ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

মিতুলের স্মৃতিতে হুমায়ূন আহমেদ

‘পরের বার ভুল করলে মুখে গোবর দিয়ে দিবো’

  বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২০, ২১:০৩

‘পরের বার ভুল করলে মুখে গোবর দিয়ে দিবো’
ছবি: সংগৃহীত

নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই নভেম্বরেই। বেঁচে থাকলে এই কথার জাদুকর ৭২ বছরে পা দিতেন। ক্যান্সার ক্ষণজন্মা এ কথাসাহিত্যিকের জীবন কেড়ে নেয় ২০১২ সালে।

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণে মুখর থাকেন আনন্দভূবনের তারকারা। আর সবার মতো অভিনেতা আফফান মিতুলও ভেসেছেন স্মৃতির জাহাজে।

তার অনুভূতি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো...

‘১৭ বছরের বালক আমি তখন, ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছি। পাঠ্যপুস্তকের চেয়ে বেশী বুঁদ হয়ে থাকতাম হুমায়ূন আহমেদের গল্প উপন্যাসের বইসমূহে। আর টিভিতে তাঁর পরিচালিত নাটক এবং সিনেমাহলে তাঁর পরিচালিত সিনেমা মানে আমার কাছে শ্রেষ্ঠ বিনোদনের মাধ্যম। অনেক কষ্টে হুমায়ূন আহমেদের বাসার ল্যান্ডফোন নাম্বার ম্যানেজ করে আমার বাসার ল্যান্ড ফোন থেকে ফোন দিই। কী কপাল আমার, স্যারই আমার ফোন রিসিভ করলেন।

হ্যালো...

আমি কি হুমায়ূন স্যারের সঙ্গে কথা বলতে পারি?

বলেন, আমিই হুমায়ূন আহমেদ।

আমি আপনার অনেক বড় ভক্ত। আপনার সব বই আমি পড়েছি। আপনার নাটক সিনেমাগুলোও আমি দেখেছি। আমি কি আপনার সাথে দেখা করতে পারি?

তোমার কণ্ঠ শুনেতো মনে হচ্ছে পোলাপান, কোন ক্লাসে পড়ো? আমি ইন্টারমিডিয়েট ২য় বর্ষে পড়ি

এই ছেলে তুমি ফোন রাখো, পড়তে বসো। মন দিয়ে পড়াশোনা করো। আমার সাথে দেখা করলে গ্রাজুয়েশন শেষ করে দেখা করবে।

হুমায়ূন আহমেদ স্যার ফোন রেখে দিলেন। আমি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আমি কার সাথে কথা বললাম? তাঁর সাথে যার বই পড়তে পড়তে কল্পনার রাজ্যে ঘোরাফেরা করি, চোখের সামনে দেখতে পাই ‘ময়ূরাক্ষী’ নদী, ভালো মহিলা দেখলেই ‘দেবী’ ডেকে ফেলি মনের অজান্তেই, স্নিগ্ধ মেয়ে দেখলেই মনে হয় এইতো ‘রূপা’।

আমি তো হার মানবার ছেলে নই, অন্ধভক্ত বলে কথা। স্যারের সাথে তো দেখা করতেই হবে। জানতে পারলাম তাঁর বাসা ধানমন্ডির দখিন হাওয়ায়, আর আমার বাসাও ধানমন্ডিতে। একদিন চলে গেলাম দখিন হাওয়ায়। কিন্তু দারোয়ান আমাকে ঢুকতে দিলো না। এরপর অনেকদিন গিয়েছি কিন্তু দারোয়ান ঢুকতে দেয় না। একদিন আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো। দিনটি ছিলো ২০০৭ সনের ১৩ নভেম্বর, হুমায়ূন আহমেদ স্যারের জন্মদিন। ঐদিন গেলাম আবার স্যারের বাসায়। কী আশ্চর্য, এবার দেখি দারোয়ান আটকালো না। আমি স্যারের ড্রইংরুমে বসে মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখলাম বাংলা সাহিত্যের নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদকে, নির্মাণের মহান কারিগর হুমায়ূন আহমেদ যার বই কেনার জন্য বইমেলায় যেতাম, মায়ের কাছে আবদার করতাম।

ঐদিন স্যার আর মেহের আফরোজ শাওনের বড় সন্তান একই রকমের পাঞ্জাবি পড়েছিলেন গোলাপী রঙের। আমি স্যারকে গিয়ে বলি, আমি কি আপনার সাথে একটা ফটো তুলতে পারি?

অবশ্যই পারো। আসো আমার পাশে বসো।

আমি ঘোরের মধ্যে আছি, আমি স্যারকে ঘেঁষে বসে আছি। শাওন আপা সবাইকে খালি গলায় গান শোনালেন। কী মধুর তাঁর কণ্ঠ। ড্রইংরুম ভর্তি অসংখ্য তারকার সয়লাব। জীবনে প্রথমবার এতো তারকা একসাথে দেখলাম। আনন্দের লিলুয়া বাতাস আমার গায়ে লাগছিলো। ইমদাদুল হক মিলন, ফারুক আহমেদ, ড. এজাজ আরো কত মানুষই না ছিলেন। কেক খেলাম স্যারের জন্মদিনের। সবাই যখন স্যারকে ঘিরে বসে আছে, স্যারের গল্প শুনছে তখন আমি একটা কোনায় গিয়ে চিরকুট লিখলাম।

তাতে লেখা ছিলো-

স্যার আমি আপনার নাটকে অভিনয় করতে চাই। আমাকে একটু সুযোগ করে দেন স্যার। প্লিজ।....এটা আমার মোবাইল নাম্বার। ...মিতুল। এই চিরকুটটা টেবিলে রাখা একটি বইয়ের ভিতরে গুঁজে আমি বের হয়ে গেলাম।

ফের একদিন হুমায়ূন আহমেদ স্যারের বাসার ল্যান্ডফোনে কল করলাম। ধরলেন কেউ একজন, তাকে বললাম-আমি হুমায়ূন স্যারের সঙ্গে কথা বলবো, তিনি কি আছেন?

স্যার এসে ফোন রিসিভ করলেন। বিরক্তির স্বরে বললেন- কে?

স্যার, আমি মিতুল। কোন মিতুল?

ঐদিন আপনার জন্মদিনে এসেছিলাম আপনার বাসায়, একটা চিরকুট রেখে গিয়েছিলাম।

ওহ..তুমি সেই ছেলেটা। আচ্ছা তুমি কী চাও বলোতো? এই বয়সে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হয়, তা না করে নাটকে সুযোগ পাবার জন্যে দৌঁড়াচ্ছো।

স্যার, আমি অভিনয় আর পড়াশোনা দু’টোই একসাথে করতে পারবো। আপনি আমাকে একটা সুযোগ দিবেন প্লিজ। আমি অনেক দৌঁড়াচ্ছি কিন্তু কোন লাইনঘাট খুঁজে পাচ্ছি না। মিডিয়াতে আমার চৌদ্দগোষ্ঠীতেও কেউ নেই।

আচ্ছা শোনো, অভিনয়ের সুযোগ পাবার আশায় আমাকে আর ফোন দিও না, তোমার কাছে কি খাতা কলম আছে? একটা নাম্বার লেখো।

...হুম। এটা আমার সহকারী পরিচালক জুয়েল রানার নাম্বার। তুমি এরপর থেকে জুয়েল রানাকে ফোন করবে। আমার যে ফ্ল্যাটে এসেছিলে তুমি, সেটার পাশের ফ্ল্যাটটিই আমার অফিস। সেখানে জুয়েল রানাকে পাবে। ঠিক আছে রাখো।

স্যার ফোন রেখে দিলেন, আর আমি অবাক হচ্ছি এইভেবে যে আরেকটি রাস্তা খুলে গেলো আমার অভিনয়ের সুযোগ পাবার। তিনি হলেন জুয়েল রানা।

একদিন আমি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের প্রধান সহকারী পরিচালক জুয়েল রানার মোবাইল নাম্বারে ফোন করলাম । তাকে বললাম আপনার এই নাম্বারটি স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদ স্যার আমাকে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি যেন আপনার সাথে দেখা করি। জুয়েল রানা আমাকে অফিসে আসতে বলেন। আমি গেলাম কোন এক সন্ধ্যায় তার অফিসে। তিনি রুক্ষভাবে আমার সাথে কথা বলেন। অভিনয়ের পরীক্ষা নেন।

একটা সাদা কাগজ ধরিয়ে বলেন, মনে করো এটা একটা চিঠি। তোমার বাবার চিঠি। তুমি শহরে থাকো। আর বাবা থাকেন গ্রামে। বাবা গ্রাম থেকে তোমাকে চিঠি লিখেছেন। এখন তুমি আবেগ নিয়ে চিঠিটা পড়ো। আমি খুব আবেগ দিয়েই চিঠিটা পড়লাম কয়েকবার। কোনবারই জুয়েল রানার মনপুত হয় না। উনি বকা দেন। খুব বকা দেন।

বলেন, অভিনয় তোমাকে দিয়ে হবে না। বাসায় যাও, পড়তে বসো। ঠিকমতো পড়াশোনা করে চাকরি করো। তুমি কখনো অভিনেতা হতে পারবে না।

আমি তার কথা শুনে খুব কাঁদি উনার সামনেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। কথা জড়িয়ে আসে। চোখের পানি আর নাকের পানি এক হয়ে আসে আমার। উনি একজনকে ডেকে আমার জন্যে একগ্লাস পানি আনান, আমাকে সেই পানি খেতে বলেন। আমি পানি খেয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে প্রতিজ্ঞা করি, একদিন অভিনেতা হয়ে দেখাবোই।

২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাস। তখন সিটিসেল মোবাইল ব্যবহার করতাম। একদিন আমার নাম্বারে ফোন আসে এক সিনিয়র অভিনেতার যিনি হুমায়ূন আহমেদের নাটকের নিয়মিত শিল্পী। তিনি জানালেন, আজ নুহাশ পল্লীতে যেতে পারবে? শুনেছি সেখানে নতুন শিল্পীদের অডিশন হবে। স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদ নিজে উপস্থিত থেকে অডিশন নিবেন। তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নুহাশ পল্লীতে যাও। এই অভিনেতার নাম্বার ম্যানেজ করে তাকে প্রায়ই ফোন করে বিরক্ত করতাম আর বলতাম নুহাশ পল্লীতে অডিশন কবে হবে, সেই খবরটা আমাকে জানাবেন প্লিজ। তিনি জানিয়েছেন খবরটা, এর জন্যে আমি কৃতজ্ঞ। আমি ধানমন্ডি থাকি, বয়স মাত্র ২০ বছর। ঢাকার বাইরে একা কোথাও যেতে দেননি মা, কোন রাস্তাঘাট চিনি না। পকেটে ১০০ টাকা ছিলো, ফোন পাবার সঙ্গে সঙ্গে নুহাশ পল্লীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম এক কাপড়েই। রক্ত হিম হয়ে আসছে, আজ আমার অডিশন। গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যাওয়া মাত্র আমার টাকা শেষ। একটা ভ্যানগাড়ি যাচ্ছে নুহাশপল্লীতে, আমি শুনতে পাচ্ছি। অথচ আমার কাছে ভাড়া নেই। উত্তেজনায় মা-বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসতে ভুলে গেলাম। কী লজ্জা।

ঠিক এমন সময় ফর্সা চেহারার ছোটখাটো একজন আপু ভ্যানগাড়িওয়ালাকে বললেন, নুহাশপল্লী যাবে।

আমি তার কাছে এগিয়ে এসে বলি, আমি নুহাশ পল্লী যাবো। আপনি কি আমাকে লিফট দিবেন?

তিনি মাথা নাড়িয়ে বসতে বললেন। তিনিও জানালেন আজ হুমায়ূন আহমেদের নাটকে অডিশন টেস্টের জন্যে যাচ্ছেন। মেয়েটি আমার থেকে বয়সে ৫/৬ বছরের বড় হবে। আমি তাকে আপুই ডাকলাম। তার নাম ‘রিমু খন্দকার’। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী প্রিন্সেস টিনা খানের মেয়ে তিনি। আমাকে ছোটভাইয়ের মতো খুব স্নেহ করতে লাগলেন। বললেন রাতে একসাথেই ফিরবেন, সেই ভাড়াটাও তিনি দেবেন।

আমি আর রিমু আপু নুহাশ পল্লীতে ঢোকা মাত্রই মুগ্ধ হলাম। এতো সুন্দর জায়গা। চারিদিকে হরেক রকমের গাছগাছালি। দেখলাম আমার আর রিমু আপুর মতো অনেকেই এসেছে অডিশন দিতে। আমরা ঘাবড়ে গেলাম।

নুহাশপল্লীর বসার ঘরে হুমায়ূন আহমেদ স্যারকে ঘিরে মাটিতে বসে আছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মাজনুন মিজান, মেহের আফরোজ শাওন, চ্যালেঞ্জার সহ অনেকেই। সবার মাঝখানে নিচু পায়ার ছোট্ট টেবিল। আমি হুমায়ূন স্যারকে সালাম দিলাম। তিনি আমার অডিশন নিবেন। আমার বুক ধকধক করছে, কান গরম হয়ে আসছে।

তিনি বলেন, তোমার অডিশনের সাবজেক্ট হলো- ধরো তুমি গ্রামের ছেলে। ঘাসভর্তি খোলা মাঠ দিয়ে তুমি দৌড়িয়ে আসতেছো। হঠাৎ পায়ে কাঁটা বিঁধলো। তখন এক্সপ্রেশন কেমন হবে, সেটা অভিনয় করে দেখাও।

আমি স্যারের কথামতো অভিনয় করে দেখালাম। যখন অভিনয় করছিলাম কোথায় থেকে দৈবশক্তি ভর করলো আমার শরীরে। আমার একটুও লজ্জা করছিলোনা। দিব্যি অভিনয় করে দেখালাম।

তখন স্যার বলেন, বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করো। আজকেই অডিশনের রেজাল্ট দিবো সবারটা। যদি অডিশনে পাশ করো তাহলে আজকে তুমি অভিনয় করতে পারবে আমার ‘নুরুদ্দিন স্বর্ণপদক’ নাটকে।

আমি বাইরে এসে আল্লাহর নাম জপতে লাগলাম। আমি কি পারবো অডিশনে পাশ করতে? আমার শরীর টেনশনে অবশ হয়ে আসছে।

হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি, আহম্মেদ ফারুক এবং রিমু খন্দকার। স্যার আমাদের এই ৩ জনকেই ডেকে পাঠিয়েছেন। স্যার বললেন, শোন, তোমরা ৩ জনই অডিশনে পাশ করেছো। আজকে রাতেই শুটিং। প্রথমে বড় বড় চরিত্র দিতে পারবো না। আপাতত ছোট ছোট চরিত্রে আমার নাটকে ঢুকো, আস্তে আস্তে বড় বড় চরিত্র পাবে।

স্যারের অডিশনে পাশ করেছি, আমি ভুল শুনলাম নাতো? আজকেই শুটিং? আমি নুহাশ চলচ্চিত্রে সুযোগ পেয়েছি? তাও আবার স্যার নিজে ডিরেকশন দিবেন? মাথার উপর দিয়ে আনন্দমাখা প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিলো।

এরপর স্যার আমাদের ৩ জনকে বুঝালেন আমাদের চরিত্রগুলো সম্পর্কে। আমার চরিত্রটি বাড়ির কাজের ছেলের। একটি মাত্র দৃশ্য। ২টি সংলাপ। একটি সংলাপ এমন, ‘চাক্কু দেখান কি জন্যে?’, আরেকটি সংলাপ হলো, ‘দিরং মানে কী?’

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চ্যানেল আই’র জন্যে নাটকটি স্যার নির্মাণ করছেন। শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া এই দুইজনকে রূপক অর্থে আনা হয়েছে নাটকটিতে, একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন চ্যালেঞ্জার এবং অন্য আরেকটি চরিত্রে অভিনয় করছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। আমি চ্যালেঞ্জারের বাসার কাজের ছেলে। অন্য এলাকার কিছু ছেলেরা চ্যালেঞ্জার সাহেবকে ফুলের মালা পড়াতে এসেছেন। তারা আমাকে দেখে মনে করেন আমিই চ্যালেঞ্জার। আমার গলায় ফুলের মালা দিতে নেয়। এমন একটা দৃশ্য। আমার সহশিল্পী ছিলেন, মাজনুন মিজান, মাসুদ আখন্দ এবং জুয়েল রানা।

সব ঠিক ছিলো কিন্তু বাধ সাধলো আমার পোষাকে। আমি বাসা থেকে এক কাপড়ে বের হয়েছি। জিন্স প্যান্ট আর টি-শার্ট। তখন হুমায়ূন আহমেদ স্যার- তাঁর নুহাশ পল্লীর এক কর্মচারীকে ডেকে বলেন, তোমার শার্টটা খুলে ছেলেটাকে দাও। আর আহম্মেদ ফারুককে বলেন, তোমার লুঙ্গিটা ছেলেটাকে দাও। চকচকে লাল শার্ট এবং সবুজ লুঙ্গি পড়ালেও আমাকে কাজের ছেলের মতো লাগছিলো না। এরপর হুমায়ূন আহমেদ স্যার নিজ হাতে তেল, চিরুনি দিয়ে আমার চুলে সিঁথি করে আঁচড়িয়ে দিলেন। একদম বোকা বোকা লুক চলে এসেছিলো। এরপর স্যার, মনিটরে চোখ রাখলেন। আর আমি সংলাপ বললাম। ‘কি জন্যে’ সংলাপ না বলে পরপর ২ বার আমি ‘কিসের জন্যে’ বলেছিলাম।

স্যার বললেন, এরপরের বার যদি ভুল করো তাহলে গোবর মুখে দিয়ে দিবো ছেলে।

এরপর আমি ঠিক করে সংলাপ বললাম। স্যার আদরমাথা কণ্ঠে বললেন, যাও রাতে খেয়ে নাও।

এই একটি মাত্র দৃশ্যে অভিনয় করে আমি নুহাশ চলচ্চিত্রের খামে ৫শ’ টাকার একটা নোট পেলাম। অভিনয় করে প্রথমবার অর্থ উপার্জন করলাম। নাটকটির নাম ছিলো ‘নুরুদ্দিন স্বর্ণপদক’। নাটকটি চ্যানেল আই’তে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রচার হয়েছিলো, এখনো ইউটিউবে পাওয়া যায়। ছোট্ট এই চরিত্রটি, ৫শ’ টাকা শিল্পী সম্মানী সবই অমূল্য। আমার প্রথম নাটকের শুরুটা হুমায়ূন আহমেদ স্যারের হাত ধরেই, এইতো আমার সান্ত্বনা।

শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ স্যার। খুব মিস করি আপনাকে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত