ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিভিউ ‘বীর’: প্রাত্যহিক জীবনের সুক্ষ্ম দাওয়াই

  বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৮:১৪

রিভিউ ‘বীর’: প্রাত্যহিক জীবনের সুক্ষ্ম দাওয়াই

ছবির নাম: বীর।

ধরণ: রাজনীতি, অপরাধ, আবেগ, জীবনী।

অভিনয়ে: শাকিব খান, বুবলী, মিশা সওদাগর।

রেটিং: ৮.৭/১০

ছবিটি নিয়ে পূর্বানুভূতি ছিল এক্সাইটমেন্টাল। তাই আলাদা একটা প্রতীক্ষা, এক্সপেক্ট আর এক্সপেরিমেন্ট ছিল। ছবিটি দেখে ভাবলাম এমন একটা মুভি দেখতে এত বিলম্ব করলাম! তাই অনুশোচনা আর নিজের কাছে অনুসুচিত হলাম। আসলে ছবিটি নিয়ে যেহেতু একটা বিরাট রকমের ফিলিংস ছিল সেহেতু ছবিটি ইনজয় করারও খুব ইচ্ছে ছিল।

বৃহস্পতিবার মধ্যাহ্ন শোতে দেখে এলাম সিলেটের নন্দিতায় ছবিটি। অডিয়েন্সদের সংখ্যাও ছিল উপচেপড়া। মোটামুটি হাউজফুল শো ছিল। দর্শকদের কর্কশ আওয়াজ আর হৈ-হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে ছবিটি দারুণ উপভোগ করেছি। ছবিটির অনেক বিশেষত্ব আর বৈশিষ্ট্যাবলী আছে। অনেক উদ্যমের মধ্য দিয়ে ছবিটি মেকিং করায় ছবিটি ইনোভেশন করে দর্শকদের কাছে প্রেজেন্টেশন করতে পেরেছেন মুভি সংশ্লিষ্টরা।

এক কথায় যে এক্সপেক্ট আর অপটিমিস্টিক হয়ে হলে গিয়েছিলাম তা ফুলফিল হয়েছে। কাজী হায়াত সাহেব অত্যন্ত যত্নে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলো নিরীক্ষণ করে ছবিটি মেক করেছেন যে, ছবিটির সবকিছুই আহামরি, এক্সপেরিমেন্টাল। যেনো এটা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সুক্ষ্ম দাওয়াই।

কাজ থেকেই বুঝা যায় কাজী হায়াত সাহেব ছবিটি নিয়ে রেসপনসেবলিট প্রিপারেশন নিয়ে করেছেন। আমার বোধহয় এখনো এমন মেকারদের কাছ থেকে এই আধুনিক নবীন মেকারদের অনেক কিছু শেখা উচিৎ। সম্যকভাবে নিরেট হয়ে বলতে পারি, হায়াত সাহেব যদি অবসর নিয়ে নেন বিনোদন জগৎ থেকে তাহলে ‘বীর’ উনার ক্যারিয়ারের কালজয়ী সিনেমা এবং উনার অস্তিত্বের স্মারক, ধারক, বাহক হবে।

পূর্বের অনেক ছবির ক্রিয়েটর তিনি ছিলেন, তবে এমন সাকসেস একেবারেই নেই যেমনটা উনার তৈরি ‘বীর’ পেয়েছে। উনার ক্যারিয়ারের অনেক ছবিই ব্লকবাস্টার এর মুখ দেখেনি, যেখানে বীর অলরেডি অলটাইম ব্লকবাস্টার। ছবিটির মধ্যে তিনি এক ভিন্ন কাজ প্রেজেন্ট করেছেন অডিয়েন্সদের সামনে। যেটা উনার এক নতুন কাজের পরিচিতি তুলে ধরেছে সাথে সাথে দর্শকদের নতুনত্বের আভাস দিয়েছে।

মুভিটির বিশেষত্বের মধ্যে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সংলাপ আর ডায়লগগুলো। কাজী হায়াত মানেই হৃদয়স্পর্শী, রেখাপাতন সংলাপ। যেগুলো মনের ভেতরে অন্তরের গহীনে দাগ কাটে। বিশেষ করে সংলাপ আর গানগুলো কর্কশ আওয়াজের মধ্য দিয়ে উপভোগ করেছি। গানগুলোও খুব ভালো হয়েছে। আর এমন গল্পভিত্তিক, প্রেক্ষাপট নির্ভর আর জীবনী সংক্রান্ত মুভি খুব কমই তৈরি হয়।

ছবিটিতে দেশের, সমাজের,দশের, আইনের সবকিছুর বিষয়ই তুলে ধরা হয়েছে। একটা ছবির মধ্যে এত জনরা তুলে ধরা সত্যি প্রশংসনীয়। এত বুঝা যায় স্ক্রিপ্ট রাইটার খুব তীক্ষ্ণ, নৈপুণ্যে, এক্সপেরিয়েন্স আর কোয়ালিফাইড পার্সন।

গল্পটি বর্তমান সমাজের নোংরা পলিটিক্স আর সমাজের ক্ষমতাবান লোকদের বর্বর অত্যাচার, অনাচার, নিপীড়ন আর অশিষ্টতার উপর কনফিডেন্স করে। যেগুলো আমাদের সমাজে আহ্নিক ঘটে। আসলে ছবিটি ইনজয় করলে সবাই সতর্কীকরণ, করণীয়, বর্জনীয় এবং জীবনী সংক্রান্ত অনেক বিষয়াদিতে রিকোয়েস্ট, সাজেস্ট, প্রেসক্রিপশন, এডভাইস সবকিছুই পাবে। কাজেই ছবিটি দেখলে খুব উপকার হবে।

আর শাকিব খানের এক্টিং, ডায়লগ ডেলিভারি, লুক আর এক্সপ্রেশন ছবির দুই তৃতীয়াংশ প্রাণ ছিল। সে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে, নিজেকে প্রেজেন্টেশন করেছে দর্শকদের সামনে। এমন এ্যাটট্রাশনাল আর সিডিয়েসলি মুডে আমার জানামতে তাকে গেল ৪-৫ বছর ধরে দেখা যায়নি। খুব সিরিয়াস এবং রেসপনসেবলিট ছিলেন তিনি এই ছবিটিতে। এক কথায় কিং ইজ অলওয়েজ কিং। বুবলীকেও এই ছবিটিতে দারুণ দেখিয়েছে। তার গেটাপ-ড্রেসাপ, কস্টিউম, ডিজাইন, এক্টিং গ্ল্যামার, সবকিছুই সেই।

আমি মুভির মধ্যে সবচেয়ে বেশী বুবলীকে উপভোগ করেছি। তাকেও এমন এ্যাটট্রাশন মুডে অন্য মুভিতে সম্ভবত দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্টদের অভিনয়ও সেই হয়েছে। সমস্ত সিনেমাজুড়ে দৃষ্টিকটু ছিল কিছু ক্রিয়েশনের কাজ। এটা নিশ্চয়ই টেকনিশিয়ানদের অপারগতা। কারণ আমাদের উন্নতি টেকনিক ঠিকই আছে। কিন্তু সেটার নিপুণ ব্যবহার আর সূক্ষ্ম, এক্সপেরিয়েন্স আর কোয়ালিফাইড কর্মীর অদক্ষতার কারণে ভালো ব্যবহার হয়না।

অন্যদিকে টলিউডের দিকে তাকালে আমাদের থেকে স্বল্প বাজেট আর এক্সপেন্সিভ টেকনিক দিয়ে আমাদের থেকে ভালো এন্টারটেইনিং সিনেমা বানিয়ে ফেলে।কারণ এসবই কাজের এক্সপেরিয়েন্স আর কুয়ালিফাই’র জন্য। তাই বাজেটটা ফ্যাক্ট নয় কাজটা ফ্যাক্ট। আর এমন ছবি যদি শাকিব দৃঢ়, অনড় ও স্থির সংকল্প নিয়ে মেকিং করে তাহলে আমাদের অধঃপতনের মূলোৎপাটন আর গোল্ডেন পাস্ট অর্থাৎ সোনালী সেই অতীতের পুনরুত্থান ঘটবে। ছবিটি আসলেই অনেক ভালো হয়েছে।

অনেকেই হয়তো ভাববেন আমি আবেগতাড়িতভাবে এগুলো বলছি কিন্তু যারা দেখেছে তারাই একমাত্র বুঝবে। তাছাড়া অনেকেই বলেছিলো ছবিটি কেজিএফ এর ইন্সপায়ার্ড। কেজিএফ থেকে অনুপ্রাণিত,আবার কেউ বলেছে অর্জুনের সরকার মুভির কপি-পেস্ট। কিন্তু আসলে এগুলো কিছু সংখ্যক হেটার্স নপুংসকদের অপপ্রচার ছিল ছবিটি দেখলে দ্ব্যার্থহীন বুঝা যায়। ছবিটি একেবারে মৌলিক গল্পে।

আবারও বলছি যারা দেখেননি তারা দেখে নিন। আশাকরি অনেক ভালো লাগবে। ছবিটি দেখার পর অনেক এডভাইস, রিকোয়েস্ট, সাজেস্ট, প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসবেন। এক কথায় বীর মুভিটি দেখে রিক্তহস্তে আসবেন না, অনেক কিছু শিখে, জেনে এবং বুঝে আসবেন। যদি না দেখেন তাহলে পরে সন্তাপিত, অনুতপ্ত আর আফসোস করতে হবে।

লেখক: নিজামুর রহমান, সিলেট।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত