ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

পরিচালকদের চ্যালেঞ্জ নিতে আমি প্রস্তুত : মেহ্জাবীন চৌধুরী

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২১, ১৭:২২  
আপডেট :
 ১৪ আগস্ট ২০২১, ১৮:১৪

পরিচালকদের চ্যালেঞ্জ নিতে আমি প্রস্তুত : মেহ্জাবীন চৌধুরী
লাক্সতারকা মেহ্জাবীন চৌধুরী

ঈদের আমেজ শেষ আরও আগেই। তবে এখনও নাটকের মধ্যমণিদের অনেকেই শুটিংয়ে ফেরেননি। সেই তালিকায় রয়েছেন হালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহ্জাবীন চৌধুরীও। এবার ঈদে প্রায় এক ডজনের মতো নাটকে হাজির হয়েছেন এই লাস্যময়ী, সঙ্গে দু’হাত ভরে কুড়িয়েছেন প্রশংসাও। ভার্সেটাইল এই অভিনেত্রী এবারের ঈদেও ছিলেন অনন্য-দুর্দান্ত। সম্প্রতি নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এ লাক্সতারকা। পাঠকদের জন্য থাকছে সেই আলাপচারিতার চুম্বকাংশ।

  • শুটিংয়ে ফিরছেন কবে?

এখনও কোনো কিছু ঠিক করিনি। দেড় মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে কাজ যে করি না। কাজ তো করতেই হবে। কিছু কথাবার্তা হয়েছে, শিগগিরই কাজ শুরু করবো। লকডাউনের কারণে ঈদের আগে প্রায় ৮-১০টি কাজ বাতিল করতে হয়েছে। তারমধ্যে কিছু কাজ ছিলো একদম ঈদকে ঘিরেই, সেগুলো হয়তো আগামী ঈদে করতে হবে। এর বাইরে কয়েকটা কাজ আছে যেগুলো সামনে করবো। কিন্তু কোনগুলো দিয়ে শুরু করব সেটাই এখনও বুঝতেছি না। আর করোনার কথা যদি বলি, যেভাবে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে; ভয় লাগে খুব। কারণ কাজ করতে গিয়ে যদি টিমের একজনও আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে সেটাও তো খারাপই হবে। আগে সুস্থ থাকাটা জরুরি, তারপর কাজ।

তবে এখন যেহেতু সামনে কোনো উপলক্ষ নেই, তাই খুব একটা প্রেশার নিচ্ছি না। একটু ধীরে-সুস্থেই কাজ করতে চাই। একদম টানা কাজ করবো না এখন। আর এখন করতেই যে হবে এমনও কিন্তু কথা নেই। যদি পছন্দ হয় ও ভালো গল্প পাই তাহলে সেগুলোই করবো।

  • এবারের ঈদে তুমুল আলোচনায় ছিলেন আপনি। দর্শকের মতে এবার ঈদের সেরা ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেত্রীও আপনি। জানতে চাইবো, ঈদের সময়টা কেমন কেটেছে?

আলহামদুলিল্লাহ! কাজের দিক থেকে খুবই ভালো গিয়েছে। ঈদে তো খুব বেশি একটা কাজ করতেও পারিনি। তারপরও যে কয়েকটা কাজ করেছি, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। লকডাউনে তো শুটিং করতে পারিনি। আরও কয়েকটা ভালো স্ক্রিপ্ট ছিলো, সেগুলো করতে পারলে অনেক বেশি ভালো হতো। লকডাউনের আগে কয়েকটা কাজ গুছিয়ে করতে পেরেছি। সে কাজগুলো থেকে যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। আমি অনেক বেশি খুশি। এবার সব ধরণের কাজই করেছি। সবগুলো কাজই দর্শক পছন্দ করেছেন তার মধ্যে ‘চিরকাল আজ’ তো অন্যতম।

‘চিরকাল আজ’ প্রসঙ্গে কী বলবো! দর্শক রেসপন্স তো খুবই খুবই ভালো। গত কয়েক বছরে অনেকগুলো কাজের জন্যই প্রশংসা পেয়েছি কিন্তু এবারের মতো পাইনি। এবার অনেক বেশিই পেয়েছি। দর্শকরা তো আছেনই, সঙ্গে আমার সহকর্মী, সিনিয়র শিল্পী, নির্মাতারা বিভিন্ন স্ট্যাটাসে, মেসেজে কিংবা ফোনে যেভাবে প্রশংসা করেছেন কাজটি দেখার পর; সেটা সত্যি অনেক বড় পাওয়া। সবাই দেখার পর অভিনয় নিয়ে নানা প্রশংসাযুক্ত মন্তব্য করেছেন। সেদিক থেকে অনেক দিন এমন প্রশংসা শুনেছি। এই কাজটা আমার ক্যারিয়ারের জন্য সেরা ও মাইলফলক হয়ে থাকবে। সব মিলিয়ে বলবো এবার ঈদটা অনেক বেশি ভালো কেটেছে আমার।

  • ‘চিরকাল আজ’ কাজটি এত বেশি দর্শক সাড়া পাওয়ার কারণ কী বলে মনে করেন আপনি?

একজন শিল্পীর সব কাজই যে ভালো হবে তা কিন্তু নয়। অনেকাংশে সেটা অসম্ভব একটা ব্যাপার। অনেকগুলো কাজের মধ্যে কিছু কাজ দর্শকের ভালো লাগে আবার কিছু লাগে না। এটার মধ্য দিয়েই আমাদেরকে যেতে হয়। দিনশেষে আমি চাই দর্শক কাজগুলো দেখুক, তারপর মন্তব্য করুক।

‘চিরকাল আজ’-এ যে গল্পটা নিয়ে আমরা কাজ করেছি সেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। একদিক থেকে গল্পটা একদম নতুন ছিলো, কারণ এই গল্পটা নিয়ে এর আগে কোনো কাজ হয়নি। এখানে নতুন বলতে রোগটা সম্পর্কে দর্শকরা নতুন করে জানতে পারলো। দর্শকদেরকে নতুন কিছু দিলে তারা সেটা সবসময়ই গ্রহণ করে। আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি ভালো করার। অনেকে যেহেতু অভিনয়েরও প্রশংসা করছেন, তার মানে কিছুটা হলেও সন্তষ্ট করতে পেরেছি। এটাও একটা কারণ হতে পারে।

অভিনয় যেহেতু করছি তাই আমার সবসময় চেষ্টা থাকে ভালো কিছু করার। সবসময় ভালো স্ক্রিপ্টও আসে না, আবার আসলেও অনেক সময় সেটা বিভিন্ন কারণে করা যায় না। বাজেট স্বল্পতা, লোকেশনসহ আরও অনেক সমস্যা থাকে। অনেক কিছু ফেইস করতে হয়। সব প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েই আমাদেরকে অভিনয় করে যেতে হয়।

  • পারিবারিক গল্প কিংবা গল্পপ্রধান কাজের সংখ্যা মাঝে অনেক কমে গিয়েছিলো। এবার ঈদে সেগুলোর প্রত্যাবর্তন দেখা গিয়েছে বেশ। দর্শক সাড়াও পেয়েছে অনেক। আপনার কাছে কী মনে হয়?

হ্যাঁ, এবার অনেক পারিবারিক আবহের এবং গল্পপ্রধান কাজ হয়েছে। সবার সবগুলো কাজই দর্শক গ্রহণ করেছে। এটা কিন্তু ভালো দিক যে এই বিষয়টা এখন আবার ট্রেন্ডিংয়ে চলে এসেছে। আমি মনে করি, সব ধরণের কাজই থাকা উচিত। কারণ- আমাদের দর্শক অনেক। সব দর্শকের রুচিও একরকম না। কেউ কমেডি পছন্দ করে, কেউ রোমান্টিক বা কেউ থ্রিলার বা পারিবারিক। এটা থাকাটাই স্বাভাবিক। আমি একজন শিল্পী হিসেবে তখনই সফল হবো যখন আমি দর্শকদেরকে সব ধরণের কাজ দিতে পারবো। এইজন্য আমার চেষ্টা থাকে সব ধরণের কাজ করার। আমি খুব সুন্দরভাবে আমার কাজের ছকটা আঁকি যেন দর্শকদের যে চাওয়াটা থাকে সেটা যেন পূরণ করতে পারি।

কাজ ভালো করার পর যখন সেটা দর্শক পর্যন্ত পৌঁছে যায়, আমি তখনই সফল। আবার একটা কাজ ভালো কাজ করলাম কিন্তু সেটা দর্শক পর্যন্ত পৌঁছালো না, তার মানে আমি কোনো না কোনো দিক থেকে ব্যর্থ অর্থাৎ সফল হতে পারিনি।

  • তাহলে কি এখন আপনাকে গল্পপ্রধান কাজেই বেশি দেখা যাবে?

বিষয়টা এমন না। এখন যে কাজটা থেকে এত বেশি সাড়া পেয়েছি তার মানে এই না যে আমি সব এই ধরণের গল্পেই কাজ করবো। এই চিন্তাটা আমি কখনোই করি না। আমি মিশ্রণটা রাখতে চাই, সব ধরণের সব মেজাজের কাজই করবো। দর্শকদের মধ্যে যার যেরকম রুচি বা পছন্দ সে সেটা বেছে নেবে যে, কোনটা দেখবে। কাজ যেমন ভালো হতে হবে তেমনি রুচিশীলও হতে হবে। তাহলে দর্শকরাও সেদিকে আগ্রহী হবে। রুচিশীল কাজ দিয়েই দর্শকের রুচি পরিবর্তন করতে হবে।

আমি সবসময় শুধু একটা চিন্তাই করি, একটা ভালো স্ক্রিপ্ট; একটা ভালো চরিত্র যেন আমি পাই। এই ক্ষুধাটা আমার সবসময়ের। একটা ভালো চরিত্র পেলে আমি কী করতে পারি সেটা আমি আমার কাজ দিয়ে দেখাবো। পরিচালকদের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আছি। আমি চাই, উনারা আমাকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ দিক; তারপর দেখুক আমি কী করতে পারি! আমি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি খুব। নতুন গল্প, নতুন চরিত্র বা নতুন চ্যালেঞ্জ আমাকে দেওয়া হোক; তারপর আমিও দেখি সেই চরিত্রটা নিয়ে আমি কতটুকু ডেলিভারি দিতে পারি! এই চাওয়াটা আমার সবসময় থাকবে।

  • টেলিভিশন, ইউটিউবের পর এখন দর্শক ওটিটি-মুখী হচ্ছে। অনেক তারকাই এ মাধ্যমে কাজ করেছেন এবং করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আপনাকে দেখা যায়নি কেন?

ওটিটি প্লাটফর্মে কাজ করতে চাই না, বিষয়টা এমন না। আর এটার নির্দিষ্ট কোনো কারণও নেই। সবাই-ই কিন্তু চায়। এই প্লাটফর্মটাতে দুর্দান্ত কিছু কাজ করতে। যেহেতু এই মাধ্যমটার যাত্রা শুরু হয়েছে সবে মাত্র। আর অল্প কিছু কন্টেন্ট হয়েছে। এখনও অনেক সময় আছে কাজ করার। আর সত্যি বলতে, ঐরকম কোনো গল্প বা চরিত্রের প্রস্তাব এখনও পাইনি। যেগুলো পেয়েছি সেগুলো আমার কাছে এক্সট্রা অর্ডিনারি কিংবা অসাধারণ কিছু মনে হয়নি। আমি তো চাইবো আমার চরিত্রটা যেন দুর্দান্ত কিছু হোক এবং আলাদা কিছু হোক। যখন সেরকম কিছু পাবো তখন হয়তো করবো। আমি এখনও অপেক্ষায় আছি, একটা সুন্দর চরিত্রের; সেটা যেকোনো কিছু (জনরা) হতে পারে বা যেকোনো প্লাটফর্মের হতে পারে। সেটা সিনেমার জন্যও হতে পারে। যেটা দেখে দর্শকরা বলবে যে, মেহজাবীন দুর্দান্ত করেছে। আমি সেরকম গল্প ও চরিত্রের অপেক্ষায় আছি।

  • সবশেষ প্রশ্ন, সিনেমাতে কি আদৌ দেখা যাবে আপনাকে?

আমি আসলে কখনো নিজেকে কোনো বিষয়ে ফোর্স বা জোর করি না। কোনো কাজ নিয়ে আমার সন্দেহ হলে সেই কাজটা আমি কখনোই করি না। তাড়াহুড়ো জিনিসটা কখনোই করতে চাই না। এমন কিছু করতে চাই না, যেটা করার পর মনে হবে যে কাজটা ভুল করেছি। এই যে ‘চিরকাল আজ’ নাটকটা করলাম, এটা নিয়ে কিন্তু আমার তেমন টার্গেট ছিলো না। তারপরও কিন্তু সেটা থেকে যা পাওয়ার আমি পেয়ে গিয়েছি। ঠিক তেমনই- সবসময় পরিকল্পনা করে সবকিছু হয় না। যখন যেটা ঠিক মনে হবে তখন সেটা অবশ্যই করবো। আমি তো গল্প আর চরিত্রের জন্য মুখিয়ে থাকি, সেরকম কিছু পেলে সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করে দেবো। সেটা ওটিটির জন্য হোক বা সিনেমা হলের জন্যই হোক।

বাংলাদেশ জার্নাল/আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত