ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে: ইরফান সাজ্জাদ

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:২৫

দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে: ইরফান সাজ্জাদ
ইরফান সাজ্জাদ

৭ বছর আগে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আয়োজিত পুরুষদের জন্য রিয়েলিটি-শো ‘ইমামী ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডসাম- দ্য আলটিমেট ম্যান’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন ইরফান সাজ্জাদ। যিনি এই মুহূর্তে তুমুল ব্যস্ত অভিনেতা। মাসের প্রায় ত্রিশ দিনই নাটকের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় তাকে। সম্প্রতি একটি নাটকের শুটিং সেটে বাংলাদেশ জার্নালের বিনোদন প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন তিনি। তার ব্যস্ততা, কাজ ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সেই আলাপনের চুম্বকাংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো...

বাংলাদেশ জার্নাল: প্রথমেই শো-অফ সুন্দরী নাটকটি সম্পর্কে জানতে চাই...

ইরফান সাজ্জাদ: যেই কাজটা করছি, সেটা একটা রম-কম গল্প। হাস্যরস-কমেডির একটা ব্যাপার আছে। গল্প কাহিনি যদি একটু সার সংক্ষেপে বলি, এখন আমরা সবকিছুতেই শো-অফ করতে পছন্দ করি খুব। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে আমরা একটা ট্রেন্ডের মধ্যে ঢুকে গিয়েছি। এই মাধ্যমটা থাকার কারণে আমরা সবাই শো-অফের মাধ্যমে নিজেকে চেনাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ফেসবুকে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতার বার্তা দেয় বা অনেক বড় বড় কথা বলি, কিন্তু দিনশেষে আমরা নিজেরাই সেগুলো মানি না। রম-কম গল্প হলেও গল্পের শেষে এরকম একটা মেসেজ রয়েছে। এই প্রেক্ষাপট নিয়েই নাটকের প্লট।

বাংলাদেশ জার্নাল: রম-কম বা কমেডির নামে এখনকার সময়ে বেশিরভাগ নাটকে ভাঁড়ামো-ই হচ্ছে বেশি। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

ইরফান সাজ্জাদ: হ্যাঁ। এটা সত্যি, অনেক সময় এটা দেখেছি। এটা হয়েছেও, আমি স্বীকার করি। তবে এই জিনিসটা হওয়া উচিত না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গল্পের প্রয়োজনে হয়তো ভাঁড়ামোটা হয়, কিন্তু সেটা সবসময় হওয়া উচিত না। আর কমেডি করাটাও কিন্তু সহজ বিষয় না। এটাও কিন্তু অভিনয়ের একটা অংশ। এখন যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, মানুষকে হাসাতে গিয়ে আমরা যে অতিরিক্ত ভাঁড়ামো করে ফেলছি, সেটা নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত। এটা নিয়ন্ত্রণে না আসলে দর্শকরা একটা সময় বিরক্ত হয়ে যাবে। সেটা করা যাবে না। এরজন্য অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা বা প্রযোজক সবাইকে বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করা উচিত। কারণ দিনশেষে আমরা দর্শকদের জন্যই কাজ করি।

নাটকের দৃশ্যে ইরফান সাজ্জাদ

বাংলাদেশ জার্নাল: এখনকার সময়ে নাটকের নাম নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠে। যেখানে বলা হয়ে থাকে, নাটক কিংবা সিনেমার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব। সেখানে বেডসিন, শোবার ঘর, রুম ডেটিং, আবাসিক হোটেল; এই ধরণের নাটকগুলো সমাজকে কী বার্তা দিচ্ছে বলে মনে হয় আপনার?

ইরফান সাজ্জাদ: আমার কাছে মনে হয়, গল্প অনুযায়ী সেই নাটকের নাম হওয়া উচিত। কিন্তু শুধুমাত্র একটা ট্রেন্ডের কারণে আমি যেকোনো একটা নাম সিলেক্ট করলাম; যেটা নাটকের গল্পের সাথে কোনো সামঞ্জস্যই নেই; এটা আসলে অনেকসময় হয় দর্শক ধরার জন্য। কিন্তু শুধুমাত্র কিছু দর্শক ধরার জন্য এরকম ট্রেন্ডে চলাটা খুবই দুঃখজনক। সত্যি বলতে আমাদের নাটকের নামে অনেক ঝামেলা আছে। কিছু ট্রেন্ডি নাম ধরতে গিয়ে আমরা আসলে এমন কিছু নাম সিলেক্ট করে বসি যেটা আসলে ষ্ট্যাণ্ডার্ড না, নাটকের গল্পটাকে রিপ্রেজেন্ট করে না! ভিউ পাবার জন্য আসলে আমরা এই কাজটা করে থাকি!

আবার অনেক সময় এটাও হয় যে, নাটকটা টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে এক নামে কিন্তু সেটাই আবার ইউটিউবে আপলোড হয়েছে অন্য কোনো একটা ট্রেন্ডি নাম দিয়ে। এটা কিন্তু দর্শককে একটা ভুল বার্তা দিচ্ছে। দর্শকদের সাথে এক ধরণের প্রতারণা করা হচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে একটা সময় দর্শক হারিয়ে যেতে থাকবে আর নাটকের নামে নাট সিটকাবে! যেটা আসলে কখনওই হওয়া উচিত না। দর্শকদেরকে আমাদের শালীন বিষয়ের প্রতি অভ্যস্ত করতে হবে। তখন কিন্তু তারা ভালো নামের এবং ভালো কাজগুলো দেখতেই বাধ্য হবে। এটার জন্য অবশ্যই পরিচালক এবং প্রযোজকদের দায়িত্ব নিতে হবে।

আবার এটাও বলছি না যে, নাটক থেকে শিক্ষা নিয়েই দর্শকদের বড় হতে হবে! নাটক কিন্তু একটা বিনোদনের মাধ্যম। কিন্তু সেটার মধ্যে শালীনতা থাকতে হবে।

ইরফান সাজ্জাদের পোশাকঃ ইমারস

বাংলাদেশ জার্নাল: টেলিভিশনের পর এখন সবাই অনলাইন প্লাটফর্মের দিকেই ঝুঁকছে বেশী। বাংলাদেশের নতুন একটা প্লাটফর্ম যুক্ত হলো ওটিটি (ওভার দ্য টপ)। আমাদের দেশের সব তারকা-ই এখন এই মাধ্যমে ঝুঁকছে। নতুন এই প্লাটফর্ম নিয়ে আপনার ভাষ্য জানতে চাই...

ইরফান সাজ্জাদ: প্রথম কথা হলো, এখন সবকিছুই সময়ের সাথে সাথে আপডেটেড হচ্ছে। আর যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের সবাইকে চলতে হয়। ওটিটি প্লাটফর্ম-টা অবশ্যই ভালো কিছু। এটাকে আমাদের ঠিকমত কাজে লাগাতে হবে। কারণ এখন একমাত্র এটাই একটা জায়গা, যেখানে একজন ভালো নির্মাতা কিংবা শিল্পী কাজ করার স্বপ্ন দেখে। ইউটিউব সহজলভ্য হয়ে যাওয়ার কারণে আর টেলিভিশনে অনেক বেশি চ্যানেল হয়ে যাওয়ার কারণে বাজেট নিয়ে একটা সমস্যায় পড়তে হয়। হাতেগুণা কয়েকজন নির্মাতা কিংবা প্রোডাকশন ছাড়া বেশিরভাগ নির্মাতাই কিন্তু সঠিক বাজেট পাননা। যার কারণে অনেক ভালো গল্পও সুন্দরভাবে প্রেজেন্টেশন করা যায় না। সেই ধরাবাঁধা বাজেটের মধ্যেই কোনোরকমে কাজটা শেষ করতে হয়। সেদিক থেকে ওটিটি প্লাটফর্মগুলো তাদের কাজের জন্য বিশাল পরিমাণ বাজেট রাখছে, বিশাল আয়োজন রাখছে!

আবার কিছু ইউটিউব চ্যানেলও ভালো বাজেতে কাজ করাচ্ছে কিন্তু সেটাও কিন্তু হাতেগুণা। আর এভাবে কিন্তু একটা ইন্ডাস্ট্রি চলতে পারে না। করোনার কারণে সিনেমাহলগুলো বন্ধ ছিলো। সেই পরিস্থিতি সামলিয়ে কবে আবার আমরা ঘুরে দাঁড়াবো, তা আমরা কেউই বলতে পারি না। এরমধ্যে একটা আমাদের সুযোগ, সেটা হলো ওটিটি প্লাটফর্ম। কিন্তু আমাদের দেশের একটাই সমস্যা, যখন নতুন কিছু একটা আসে তখন সেটাকে ইউজ করে আমরা নষ্ট করে ফেলি। আমি বলবো, যারা আসলে ওটিটি প্লাটফর্ম নিয়ে কাজ করছেন তারা যেন এই বিষয়টা খেয়াল রাখে। এই জায়গাটা যেন এটলিস্ট নষ্ট না হয়। যেহেতু জি ফাইভ, হইচই, বিঞ্জ একটা ঠিকঠাক বাজেট দিচ্ছে, ঐ বাজেট অনুযায়ী কাজ করে মানটা ধরে রাখা উচিত আমাদের। আমরা যদি সো-কলড নাটকের মতোই ওটিটিতে কাজ করি তাহলে এই প্লাটফর্মটাও নষ্ট হতে বেশিদিন সময় লাগবে না। তাই আমাদের এই জায়গাটা নষ্ট করা উচিত নয়।

আমার কাছে মনে হয়, ওটিটি-টা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কারণ, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এটা নাটক এবং সিনেমা দুটোকে ব্যালেন্স করছে (যারা আসলে ভালো কাজ করতে চায়)। তাই এই জায়গাটার প্রতি আমাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং ঠিকঠাকভাবে এগুনো উচিত, যতদিন পর্যন্ত না আমাদের চলচ্চিত্রের জায়গাটা ঠিকঠাক না হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল: ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ভালোবাসা এমনই হয়’ সিনেমার পর আপনাকে আর বড় পর্দায় পাওয়া যায়নি কেন?

ইরফান সাজ্জাদ: সিনেমা হচ্ছে অনেক বড় একটা ক্যানভাস। সিনেমা যদি সিনেমার মতো না হয় তাহলে সেটা করে তো লাভ নেই। নাটক করছি, মানুষ সহজেই দেখতে পারছে। আমি ‘ভালোবাসা এমনই হয়’ সিনেমাটা করেছিলাম ২০১৪ সালে। তখন আমার কাছে মনে হয়েছে আমার অভিনয়ে আরও দক্ষতা প্রয়োজন, নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। আমি সময় নিয়েছিলাম। আমার কাছে এখন মনে হয় যে, আলহামদুলিল্লাহ! আমি এখন প্রস্তুত। আমি পারবো। যেহেতু মাঝখানে অনেক বড় গ্যাপ গিয়েছে সেহেতু ভালো কিছু গল্প নিয়ে কাজ করতে চাই সত্যি বলতে। ইতিমধ্যে খুবই চমৎকার গল্প নিয়ে কথা চলছে। আশা করছি নতুন বছরে সুখবর দিতে পারবো। ২০২১ সালে আমার একটাই ইচ্ছা, আমি ৩ টা গল্পের সিনেমা করবো, যেগুলো দিয়ে আমি দর্শকদের কাছে নিজেকে চেনাতে পারবো। যার জন্য এতটা সময় অপেক্ষা করেছি, আশা করি সেটা পূরণ হবে শিগগিরই।

ছবিতে ইরফান সাজ্জাদ

বাংলাদেশ জার্নাল: টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে গিয়ে সিন্ডিকেটের মুখে পড়েছেন কখনও?

ইরফান সাজ্জাদ: সত্যি বলতে সিন্ডিকেট বিষয়টা যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে, শুধু শোবিজেই না; সবখানেই। সিন্ডিকেট কিন্তু করা হয় উন্নতির জন্য, এটাকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু কিছু মানুষ সেটার অপব্যবহার করে; যেটা খুবই অন্যায়। যুগ যুগ ধরে যত আন্দোলন হয়েছে তা কিন্তু সিন্ডিকেট করেই হয়েছে, কারণ সিন্ডিকেট ছাড়া আন্দোলন করা সম্ভব না। পৃথিবীর ভালো ভালো আন্দোলন বা কাজ কিন্তু সিন্ডিকেটের মধ্যেই হয়েছে। এটা নিয়ে আমি নেগেটিভ কিছু দেখিনা।

আর জুটি প্রথা বিষয়টা আসলে যে যেভাবে দেখে আর কি! যে যেভাবে কাজ করতে পছন্দ করে! আমি এটাকে নেগেটিভলি দেখি না। দেখা গেলো, মাসে ১৫ টা নাটকের কাজ করি সেখানে আমার সহশিল্পী ৯/১০ জন থাকে। কোন একজনের সাথে আমার অনেক কাজ নেই বললেই চলে। আমি সেটা মেইনটেইন করি না, পারিও না। আর আমি ডিরেক্টর কমান্ডে কাজ করি। পরিচালকের গল্পে যাকে ভালো লাগে তাকে নিয়েই আমার সঙ্গে কাজ করে। আর একটা কথায় যদি বলি, জুটি বিষয়টা আসলে একেকজনের কমফোর্ট জোন।

আর সমস্যার কথা যদি বলি, যখন একটা পপুলার ক্যাটাগরি একটা জুটি কন্টিনিউ একসাথে কাজ করে এবং তারা নিজেরা নিজেরাই কাজ করে, এর বাইরে তারা কাজ করে না, তখন এটার ইমপ্যাক্ট কিন্তু বাকি শিল্পীদের উপর পড়ে। কারণ সবাই চাইবে ওদের সাথে কাজ করতে। কিন্তু অনেক সময় সেটা হয়ে উঠে না, যার কারণে অনেক সময় কাজ হাতছাড়া হয়ে যায় বা সেটা আর হয় না।

আমি এখন সেসব না ভেবে স্বার্থপরের মতো নিজের কাজটা দেখি শুধু। নিজের অভিনয়ের কতটা ইম্প্রোভ হচ্ছে। আরও কিভাবে ভালো করা যায়, সেটা ভাবি। যেহেতু আমার কাজ অভিনয় করা, আমি শুধু অভিনয়টা নিয়েই ভাবি।

বাংলাদেশ জার্নাল/আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত