ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

সবার চোখে-মুখে খুশি দেখে নিজেরই ভালো লাগছে: তটিনী

  ইমরুল নূর

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২২, ১৬:৪৪  
আপডেট :
 ২৬ জুন ২০২২, ১৭:২২

‘অভিনয় করার সাহসটাই পেয়েছি ‘কল্পনা’ থেকে’

সুহাসিনী তাকেই বলে, যার হাসি সুন্দর। নন্দিত অভিনেত্রী অপি করিমের হাসিতে মুগ্ধ হন নি, এমন প্রজন্ম হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। তার পরের প্রজন্মে অবশ্যই মেহজাবীন চৌধুরী। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রজন্মে তাদেরকে সুহাসিনী-ই বলা হয়। এই দুইয়ের পর ইন্ডাস্ট্রিতে আরও এক সুহাসিনীর দেখা মিলেছে, যার নাম তানজিম সাইয়ারা তটিনী। তরুণ এই তুর্কী ঈদে দেখা দেবেন ‘সুহাসিনী’ রূপেই।

বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও এখন তার মনযোগ পুরোটাই অভিনয়ে। সদ্য মুক্তি পেয়েছে চরকি নিবেদিত অ্যান্থলোজি সিনেমা ‘এই মুহূর্তে’। সিনেমাটির তিন গল্পের একটি ‘কল্পনা’র কেন্দ্রীয় চরিত্রে অর্থাৎ নাম ভুমিকায় অভিনয় করেছেন তটিনী। ‘হাসিনা: অ্যা ডটার্স টেল’ খ্যাত নির্মাতা পিপলু খানের পরিচালনায় নন্দিত অভিনয়শিল্পী সারা যাকের, জাহিদ হাসানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন, হয়েছেন প্রশংসিতও।

কাজটির রেসপন্স পাওয়া প্রসঙ্গে অভিনেত্রীর ভাষ্য, এটা তো মাত্রই বের হলো। মানুষজন দেখছে। তবে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি আমি। অনেকেই প্রশংসা করছেন, শুনে খুব আনন্দ লাগছে। এমনকি আমার পরিবারের সবাইও কাজটি দেখে অনেক প্রশংসা করেছে। এমনিতে আমার কাজ তো তারা দেখেই কিন্তু এই কাজটির প্রতি আমার কষ্ট এবং ডেডিকেশন তারা দেখেছেন, যার কারণে প্রকাশ্যে আসার পর সবাই মিলে একসঙ্গে ‘কল্পনা’ দেখেছে এবং তাদের কাছে খুব ভালো লেগেছে।

‘কল্পনা’য় যুক্ত হওয়া এবং কাজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তটিনী বলেন, ‘‘কল্পনা’ চরিত্রটির জন্য গত বছর আমাকে অডিশনে ডাকা হয়েছিলো। এমন গুণী নির্মাতার প্রজেক্ট এবং এত সুন্দর একটা গল্প; সবকিছু শুনে আমি রীতিমত অবাকই হয়েছিলাম। তখন আমার শুধু মনে হয়েছে এই চরিত্রটির জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ ডেডিকেশন দেবো। আমি এই চরিত্রটার জন্য তিনবার স্ক্রিনটেস্ট দিয়েছি। দুইবার দেওয়ার পরও যখন দেখি হচ্ছিলো না তখন এই চরিত্রটা নিয়ে আমার ডেডিকেশন লেভেলটা পিপলু ভাইয়াকে বোঝানোর পর তৃতীয়বারে চূড়ান্ত হয়েছি। আমার মনে হয়েছে এটা ভাগ্য, নাহলে আমার চেয়েও ভাল কেউ হয়তো এই সুযোগটা পেতো। এত ট্যালেন্টেড একটা টিম, গুণী শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করা এত অল্প সময়ে, আমার ভাগ্য ফেভারে ছিলো যার কারণে আমি সুযোগটা পেয়েছি। এত বড় সুযোগ পেয়ে আমি চাইনি টিমের কাউকে হতাশ করতে, কারণ পুরো টিমের সবাই অনেক মেধাবী।

বলতে গেলে তারা আমাকে নিয়ে ঝুঁকি নিয়েছে, কারণ আমার আগের কাজের কোন রেফারেন্স নেই তেমন, একদম নতুন একটা মেয়ে। টিমের প্রায় সবাই আমাকে নিয়ে একটি বেশি চিন্তিত ছিলেন যে, আমি আদৌ কাজটি ঠিকভাবে করতে পারবো কিনা! কারণ, আমার চরিত্রটাই যদি পড়ে যায় তাহলে গল্পটাই পড়ে যাবে। চিন্তার কারণও ছিলো, এই কাজটা শুরুর আগে আমি গ্রুমিংয়ের তেমন কোন সুযোগ পাইনি। আমাকে যেদিন সিলেক্ট করা হয়েছে তার পরদিনই আমাকে শুটিং শুরু করতে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা কেউ কল্পনাও হয়তো করে নাই যে, আমি ভালো করবো! শট শেষ হওয়ার পর পিপলু ভাইয়া এবং টিমের সবার চোখে মুখে আমি খুশিটা দেখতে পেরেছি। তখন মনে হলো যে, আমি হয়তো কিছুটা করতে পেরেছি। এখানকার প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গাতে সেরা। জাহিদ হাসান আংকেল, সারা যাকের আন্টি তাদের সঙ্গে পর্দা শেয়ার করা মানেই অনেক অভিজ্ঞতা অর্জিত হওয়া। জাহিদ আংকেল পুরো শুটিং জুড়ে আমাকে মেয়ের মত ট্রিট করেছে, এক কথায় অসাধারণ।

প্রত্যেকটা কাজের পেছনেই শিল্পীদের যথেষ্ঠ ডেডিকেশন থাকে কিন্তু এই কাজটার প্রতি আমাদের ডেডিকেশন ছিল অনেক বেশি। পুরো টিমটাই ছিল অনেক সাপোর্টিভ যার কারণে বেশ সুন্দরভাবে কাজটি করতে পেরেছি। সত্যি বলতে আমার অভিনয়ের প্রতি কিংবা নাটক করার প্রতি সাহসটা আসছে এই প্রজেক্টটা করার পর থেকে। পিপলু ভাইয়ার কাজ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। কিভাবে ডায়লগ ডেলিভারি দিতে হয়, কিভাবে এক্সপ্রেশন দিতে হয়; সবকিছুই।’

আসছে ঈদের দুটি নাটকে অভিনয় করেছেন তটিনী। একটিতে তাকে দেখা যাবে আফরান নিশোর বিপরীতে এবং অন্যটিতে ফারহান আহমেদ জোভানের বিপরীতে। এছাড়াও ঈদের আগে আরও একটি কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

তটিনী বলেন, ‘এরমধ্যে বেশকিছু কাজের প্রস্তাবই এসেছে কিন্তু আমি দুটি নাটকের কাজই শেষ করেছি। মিজানুর রহমান আরিয়ান ভাইয়ার কাজ আমার সবসময় পছন্দের, আমি চেয়েছিলাম উনার একটা কাজ করতে। যদিও গত বছরই করার কথা ছিল কিন্তু কোন কারণে সেটা আর হয়ে উঠেনি। উনি এবং উনার পুরো টিম খুব সুন্দরভাবে আমাকে স্বাগতম জানিয়েছে। আমি নতুন হলেও আমাকে যথেষ্ঠ সম্মান দিয়েছেন তারা। আরিয়ান ভাইয়া এবং সহশিল্পী জোভান ভাইয়া দুজনেই ভীষণ সাপোর্টিভ ছিলেন।

আর একটা কাজ করেছি নিশো ভাইয়ার সঙ্গে। উনার সঙ্গে কাজ করা মানেই হচ্ছে অন্য লেবেলের মজা। উনি এমন একজন শিল্পী যে কিনা তার সহশিল্পী থেকে অভিনয়টা বের করে নিয়ে আসে। বলে না যে, সিন জমিয়ে ফেলা; ঠিক তেমন। উনি এত ভালো ডিরেকশন দিতে পারে, আমার জানা ছিলো। উনার অবজারভেশন, ইম্প্রোভাইজ এত ভালো করেন, যার কারণে কাজটা আসলে ভালো দাঁড়ায়।’

‘এত অল্প সময়েই এত গুণী মানুষদের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি, এরজন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হয়। দর্শকরাও পছন্দ করছেন, ভালোবাসা দিচ্ছেন। আমার মনে হয় আমাকে আরও অনেক বেশি চরিত্র নিয়ে কাজ করতে হবে। তাছাড়া নাটকের যেমন বিভিন্ন জনরা রয়েছে- রোমান্টিক, থ্রিলার, ড্রামা; এসবগুলোতে কাজ করতে হবে। রোমান্টিক চরিত্রে নিজেকে খাপ খাওয়াতে আমার খুব কষ্ট হয়। আরিয়ান ভাইয়ার নাটকে চরিত্রটি প্লে করতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। আমি কেন জানি নিজেকে পোর্ট্রে করতে পারি না। দুঃখী কিংবা এগ্রেসিভ চরিত্রগুলো আমি খুব বেশি রিলেট করতে পারি। আশা করি, কাজ করতে করতে ঠিক হয়ে যাবে।

এখন পর্যন্ত যতটুকু ভালোবাসা পেয়েছি দর্শকের, সেই ভালোবাসাটুকু নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চাই। এই জিনিসটা আমি ধরে রাখতে চাই আর অনেক কষ্ট করতে চাই। আগামী পাঁচ কিংবা দশ বছর যদি ইন্ডাস্ট্রিতে থাকি তাহলে যত যা-ই হোক না কেন, আমি নিজে যেন কখনও পরিবর্তন না হই, এটাই চাওয়া।’- যোগ করেন ‘হাউজ নং ৯৬’ খ্যাত এ অভিনেত্রী।

মাত্র ৩ বছরের ক্যারিয়ার, এরমধ্যে তটিনী কাজ করেছেন বহু বিজ্ঞাপনে। প্যারাসুট, সিটি ব্যাংক, বাটারফ্লাই, বিকাশ, নেরোলাক, এয়ারটেল, পন্ডস, রবি, ইস্পাহানি বিস্কুট, ইস্পাহানি মির্জাপুর চাসহ অনেক বিজ্ঞাপনেই দেখা গিয়েছে তাকে। এরপর সৈয়দ শাওকী পরিচালিত ‘তাকদীর’ ওয়েব ফিল্মে প্রথম অভিনয় করেন। এরপরই যুক্ত হন ধারাবাহিক ‘হাউজ নং ৯৬’ নাটকে। নাটকটি দিয়ে দর্শকমহলে দারুণ পরিচিতি পান।

বাংলাদেশ জার্নাল/আইএন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত