যে কারণে সংসার ভাঙে সাইফ-অমৃতার
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩, ১৬:৫৫ আপডেট : ২৪ মে ২০২৩, ২২:৪০

ফিল্মি দুনিয়ার তারকাদের ঘর ভাঙার খবর খুবই সাধারণ বিষয়। তবে তাদের ঘর ভাঙার কারণ জানার আগ্রহ থাকে ভক্তদের। তেমনই এক তারকাজুটি সাইফ আলী খান ও অমৃতা সিং। বহু বছর আগেই তাদের সংসার ভাঙলেও নেপথ্যের কারণ জানার কৌতূহল আছের অনেকের।
এক দিকে দুই তারকার বয়সের পার্থক্য। অন্য দিকে কেরিয়ারে আয়ের পার্থক্য। তবুও সব বাধা পেরিয়ে ইন্ডাস্ট্রির উঠতি অভিনেতা সাইফ আলি খানের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েছিলেন সেই সময়কার সুপারস্টার অমৃতা সিং।
নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় সাইফ এবং অমৃতা বিয়ে করেন। কিন্তু তাদের বিবাহিত জীবন সুখের ছিল না। ১৩ বছর এক ছাদের তলায় থাকার পর বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন তারা। কিন্তু তাদের প্রেমকাহিনি সিনেমার চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না।
জনপ্রিয় লেখক খুশবন্ত সিংয়ের পরিবারের কন্যা হলেন অমৃতা। আশির দশকে কেরিয়ারের প্রথম ছবিতে অভিনয় করেই হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন অমৃতা। ১৯৮৩ সালে ‘বেতাব’ ছবিতে সানি দেলের সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে।
আশির দশক থেকেই একের পর এক হিট ছবিতে পর পর কাজ করে যাচ্ছিলেন অমৃতা। অমৃতা যে সময় তার কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত, সেই সময় ব্রিটেনে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন সাইফ। অভিনয়ের প্রতি তখন যদিও বিশেষ আগ্রহ ছিল না তার।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, সাইফের এক আত্মীয় তাকে বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। ব্রিটেনে পড়াশোনা শেষ করে বিজ্ঞাপনের কাজে মুম্বই যান সাইফ। কোনো কারণে শুটিং না হলেও সাইফ স্থির করে ফেলেন যে তিনি অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়বেন।
রাহুল রাওয়াইল পরিচালিত ‘বেখুদি’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান সাইফ। কাজলের বিপরীতে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি। কয়েকটি দৃশ্যের শুটিংও শেষ করে ফেলেন সাইফ। সেই সেটেই সাইফের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় অমৃতার।
রাহুলের প্রিয় বান্ধবী ছিলেন অমৃতা। তাই ‘বেখুদি’ ছবির সেটে তাকে ডাকেন রাহুল। সেটে উপস্থিত সকল তারকা অমৃতার সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সাইফও বাদ ছিলেন না। ছবি তোলার সময় অমৃতার সঙ্গে সামান্য কথোপকথনও হয় সাইফের।
অমৃতাকে প্রথম দেখার পর তার প্রেমে পড়ে যান সাইফ। কী ভাবে অমৃতার সঙ্গে আবার দেখা করা যাবে তার উপায় খুঁজতে থাকেন নবাবপুত্র। শেষমেশ অমৃতার বাড়ির ফোন নম্বর জোগাড় করেন অভিনেতা। দেরি না করে অমৃতাকে ফোনও করে ফেলেন সাইফ।
অমৃতাকে ডেটে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন সাইফ। নৈশভোজের জন্য বাইরে যেতে চান বলেও জানান সাইফ। কিন্তু সাইফের প্রস্তাবে রাজি হননি নায়িকা। তিনি বলেন, আমি বাড়ির বাইরে কোথাও নৈশভোজ করি না। তুমি চাইলে আমার বাড়ি আসতে পারো।
অমৃতার প্রস্তাব ফেরাতে পারেননি সাইফ। বাইরে কোথাও নয়, বরং নায়িকার বাড়িতেই ডেট করেন দুই তারকা। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে অমৃতা জানিয়েছিলেন, ডেট করতে গিয়ে সাইফ নাকি টানা দু’দিন অমৃতার বাড়িতেই ছিলেন। দুজনের কেউ নাকি চার দেয়ালের বাইরে যাননি।
দু’দিন পর শুটিংয়ের কাজ চলে আসায় অমৃতার বাড়ি থেকে খানিকটা বাধ্য হয়ে বার হন সাইফ। দুই তারকা একে অপরকে ছাড়া আর এক মুহূর্তও থাকতে পারছিলেন না। ইন্ডাস্ট্রিতে কেরিয়ার শুরুর আগেই অমৃতার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সাইফ।
অমৃতার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর পরেই সাইফের জীবনে বাধা আসে। ‘বেখুদি’ ছবি থেকে বাদ পড়েন তিনি। সাইফের বিরুদ্ধে ছবি নির্মাতাদের অভিযোগ, সাইফ নাকি ‘পেশাদার’ ছিলেন না। প্রয়োজনে ফোন করলেও পাওয়া যেত না অভিনেতাকে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, সাইফ নাকি নিজের শখ পূরণ করার জন্য ‘বেখুদি’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন। ছবির শুটিং নাকি কানাডায় হওয়ার কথা ছিল। সাইফ কানাডা ঘুরতে চেয়েছিলেন বলেই ছবির প্রস্তাবে রাজি হন। এই কথা পরিচালকের কানে আসায় সাইফকে ছবি থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়।
সাইফের পরিবর্তে ‘বেখুদি’ ছবিতে কাজলের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় কমল সাদানাকে। তবে কেরিয়ারের প্রথম ছবি থেকে বাদ পড়ায় কোনো ক্ষোভ ছিল না সাইফের। বরং তিনি কৃতজ্ঞ বোধ করছিলেন। কারণ এই ছবির সেটেই অমৃতার সঙ্গে তার প্রথম আলাপ হয়।
১৯৯৩ সালে ‘পরম্পরা’ ছবিতে অভিনয় করে সাইফ তার কেরিয়ার শুরু করেন। ২০০১ সাল পর্যন্ত ৪০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে। কিন্তু তার মধ্যে কোনো ছবি ফ্লপ তো কোনো ছবি বহু তারকাখচিত। সাইফের ঝুলিতে হিন্দি ছবির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও কেরিয়ারে মাইলফলক গড়ে তুলতে পারছিলেন না তিনি।
১৯৯১ সালে অমৃতা যখন তার কেরিয়ারে সাফল্যের চূড়ায়, সেই সময় সাইফকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু সাইফ অভিনেতা হিসাবে সফল হতে পারেননি তখনও। সাইফের প্রথম ছবি মুক্তির দু’বছর পর ১৯৯৫ সালে সাইফ এবং অমৃতার কন্যা সারা আলি খানের জন্ম হয়।
কেরিয়ারে এগিয়ে যেতে না পারলেও সাইফের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে মহিলাদের নাম জড়িয়ে পড়ত বলে বলিপাড়া সূত্রে খবর। এমনকি, অমৃতার সঙ্গে সম্পর্কে আসার আগে অনু আগরওয়াল এবং মুনমুন সেনের মতো বড় মাপের তারকাদের সঙ্গেও নাকি সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন সাইফ।
সাইফ এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তার উপার্জন কম হওয়ার কারণে দিনের পর দিন তাকে কড়া কথা শোনাতেন অমৃতা। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক বিষিয়ে যেতে থাকে। ২০০১ সালে ‘দিল চাহতা হ্যায়’ ছবিতে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সাইফ। একই বছর সাইফ এবং অমৃতার পুত্রসন্তান ইব্রাহিম আলি খানের জন্ম হয়।
তার পর ‘কাল হো না হো’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান সাইফ। সহ-অভিনেতা হিসাবে শাহরুখ খান থাকলেও সাইফের জন্য পর্দায় যথেষ্ট জায়গা ছিল। সাইফ এই ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয়ও করেছিলেন। তারপর আর কেরিয়ারে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি সাইফকে। একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পান তিনি।
কিন্তু অমৃতার সঙ্গে সাইফের ১৩ বছরের বিবাহিত জীবন সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়। ২০০৪ সালে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন দু’জনে। বিচ্ছেদের পর মডেল রোসা ক্যাটালানোর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সাইফ। সাইফ এবং রোসা কিছু দিন একত্রবাস করেন বলেও বলিপাড়া সূত্রে খবর।
তবে রোসার সঙ্গেও সম্পর্কে বেশি দিন টেকেনি সাইফের। এর পর বয়সে অনেক ছোট কারিনা কাপুরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সাইফ। ২০১২ সালে কারিনার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন অভিনেতা।
সাইফ এক পুরনো সাক্ষাৎকারে অমৃতার সঙ্গে বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছিলেন। তিনি জানান, পাঁচ কোটি টাকার চুক্তিতে অমৃতার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় সাইফের। বিচ্ছেদের পরেই আড়াই কোটি টাকা অমৃতার হাতে দেন তিনি। তার পর থেকে প্রতি মাসে এক লক্ষ টাকা করে দেয়ার চুক্তি হয়। যত দিন না পর্যন্ত সারা এবং ইব্রাহিম নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছেন, তত দিন সাইফকে প্রতি মাসে সমপরিমাণ টাকা দিয়ে যেতে হবে বলে চুক্তি হয়।
সাইফের দাবি, সম্পর্কে থাকাকালীন রোজ তার উপার্জন নিয়ে অমৃতার কটাক্ষের শিকার হতেন। এমনকি বিচ্ছেদের পর নাকি সারা এবং ইব্রাহিমের সঙ্গে সাইফকে দেখাও করতে দিতেন না অমৃতা।
বর্তমানে স্ত্রী কারিনা, দুই পুত্র তৈমুর এবং জহাঙ্গির এবং কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত সাইফ। সারা এবং ইব্রাহিমের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রয়েছে সাইফের। কিন্তু বিচ্ছেদের পর অমৃতার সঙ্গে অভিনেতার সম্পর্ক আর সহজ হয়নি।
বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে