ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২০ মিনিট আগে
শিরোনাম

বই নিয়ে বিতর্কে সালমান মুক্তাদির

  হৃদয় আলম

প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:২৬  
আপডেট :
 ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২০:০০

বই নিয়ে বিতর্কে সালমান মুক্তাদির

ইউটিউবার ও অভিনেতা সালমান মুক্তাদির কখনো সমালোচনায় এসেছেন তার অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ডের জন্য আবার কখনো ভিডিও টিজার প্রকাশ করে। আর এবার তিনি বিতর্কে জড়িয়েছেন বই লিখে।

‘বিহাইন্ড দ্য সিন’- নামে সম্প্রতি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সালমান মুক্তাদিরের একটি বই প্রকাশ করেছে তাম্রলিপি প্রকাশনী।

বইতে সালমান নানান ধরনের অশালীন শব্দ ব্যবহার করেছে এবং ভাষার মাসে ভাষারই বিকৃতি করেছে বলে অভিযোগ অনেকরই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে সালমানের বইটি পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কেউ কেউ আবার বলছেন এভাবে রাতারাতি ফ্যান ফলোয়ার থাকা ইউটিউবাররা যদি বাজারে বই নিয়ে হাজির হন তাহলে নিয়মিত লেখকরা সমস্যায় পড়বেন। যারা নিয়মিত বই লেখেন বা লেখালেখি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের ওপর এসব ক্ষেত্রে চাপ পড়বে বলেও মত অনেকের।

রিয়াজ মানিক নামের এক ব্যবহারকারী ফেসবুকে লেখেন, ‘সালমান মুক্তাদিরের মত চটি লেখকের বই কেনার জন্য, সেল্ফি তোলার জন্য এই প্রজন্ম হুমড়ি খেয়ে পড়ে অমর একুশে বই মেলায়! সেই প্রজন্মই দৌড়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যায়! আসলে ওরা জানেইনা ওরা কি চায়!’

দেওয়ান তানভীর নামের এক লেখক হতাশা প্রকাশ করে লেখেন, ‘কোন হতচ্ছাড়ারা যেন এই সালমান মুক্তাদিরের বই বের করাকে ডিফেন্ড করছিলেন? কারা যেন বলছিলেন ‘বই লেখা কোনো ব্যাপার না, যে কেউ-ই বই লিখতে পারে’? কারা যেন বলছিলেন ‘সবার মত সালমানেরও অধিকার আছে একটা বই লেখার’?

আর হ্যা, কোন হতচ্ছাড়ারা যেন আবার বলছিলেন- ‘সালমান মুক্তাদির বাংলা সাহিত্যে একটা নতুন ধারার সূচনা করতে যাচ্ছেন’! সেই হতচ্ছাড়ারা দয়া করে এসে দেখে যান, আপনাদের পেয়ারের বালমান মুক্তাদিরের সৃষ্টি করা সাহিত্যের নতুন ধারা (আমার অবশ্য ধারা না বলে অন্য কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে)! তারপর আপনারা সাহিত্যে সালমানের আর কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবেন?

এই লোকের বই বের করা নিয়ে আমার আপত্তি দেখে অনেকেই বলছিলেন যে তার বই আমার বইয়ের চাইতে বেশি বিক্রি হবে বলে নাকি আমি হিংসা করছি। আর সেই হিংসা থেকেই নাকি আমি তার বই বের করা নিয়ে আপত্তি করছি!

তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, সালমানের এই গার্বেজ লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়ে গেলেও সে লেখক তো দূরে থাক কোনোদিন লেখকের টিকিটাও হতে পারবে না! কিন্তু আমার বই যদি এক কপিও বিক্রি না হয়, তবুও আমি লেখক....’

রাখি নাহিদ নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘আমার ফ্রেন্ডলিস্ট এর প্রায় আশি পারসেন্ট লোকের বই বের হইসে এই বই মেলায়। ব্যাপারটা বাংলা সাহিত্যের জন্য হুমকি না আশীর্বাদ এটা বুঝতেসি না। আজকাল ফাতেমা ছুটি চাইলেও আঁতকে উঠি। না জানি কখন বলে - আফা, আইজকা একটা বই এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যাওন লাগব। বিকালে আইতে পারুম না...

অন আ সিরিয়াস নোট, কই যেন পড়লাম মেলায় নির্মলেন্দু গুণ এর বই বিক্রী হইসে ৬৫০ কপি আর সালমান মুক্তাদিরের বই বিক্রী হইসে ১৭৫০০ কপি।

এটা দেখার পর সালমান মুক্তাদিরের মত পশ ইংরেজীতে শুধু একটা কথাই বলতে ইচ্ছা করে। ঠাইম ঠু লিভ দিস প্ল্যানেট ...’

এদিকে সালমানের বই ঘেঁটে দেখা যায় বইয়ের শুরুতেই সালমান তার বই লেখার উদ্দেশ্য উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘তথাকথিত সমাজ প্রথা আর অযৌক্তিক রীতিনীতি আমার কখনোই পছন্দ ছিলোনা। ভালো মানুষের মুখোশ পরে লুকিয়ে থাকা লক্ষ কোটি মানুষের জন্য আমার এই বই। এটা কোনো গল্প, কবিতা বা নাটক, উপন্যাস না। এই বই বর্তমান বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।’

বইটির সূচিপত্রে দেখা যায়:

১১ পৃষ্টায়- বাপের সম্পত্তি

১২ পৃষ্টায়- রেপ

২৭ পৃষ্টায়- সেক্স

৪০ পৃষ্টায়- গালাগালি

৬৪ পৃষ্টায়- খা*কি মা* হিজাব কই!

৬৯ পৃষ্টায়- ভার্জিন মেয়ে

৭০ পৃষ্টায়- ডিভোর্সসহ নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বইয়ে।

এরপর বইয়ের শুরুতে সবাইকে সতর্ক করে বলা হয়, ‘এই বই পড়ার পূর্বে আপনার পারিবারিক ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া বাধ্যতামূলক। বই পড়ার পর আপনি আপনার মানসিক ভারসাম্য রক্ষা না করতে পারলে লেখক বা প্রকাশন কেউই দায়ী না। প্রচণ্ড পরিমাণে রাগ, হতাশা, দোষারোপ করার বদভ্যাস, গালাগালি ও পরনিন্দা করা এবং নেতিবাচক মানসিকতা থাকলে এই বই আপনার জন্য হারাম। পরে ভাই বন্ধুদের আজাইরা ঢং দেখানোর জন্য বৈলেন না যে, কেন পড়লাম, এটা কী হলো, জীবন শেষ!

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সালমান মুক্তাদির বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘আমার বই কেউ পছন্দ করেছেন আবার কেউ করেননি। মানুষের পছন্দ-অপছন্দ থাকে। আমি বিষয়টিকে শ্রদ্ধা করি। আমার বইতে যে সমস্যা তার থেকে অনেক বড় বড় সমস্যা অনেক বইতে আছে। প্রায় ৪-৫ হাজার বই বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে। আমার বয়সী ছেলেরা যা করতেছে তাতে জনপ্রিয়তা পেয়ে যাওয়াতে মানুষের গায়ে লেগে গেছে। ওরা তো জনপ্রিয়তা পায় না। মানুষ বিষয়টা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে। ওখান থেকে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে অনেক কিছু বলে। এটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যাথা নাই। সবার পছন্দ-অপছন্দ থাকে। আমি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বইটা লিখেছি। সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে।’

বইতে অশালীন শব্দ প্রয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে সালমান বলেন, ‘অশালীন ভাষা বলতে সেই ভাষা, তখনই ব্যবহার করা হয়েছে যেসব ভাষা আমরা প্রতিনিয়ত অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে আসছি। কেউ যখন একটা কাহীনি বা সংলাপ বলবে, তখন চরিত্রে প্রয়োজনে অনেক কিছু করতে হয়। এখন যদি আমাকে গালি দিতে হয় আর এ ছাড়া ওই সংলাপ অন্য কোনোভাবে হচ্ছেই না তাহলে তো আমাকে ওই ভাষাটা ব্যবহারই করতে হবে। বিষয়টা এমন না যে, আমি কাউকে গালি দিচ্ছি। আমার বইটা যে রকম, তাকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য এ ধরনের বিষয়গুলো রাখা।

বই প্রকাশের পরদিন সালমানের সাথে বাংলাদেশ জার্নালের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি লেখক নই, আর লেখক হিসেবে নিজেকে দাবীও করতে চাই না। নিজের ভালো লাগা থেকে চারপাশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বইটি লিখেছি। আমি যা এবং যেভাবে কথা বলতে পছন্দ করি ঠিক সেভাবেই বইটি লেখা। আমার এই বইটি নিয়ে মানুষের মধ্যে এত আগ্রহ বইমেলায় না আসলে বুঝতেই পারতাম না। সবার প্রতি আমার অনেক ভালোবাসা রইলো।’

সে সময় তিনি আরো বলেছিলেন, ‘মানুষের ভন্ডামি, অযৌক্তিকতা, হিউম্যান সাইকোলজি আর মানুষের স্বভাব। এসব বিষয় নিয়ে লিখিত এই বইটি পাওয়া যাচ্ছে ‘অমর একুশে বইমেলা’র তাম্রলিপি প্রকাশনীর ১৭ নং প্যাভিলিয়নে। শুধু তাই নয়, রকমারি থেকেও যে কেউ বইটি প্রি-অর্ডার করে পেতে পারেন।’

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত