ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রতিযোগিতা না থাকলে ভালো’র আগ্রহটা নষ্ট হয়ে যাবে: মেহ্জাবীন

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২১, ১৪:৪৭  
আপডেট :
 ২৭ মে ২০২১, ১৬:২০

প্রতিযোগিতা না থাকলে ভালো’র আগ্রহটা নষ্ট হয়ে যাবে: মেহ্জাবীন
সুপারস্টার মেহ্জাবীন চৌধুরী

ঈদের আমেজ এবং বিরতি কাটিয়ে প্রায় দুই মাস পর কাজে ফিরেছেন ছোট পর্দার সুপারস্টার মেহ্জাবীন চৌধুরী। শেষ করেছেন ‘চিরকাল আজ’ নামের একটি নাটকের শুটিং। এরইমধ্যে গড়েছেন নতুন রেকর্ডও। প্রথম বাংলাদেশী অভিনেত্রী হিসেবে ২ কোটি ভিউজের হ্যাট্রিক করেছেন, ছুঁয়েছেন নতুন মাইলফলক। অবশ্য এটা তার জন্য নতুন কিছু নয়, প্রতিনিয়তই রেকর্ড গড়ছেন আবার নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙছেন দর্শক সেরা এ অভিনেত্রী। ঈদের পর কাজে ফেরা ও সমসাময়িক বিষয়ে নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সেই আলাপচারিতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো...

বেশ লম্বা বিরতির পর কাজে ফিরলেন। সবকিছু মিলিয়ে কেমন অনুভব করছেন?

হ্যাঁ, প্রায় ৫৪ দিন পর কাজে ফিরেছি। ফেরার পর তো মনে হচ্ছিলো যে, অভিনয় মনে হয় ভুলে গিয়েছি। যেহেতু আমরা অভিনয়শিল্পী, অভিনয়টাই করতে হয় তাই কাজের বাইরে থাকলে একটু অস্বস্তি বোধ হয়। কাজের মানুষ কাজে ফিরলেই প্রশান্তি অনুভব করি। তবে খুব একটা খারাপ সময় গিয়েছে তা বলবো না, বাসায় ভালোই সময় কেটেছে।

একের পর এক রেকর্ড গড়ছেন আপনি। নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙছেন। বিষয়টি ভাবলে কেমন লাগে?

দর্শকরা যদি এটাকে রেকর্ড মনে তাহলে এটা রেকর্ডই, আর নাহলে না। যেহেতু এখন ভিউজও একটা ফ্যাক্ট, সেদিক থেকে এটাও কিন্তু এখন কাউন্টেবল। তবে আমি এসব রেকর্ড নিয়ে ভাবি না। আমার কাছে কাজটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করি কাজ নিয়ে। সেই কাজটা যখন দর্শকরা গ্রহণ করে তখনই ভালো লাগাটা বেড়ে যায়। রেকর্ড নিয়েও যে দর্শক কিংবা আমার ভক্তদের মাতামাতি; সেতাও বেশ উপভোগ করি। ভালোই লাগে। সবশেষ কথা কিন্তু এটাই যে, কাজ ভালো হলে সেটা দর্শক পর্যন্ত পৌঁছাবেই। তারা যে আমাকে পছন্দ করেন, আমার কাজ দেখেন এটাই বেশ ভালো লাগার। তাদের জন্যই কিন্তু উৎসাহ পাই, ভালো কিছু করার। এক কথায় যদি বলি, অনুপ্রাণিত হই।

এই প্রজন্মের অভিনেত্রীদের মধ্যে প্রায় সবাইকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন। নিজস্ব অভিনয় স্বকীয়তা, মেধা, পরিশ্রম, অধ্যাবসায়ের ফলেই আজকে অভিনেত্রীদের মধ্যে শীর্ষ স্থানে অবস্থান করছেন। এই অনুভূতিটাকে কীভাবে ব্যক্ত করবেন?

সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছি, এটা আমি বলবো না। বরংচ, সবাইকে নিয়ে আমি সামনে এগিয়ে যেতে চাই। একটা কাজে কিন্তু শুধু একজনই থাকে না, সঙ্গে অনেকেই জড়িত থাকে। আমার সহশিল্পী, পরিচালক, অন্যান্য শিল্পী, ক্যামেরাম্যান থেকে শুরু করে যারাই জড়িত। একটা কাজ যদি সাকসেস হয় তাহলে এটার ক্রেডিট কিন্তু আমার একার না, টিমের সবার। সবার এই প্রশংসাটা প্রাপ্য। আমি সবাইকে নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। একা এগিয়ে যেতে চাই না।

জুটি প্রথা নিয়ে বিভিন্ন সময়েই নানা মুখরোচক কথা শুনতে পাওয়া যায়। একই জুটি বারবার দেখতে দেখতে দর্শক অনেকসময় বিরক্তি প্রকাশ করেন। একই জুটির সঙ্গে বারবার কাজ করতে গিয়ে কি কখনো একঘেয়েমি কাজ করে ?

এই প্রশ্নের ক্ষেত্রে আমি আমার একটা অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি শেয়ার করতে চাই। সেটা হলো, আমি যখন কোনো সিনেমা দেখতে বসি তখন শুধু সিনেমাটির চরিত্রগুলোকে দেখি। অনেক অনেক সিনেমা দেখার মাধ্যমে অনেক চরিত্র সম্পর্কে ধারণা পাই। আমি এটা কখনোই দেখি না যে, চরিত্রগুলো কে করেছে! আমি একদমই নিউট্রালভাবে কাজ দেখতে পছন্দ করি। আর যারা চরিত্রগুলো প্লে করেছেন তাদের সেই চরিত্রগুলো আমার জন্য নতুন কিনা, আমি সেটা দেখার চেষ্টা করি।

আর জুটির কথা যদি বলি, এটা কিন্তু দর্শকরাই তৈরি করে দেয়। একটা জুটির কাজ যখন দর্শক প্রশংসা পায় তখন কিন্তু পরিচালক বা প্রযোজকরা সেই জুটিকে নিয়েই কাজ করতে চান। দর্শকরা চান বলেই তারা সেটা করেন। আর আমার ক্ষেত্রে বলবো, আমার কাছে যখন কোনো গল্পের স্ক্রিপ্ট আসে তখন আমার বিপরীতে কে কাজ করবে; সেটা দেখিনা। আমি দেখি, সেই গল্পে আমার চরিত্রটা কি এবং সেটা আমার জন্য নতুন কিনা। আমি শুধু আমার চরিত্রটা বাছাই করি। যখন চরিত্রটা পছন্দ হয় তখন সেটাকে এপ্রুভ করি। সেখানে আমি অপূর্ব ভাইয়া, নিশো ভাইয়া, তাহসান ভাইয়া, জোভান থেকে শুরু করে অনেকের সঙ্গেই কাজ করেছি এবং করছিও।

আমি দর্শকদের একটা অনুরোধ করতে চাই। সেটা হলো, আপনারা যখন কোনো কাজ দেখবেন সেখানে চরিত্রগুলো দেখার চেষ্টা করবেন। সেই চরিত্রে একজন অভিনয়শিল্পী কেমন অভিনয় করেছেন, সেটা নিয়ে মন্তব্য করবেন। ব্যক্তি আর অভিনয়শিল্পী; দুটোকে এক করে ফেলবেন না। ব্যক্তি নয়, অভিনয়শিল্পীর পর্দার চরিত্রগুলোকে দেখুন। কোনো কাজকে মূল্যায়ন করতে হবে কাজ দিয়ে, ব্যক্তি দিয়ে নয়। কাজটা কেমন হয়েছে সেটা নিয়ে মন্তব্য করুন। আর কাজটা কে করেছে সেটা নিয়ে মন্তব্য না করাটাই ভালো।

আমি সবসময় চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে পছন্দ করি। তার মানে যে এই না যে আমার সব কাজই গুরুগম্ভীর হবে। সেখানে কিছু কমেডিও থাকবে। আর কমেডি হলেই যে সেখানে চ্যালেঞ্জের কিছু নেই, সেটাও কিন্তু ভুল। সেখানেও অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। পৃথিবীতে কোনো মানুষকে হাসানোটা সবচেয়ে কঠিন কাজ। আমি আমার প্রতিটা কাজে চরিত্রগুলোকে আলাদা করার শতভাগ চেষ্টা করি। দর্শকরা হয়তো আমাকে দেখেছে কিন্তু আমার চরিত্রগুলোকে দেখছে না। যার কারণে তারা হয়তো বা এমনটা বলেন। সেক্ষেত্রে একটাই কথা, আমাকে না দেখে, পর্দায় আমার চরিত্রগুলোকে দেখুন। আমি ২০টা কাজ করলে সেখানে যদি ১০টা ভিন্ন কাজ করতে পারি, সেটা তো খারাপ নয়। আমি আমার চেষ্টাটা করে যাচ্ছি। দর্শক যদি আমাকে নতুন কোনো জুটির সাথে দেখতে চান, তাহলে তার সাথেই আমার বেশি কাজ হবে।

মেহ্জাবীন চৌধুরী এখন নাটকের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। একই জায়গায় কাজ করতে গিয়ে কখনো কাউকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে হয় কি?

একদিক থেকে হিসেবে করলে কিন্তু সবাই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। আমার যিনি সহশিল্পী থাকেন তিনি যদি আমার চেয়েও ভালো করেন, তাহলে তিনিও কিন্তু আমার প্রতিদ্বন্দ্বী। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করলে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, আর না করলে ‘না’। আমি মনে করি একজন অভিনয়শিল্পীর ভালো কাজের ক্ষুধা থাকা উচিত, একটা লক্ষ্য থাকা উচিত যে আমি ভাল কাজ করবো আর ‘নাম্বার ওয়ান’ পজিশনে যাবো। কাজের জায়গাটাতে যদি একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা না থাকে তাহলে কাজের জায়গাটা বিকশিত হবে না। প্রতিযোগিতা না থাকলে ভালো কিছু করার আগ্রহটা নষ্ট হয়ে যাবে। সেদিক থেকে অবশ্যই একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা উচিত।

বাংলাদেশ জার্নাল/আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত