আমি কখনোই স্টারডমের পেছনে দৌড়াইনি: নাউমি
ইমরুল নূর
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২০, ১৯:৫৬ আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২০, ২০:০১
গানের ভুবনে তাঁর নামটি বেশ জনপ্রিয়। মঞ্চে রয়েছে অবাধ বিচরণ, সেখানেও দর্শক মাতাতে তাঁর জুড়ি নেই। বলছিলাম জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাউমি’র কথা। অবশেষে (ইলেভেনথ আওয়ার), তোমায় ভেবে, তুমিহীনা (তারকাঁটা সিনেমা) নীল আকাশ ও হৃদয়ের সীমানা গান দিয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া এ শিল্পীকে অনেকদিন ধরেই নতুন গানে পাওয়া যাচ্ছে না। ২০১৬ সালে সর্বশেষ ‘অবশেষে’ অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন। এরপর থেকে অনেকটা অনিয়মিতই বলা যায় তাকে। বাংলাদেশ জার্নালের বিনোদন বিভাগের সাথে এক আলাপচারিতায় নতুন গান ও সাম্প্রতিক ব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেন এই গায়িকা।
২০০৯ সালের নতুন কুঁড়ির মধ্য দিয়ে সঙ্গীতাঙ্গনে পা রাখেন তিনি। এরপর ২০১১ সালে স্বনামে প্রকাশ করেন তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘নাউমি’। এই অ্যালবামের প্রতিটা গানেই পেয়েছেন শ্রোতাদর্শকদের অগণিত ভালোবাসা। এরপর একাধিক মিশ্র অ্যালবামে করেছেন। গানের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও তবে যে ক’টি গানে তার কণ্ঠের ছোঁয়া লেগেছে, প্রায় সব গানই শ্রোতাপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
গানে অনিয়মিত কেন জানতে চাইলে এই গায়িকা জানান, ঠিক অনিয়মিত না, সময় ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবসময় আলোচনার মধ্যমণি হয়ে থাকতে চাইনি বলে অনেকেই মনে করছেন যে আমি বোধহয় হারিয়ে গেছি। সত্যি বলতে আমি গান নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছি। মাঝে পড়াশোনার ভীষণ চাপ ছিলো, সেইসাথে গান; সবকিছু মিলিয়ে বেশ ব্যস্ত সময়ই কেটেছে। অনেকের মতে, প্রতিনিয়ত একের পর এক গান প্রকাশ করছি না বলে হয়তো অনেকে এটা মনে করে থাকতে পারেন। নতুন অ্যালবাম না করলেও আমার ব্যস্ততা সবসময় গান নিয়েই। বিভিন্ন নাটক, সিনেমার গানে কণ্ঠ দিচ্ছি। এর মধ্যে অনেক নাটকে গান করেছি, জিঙ্গেল করেছি। এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ওয়েব সিরিজ ‘আগস্ট ১৪’ এর টাইটেল গানটা আমার করা।
তিনি আরও বলেন, এখানে আরেকটা কথা বলা যায়, আমি নিউজ নিয়ে কখনওই চিন্তিত ছিলাম না। যার কারণে আমাকে খুব একটা নিউজেও দেখা যায়না। সর্বশেষ ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম ৩ বছর আগে। না দেওয়ার কারণ হলো, প্রায়ই বিভিন্ন পোর্টালে দেখি একটা নিউজকে নিয়ে সেটার শিরোনামটা এত বেশি অদ্ভুত করে দেয় যে সেটা দেখে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। আর বিভিন্ন নিউজেই দেখি সঠিক তথ্যের চেয়ে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি বেশি। এমনও দেখেছি আমার সাথে কথা না বলে মনগড়া নিউজ করতে। এসবের উপর একটু বিরক্ত ছিলাম। তবে আমি সবসময়ই সাংবাদিকবান্ধব ছিলাম। আমি চেয়েছি আমার সাথে কথা বলে কেউ সঠিক নিউজটা করুক।
সঙ্গীতাঙ্গনে পা রাখার পর গানের ভুবনে বেশ নিয়মিত ছিলেন। একের পর এক গান প্রকাশিত হতো। টানা কাজ করেছেন কয়েক বছর পর। কিন্তু গত ৪/৫ বছর ধরে একটা পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। এর কারণ কি? জবাবে নাউমি বলেন, সেসময় প্রচুর গান করেছি, দর্শকদের অনেক অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এখনকার অন্যদের মতো এক মাস পর পর নতুন নতুন মিউজিক ভিডিও নিয়ে হাজির হতে পারি না আমি। আমার গানের মধ্যে কিছুটা ট্রান্সফর্মেশন হয়েছে। গানের জনরার পরিবর্তন এসেছে। খুব বেছে বেছে কাজ করছি। তবে এটা ঠিক, মিউজিক ভিডিও করছি না কিন্তু গান নিয়মিত চলছে। বিভিন্ন জিঙ্গেল, নাটক, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সবকিছুই করছি। কমার্শিয়ালি অনিয়মিত হলেও আমি নিয়মিতই ছিলাম।
মাঝে সর্বশেষ অ্যালবাম প্রকাশের পর নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলাম উপস্থাপনায়। মাছরাঙা টেলিভিশনে ‘ইওর চয়েজ’, গাজী টেলিভিশনে ‘ক্রিকেট হাইলাইটস’ নিয়ে অনেকটা সময় দিয়েছি। ভিডিওতে না দেখা গেলেও পর্দাতেই ছিলাম। এছাড়া চলতি বছরে আমি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি। এই বছরে আমার ইচ্ছা ছিলো উচ্চতর শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়া, কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। পড়াশোনা, গান আর পরিবার এ নিয়েই আমার ব্যস্ততা- যোগ করেন নাউমি।
আর আমি কখনোই স্টারডমের পেছনে দৌড়াইনি। আমি শুধু মনোযোগ দিয়ে গানটা করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। এমনকি এখনও চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত। আলোচনায় থাকা না থাকা; এগুলো নিয়ে আমি কখনওই ভাবিনি।
তবে খুব শিগগিরই নতুন গান নিয়ে হাজির হবেন এই গায়িকা। নতুন গান নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। চলতি বছরেই ভক্তদের নতুন গান উপহার দিবেন জানান তিনি।
গান,উপস্থাপনার পাশাপাশি নাটকেও দেখা গিয়েছে নাউমিকে। ২০১৩ সালে ‘হারানো সুর’ নাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। মাত্র ৪ বছর বয়সে মায়ের কাছে ক্ল্যাসিকালে তালিম নেয়া এই শিল্পীর সাফল্য ছোটবেলা থেকেই। আর বর্তমানে গাইতে গাইতেই তিনি অনেকটা বড় হয়েছেন। নাওমি নতুন কুঁড়ি, জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতাসহ নানা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অর্জন করেন ১৪টি জাতীয় পর্যায়ের পুরস্কার।
আইএন