বাস্তব চিত্রনাট্যে আম্পানের তাণ্ডব
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ মে ২০২০, ১৮:১১ আপডেট : ২৩ মে ২০২০, ১৮:১২
টলিপাড়ায় ধ্বংসের এমন নির্মম চিত্রনাট্য আগে কেউ কখনো দেখেছেন কিনা সন্দেহ। আম্পানের তাণ্ডবে রীতিমতো ভয় পাইয়ে দিয়েছে রাজ-শুভশ্রী, শ্রাবন্তী, পায়েল সরকার, অরিন্দম শীলের মতো নামীসব গুনি অভিনেতা ও পরিচালককে। তারা সবাই ‘আরবানা’ নামের একটি ভবনে থাকেন। আম্পানের তাণ্ডবের আঁচ করতে পেরেছেন তারাও। রীতিমতো এক ভয়ঙ্কর গল্প হবে এ নিয়ে।
২০ মে রাতের সেই ভয়ঙ্কর ইতিহাসের কথা এখনো ভুলতে পারেনি এসব তারকারা। সে সময় ঝড় যে আসবে তা জানতেন সবাই। কিন্তু হাইরাইজে থাকা পুরো সেলেবকুলের গায়েও যে আম্পানের আস্ফালনে আঁচ আসবে তা কি কল্পনাও করতে পারেননি তারা।
‘আরবানা’ ভবনটি যে রকম সুইংগিং টেকনোলজিতে তৈরি হয়েছে তাতে এমন বিধ্বংসী ঝড়েও আমরা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির চেয়ে কিন্তু অনেক ভাল আছি। কলকাতার তো সব লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে! মানুষের কি অবস্থা! বলতে থাকেন পরিচালক অরিন্দম শীল।
তিনি বলেন, ‘আমি ৪৪ তলায় থাকি। আমার উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিম খোলা। তাই পূর্ব গতির ঝড় আমার বাড়িতে তার চিহ্ন রেখে যায়নি। তবে পুব দিকে মুখ করা টাওয়ারের কয়েকটা বাড়িতে কাঁচ ভেঙেছে। আর আমরা তিনঘণ্টা ধরে শুধু দুলেছি। আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট সারাক্ষণ দুলেছে। প্রচুর গাছ পড়েছে। গাছের দিকটা কেমন শ্মশানের মতো দেখাচ্ছে!’ আতঙ্কের গলা নিয়ে বললেন অরিন্দম।
নিজের ফ্ল্যাটে একাই থাকেন পায়েল সরকার। তিনি সেই ভয়ঙ্কর রাতের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি খুব একটা ভয় পাই না। কিন্তু এত ভয় জীবনে কোনোদিনও পাইনি। একটা জানলা বন্ধ করতে গিয়ে আর একটা জানলা খুলে চলে গেল! মাথার উপর ছাঁদ, পর্যাপ্ত খাবার, যখন যা চাই তাই সামনে হাজির, ফিল্মস্টার বললেই এমনই এক ছবি ফুটে ওঠে চোখের সামনে। তাদের আবার কষ্ট কিসের? এ ধারণাই যখন আপামর জনগণের বিশ্বাসে তখনই আম্পান কোথাও গিয়ে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছে সবাই সমান। হাওয়ার বেগ ক্রমশই বেড়ে চলেছিলো। বৃষ্টির মতো ভেঙে পড়ল কাচের জানালা। ভেতরে চলে এলো জল!
রাজের বাড়িতেও একই অবস্থা। শুভশ্রী অন্তঃসত্ত্বা। বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা। তারই মধ্যে আম্পানের আস্ফালন। রাজের বাড়িতেও ভেঙে গিয়েছিল জানালা। না, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়নি। কিন্তু যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন। ফোনের নেটওয়ার্ক থেকে ওয়াইফাই, কিছুই কাজ করেনি সে দিন। ‘প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। শুভশ্রী প্রেগন্যান্ট। সবাই প্যানিক করেছি। চোখের সামনে কাঁচ ভাঙল! জল যে কোথা থেকে ঢুকছে বুঝতেই পারছি না। আর সব দুলছে। মাথা ঘুরছে সকলের।’
শ্রাবন্তী ‘আরবানা’ থেকেই লাইভ করে ঝড়ের বীভৎস রূপ দেখান। ‘শুধু মানুষ নয়, আমার পোষ্যগুলো ভয়ে কেমন কুঁকড়ে ছিলো’, বলেন নায়িকা।
‘আরবানা’-য় কাচ ভাঙলেও বিদ্যুতের কোনো সমস্যা হয়নি। আর পূর্বদিক থেকে আসা ঝড় পুব দিকের টাওয়ারেই বেশি দৌরাত্ম্য দেখিয়েছে। অন্যদিকে ট্যাংরার এক হাইরাইজে বসে অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলা সে দিনই প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন প্রকৃতির কাছে তারা কি অসহায়।
অঙ্কুশ বলছিলেন, ‘মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হচ্ছে। ফ্ল্যাটের জানলার কাচ ভেঙে গেল হঠাৎ করে। জল ভেতরে আসতে লাগল প্রবল বেগে। বাথরুম থেকে ফলস সিলিং খসে পড়তে লাগল। মনে হল, এ যাত্রায় বুঝি আর রক্ষে নেই।’ দু’দিন কেটে গিয়েছে। এখনও আতঙ্কে রয়েছেন অঙ্কুশ। সেই রাতের কথা ভাবলেই গা শিউরে উঠছে তার।
আম্পানের রুটম্যাপে বাইপাসের পরেই ছিল পুব ঘেঁষা কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে সে হাজির হয় গড়িয়াহাট, গোলপার্ক, প্রিন্স আনোয়ার শাহ চত্বরে। প্রকাণ্ড গাছ পড়ে অভিনেত্রী রুক্মিণীর সাধের গাড়ির উপর! সে গাড়ি অক্ষত নেই। ‘পাঁচ তলার ফ্ল্যাটে থাকি আমি। গাছ পড়ে কমপ্লেক্সের দুটো গাড়ি নষ্ট হল। চারিদিকে তো আরও খারাপ অবস্থা!"’ উৎকণ্ঠা রুক্মিণীর গলায়।
অন্যদিকে দেব বললেন, ‘আমি আজ অবধি ঠিক আছি। আমার বাড়িতে ঝড়ে কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে চারপাশের মানুষকে দেখে বুঝেছি কি ভয়াবহ পরিস্থিতি। রাজনীতি না করে আমাদের সকলকে গৃহহারা মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
কিন্তু সাউথ সিটির ১৮ তলার ফ্ল্যাটের বাসিন্দা লেখক, বাংলা ধারাবাহিকের প্রযোজক লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘এত ঘন অন্ধকার জীবনে দেখিনি। তার সঙ্গে শোঁ শোঁ আওয়াজ! দুম করে কাঁচ ভাঙল আর হু হু করে জল ঢুকল! কমপ্লেক্স থেকেই গ্যাস বন্ধ করতে বলা হল।’
গোলপার্ক, প্রিন্স আনোয়ার শাহ ছুঁয়ে লেক গার্ডেন্সেও ঢুঁ মেরে যায় এই আম্পান।
পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে শুক্রবারও যেমন পানি নেই। ওই অঞ্চলেই থাকা অভিনেতা যিশু সেনগুপ্তর বাড়িতেও পানি নেই, ওয়াইফাই নেই। বাইরে থেকে পানি এনে কাজ সারতে হচ্ছে তাদের।
জৌলুস ভরা আবাসনের সুসজ্জিত লন এখন কাঁচের কুচিতে ভরা। বাহারি গাছ শিকড় থেকে উপড়ে পড়েছে। আর তার পাশেই পড়ে আছে জানলার ভাঙা ফ্রেম! সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে