীবন?

তাপস পাল, বাংলা চলচ্চিত্রে দর্শকদের কাছে এক আবেগের নাম। অল্প বয়সেই অভিনয়ে নাম লেখান। একটু একটু করে নিজেকে অভিনয় করেছেন স্বকীয় ও প্রতিষ্ঠিত। নানামুখী চরিত্রে আর বহু রূপে পর্দায় হাজির হয়ে ভালবাসা কুড়াতেন অনায়াসেই। অভিনয় দিয়েই বাঙালি দর্শকের মন জয় করেছিলেন। যার জনপ্রিয়তা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে বাংলাদেশেও এসে পড়ে। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য নাম তাপস পাল। দীর্ঘকাল রাজত্ব করেছেন অভিনয় জগতে। দাপটের সাথে করে গিয়েছেন অভিনয়। হঠাৎ করে তাঁর চলে যাওয়াটা শোবিজ অঙ্গনে শোকের মাতম ফেলে দেয়। একজন দাপুটে অভিনেতার বিদায়ে শোবিজ অঙ্গন আজ স্তব্দ।

১৯৮০ সালে ‘দাদার কীর্তি’ সিনেমাতে অভিনয় করেই বাঙালির মন জয় করে নিয়েছিলেন এই অভিনেতা। প্রথম ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন দেবশ্রী। কেদার চরিত্রে অভিনয় করে কোটি হৃদয়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রেমের আলো। এরপর ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’ নামের আরকটি ছবিতেও দেবশ্রীর বিপরীতে অভিনয় করে সাড়া ফেলে দেন তিনি। পরের ছবিটিও সুপারহিট হয়। ১৯৮১ সালে ‘সাহেব’ ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান তাপস পাল।

একে একে উপহার দিয়েছেন অনেক সুপারহিট সিনেমা। সুরের ভুবনে, মায়া মমতা, সমাপ্তি, চোখের আলো, অন্তরঙ্গ, সাহেব, পর্বতপ্রিয়, দিপার প্রেম, মেজ বউ, পথভোলা, আশির্বাদ, পরশমণি, সুরের আকাশ, শুধু ভালোবাসাসহ তার সিনেমার তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। সেই সময় তার বেশিরভাগ সিনেমার নায়িকা ছিলেন দেবশ্রী রায়। শেষের দিকে দেবের কয়েকটি সিনেমাতেও দেখা যায় তাকে।

কলকাতা ছাপিয়ে অভিনয় করেছেন বলিউডের সিনেমাতেও। মাধুরী দীক্ষিতের প্রথম ছবিতে নায়ক ছিলেন তাপস। ১৯৮৪-তে মাধুরীর বিপরীতে ‘অবোধ’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ওই ছবিতে তাপস পাল মাধুরীর স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবিটিতে মাধুরীর চরিত্রের নাম ছিল গৌরী আর তাপস পালের নাম ছিল শঙ্কর।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে উপহার দিয়েছেন অনেক সুপারহিট সিনেমা। অথচ এই অভিনেতার শেষ জীবনটা কেটেছে অবহেলা, অনাদরে এবং নানা বিতর্কের দায় মাথায় নিয়ে। অনেকেই বলছেন, সবার কাছ থেকে মুখ লুখিয়ে রাখার এ জীবন নিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন বাংলার তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেতা।

যে তাপস পাল ছিলেন কলকাতার সিনেমার মধ্যমণিদের অন্যতম একজন কেন তার জীবনে নেমে এলো নিঃসঙ্গতা? সেই প্রশ্নের জবাবে বারবার উঠে আসছে তার রাজনীতিতে যোগ দেয়ার বিষয়টি। ভালোই ছিলেন তিনি অভিনয় নিয়ে। হঠাৎ করে মমতা ব্যানার্জির ডাকে ২০০৯ সালে রাজনীতিতে আসেন তাপস পাল। তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিতও হন তিনি কৃষ্ণনগর থেকে। এরপর অভিনেতা তাপস পাল হারিয়ে গেলেন বলা চলে।

তবে তারচেয়েও বড় ক্ষতিটা হলো ২০১৪ সালে। জনগণের কাছে দারুণ জনপ্রিয়তার গর্ব ও ক্ষমতার নেশা তাকে গ্রাস করেছিল হয়তো। নইলে অতো বড় মাপের শিল্পী কেন বক্তৃতা দিতে গিয়ে নিজেকে বিতর্কিক করে ফেলবেন! ২০১৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচনের কিছুদিন আগে একটি নির্বাচনী প্রচার সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে তাপস পাল বলেছিলেন, গুন্ডা পাঠিয়ে বিরোধী দলের মেয়েদের ধর্ষণ করাবেন। এই বাক্য তার মুখ থেকে হজম করতে পারেননি কেউ। তার কট্টর ভক্তরাও ছিঃ ছিঃ করে উঠলেন। বিতর্ক বারুদের মতো ছড়িয়ে পড়লে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান তিনি। মূলত সেই থেকেই তাপস পালের একলা হয়ে যাওয়ার শুরু। চারদিক থেকে সবাই সরে দাঁড়াতে লাগল।

আর ২০১৬ সালের শেষ দিকে তাপস পালের জীবনে শেষ ঝড়টা বয়ে গেল রোজ ভ্যালি নামে একটি চিট ফান্ডের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হবার পর। দীর্ঘদিন ভুবনেশ্বরের জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। সেখান থেকে বেরনোর পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর স্বাভাবিক হতে পারলেন না। চলে গেলেন ৬১ বছর বয়সে।

শেষ জীবনটা অনেক কষ্টে কাটল তার। জেল, অপমান, লাঞ্চনা এরপর অসুস্থ হয়ে পড়া। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সুপারহিট, তবু অনাদরে কাটল তাপস পালের শেষ জীবন- এই বিষয়টা সত্যি বেদনার তার ভক্ত-অনুরাগীদের জন্য। আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না তিনি। শুধুই থাকবেন তার সিনেমায় স্মৃতি হয়ে।

প্রসঙ্গত, তাপস পাল অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য গত ২৮ জানুয়ারি তাকে মুম্বাই নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মুম্বাইয়ের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রেখে চলছিল তার চিকিৎসা। এরপর মুম্বই থেকে তাপস পালকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে তার পরিবার। কিন্তু চিকিৎসার আর সেই সুযোগ হলো না তার আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন এই অভিনেতা।

আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত