ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলেই...

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২০, ২২:৪০  
আপডেট :
 ০৬ জুলাই ২০২০, ২২:৪৬

হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলেই...

দীর্ঘদিন ধরে ব্লাড ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আটবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য শিল্পী এন্ড্রু কিশোর।

আশির দশকে প্লে-ব্যাক শুরু করার পর বাংলা, হিন্দিসহ বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তার অসংখ্য গান স্থান করে নিয়েছে মানুষের হৃদয়ে, স্মৃতির মণিকোঠায়। শ্রোতাদের উপহার দিয়েছেন সারা জীবন গুনগুন করে যাবার মতো কিছু গান।

তেমনই কিছু কালজয়ী গানের একটি ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস...।’ এই গানের জন্য ১৯৮২ সালে এন্ড্রু কিশোর প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ‘বড় ভাল লোক ছিলো’ সিনেমার এ গানটি লিখেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। আর গানের সুর করেন আলম খান।

গানটি যেসময় লেখা হয় তখন সৈয়দ শামসুল হক গান লিখতেন না। এই সিনেমাটির প্রোডাকশন হাউজ ‘শাওন সাগর লিমিটেড’ সে সময়ের নামী প্রোডাকশন হাউজ ছিল। এ হাউজের অধিকাংশ সিনেমাতেই মোটামুটি বার্তা থাকতো। এই সিনেমাটির পরিচালক মহিউদ্দিন ছিলেন একজন নামী প্রফেসর। সবাই তাঁকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতেন। বয়স অনেক হয়ে যাওয়ায় তাঁকে দিয়ে একটা সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করা হলো। যেটা দিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া যাবে, যাতে শেষ বয়সে উনি পুরস্কার পান এবং সম্মান পান। আর সত্যি সত্যি অনেক পুরস্কারও পেয়েছিল এই ছবিটি। সে হিসেবে সৈয়দ শামসুল হককে এই গান লিখতে দেওয়া হয়েছিল।

একদিন এই গানটি নিয়ে উপস্থিত হলেন সৈয়দ শামসুল হক। গানটি লেখার পর তিন বলেন, ‘আলম সাহেব গান তো লিখতে বলেছেন। কিন্তু গান তো লিখি না আমি। লিখতে চাইও না। কারণ, যাই লিখতে যাই তা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, লালন লিখে শেষ করে ফেলেছেন! আর যদি নতুন কিছু না দিতে পারি, তাহলে তো লিখে লাভ নেই। আমি অনেক চিন্তা করে একটা ছোট্ট জিনিস লিখে এনেছি, জানি না এটা আপনার কেমন লাগবে। তবে মনে হয়, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কেউই এই শব্দগুলো তাঁদের গানে ব্যবহার করেননি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যদি গানটা পুরোপুরি শেষ করতে পারি, তাহলে এই গানের জন্য জাতীয় পুরস্কার দিতে বাধ্য।

কারণ, এ ধরনের গানের কথা আগে হয়নি। আপনি যদি আমার চাওয়ামতো সুর করতে পারেন, তাহলে আপনিও পুরস্কার পাবেন। আর আপনি যাঁকে দিয়ে গাওয়াবেন, তাঁর ১০০ পার্সেন্ট লাগবে না, ৬০ পার্সেন্টও যদি গাইতে পারে, তাহলে সেও জাতীয় পুরস্কার পাবে নিশ্চিত।‘

সৈয়দ শামসুল হকের সব কথাই সত্যি ফলে গিয়েছিল। পরে যখন বিখ্যাত গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ও গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের সঙ্গে এন্ড্রু কিশোরের দেখা হলো, তখন তাঁরা দুজনই একই প্রশ্ন করেছিলেন। তাঁদের কথা হলো, তাঁরা দুই গীতিকার সেই সাম্রাজ্যবাদের পর থেকে আধুনিক গান নিয়ে এত গবেষণা করেছেন, তবুও এসব শব্দ তাঁরা খুঁজে পাননি এবং যাদেরকে বাংলা সাহিত্যের দিকপাল ভাবা হয়, তাঁরাও এসব শব্দের ব্যবহার করেননি।

এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া এ গানের ভিডিওতে দেখা গিয়েছিলো প্রয়াত অভিনেতা আনেয়ার হোসেন ও প্রবীর মিত্রকে। মরমী সংগীত ধারার এ গানটি আজও দর্শকমনে বেশ জনপ্রিয়। আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত