ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

জন্মদিনে স্মরণ

তারকাদের চোখে হুমায়ুন ফরীদি

  বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩, ১৭:২৬  
আপডেট :
 ২৯ মে ২০২৩, ১৭:৩৯

তারকাদের চোখে হুমায়ুন ফরীদি
হুমায়ুন ফরীদি। ছবি: সংগৃহীত

অফুরান মুগ্ধতা কিংবা ভালোবাসা থেকে তাকে সবাই বলেন, অভিনয়ের প্রতিষ্ঠান। তিন ভুবনে, তিন দশকে অবিস্মরণীয় সাফল্য অর্জন করা হুমায়ুন ফরীদি শুধু একজন অভিনেতাই নন, একাধিক প্রজন্মের শিল্পীদের কাছে তিনি ‘অভিনয়ের পাঠশালা’। সিনেমা-নাটকে তিনি অভিনয়ের এমন এক বাগিচা গড়ে গেছেন, যেখানে বিচরণ করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্মিত হয়, উৎসাহ-অনুপ্রেরণা নেয়। হ্যাঁ, কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির কথাই বলা হচ্ছে।

আজ কিংবদন্তী এ অভিনেতার জন্মদিন। কিন্তু এগারো বছর আগেই তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। এখনো তার জন্মদিন কিংবা মৃত্যুদিন এলে চলচ্চিত্র কর্মী, ভক্তরা তাকে স্মরণ করেন শ্রদ্ধার সঙ্গে।

কিংবদন্তী এ অভিনেতার জন্মদিনে চলচিত্র জগতের অনেকে তাকে স্মরন করেছেন।

সোহেল রানা বলেছেন: হুমায়ুন ফরীদির মতো শিল্পী হারাতে পারেন না। হুমায়ুন ফরীদি সত্যিকারের অভিনেতা ছিলেন। তিনি একজন জাতশিল্পী। অভিনয় করতে পারলে তাকে অভিনেতা বলা হয়, কিন্তু সত্যি কথা হলো- অভিনয় করতে পারলেই অভিনেতা হওয়া যায় না। অভিনয় এত সহজ কাজ নয়। অনেক গুণ থাকতে হয় একজন অভিনেতার। আর সব গুণ হুমায়ুন ফরিদীর ছিল।

এজন্যই বলব হুমায়ুন ফরীদি একজন অভিনেতা, খুব বড় মাপের অভিনেতা। যাকে বলা হয়, শিল্পী। ফরীদি ছিলেন শিল্পী। অভিনেতা হয়তো হারিয়ে যায়, শিল্পী কখনো হারায় না। তিনিও হারাবেন না। তার মতো শিল্পী হারাতে পারেন না। তিনি বেঁচে থাকবেন তার অভিনয়ের জন্য।

সোহেল রানা বলেন, আসলে কারো অভাবই পূরণ হয় না। কিন্তু, ফরীদির অভাব আরও পূরণ হবে না। আগামী ২০-২৫ বছরেও ফরীদির অভাব পূরণ হবে না। এটা আমার মতামত। জেনে-শুনেই বলছি। মানুষকে সম্মান করতে জানতেন তিনি। এটি আমার খুব ভালো লাগত। আরেকটি বিষয় তার মধ্যে খুব ছিল, তা হচ্ছে- যেকোনো বিষয়ে জানতেন, খোঁজ-খবর রাখতেন। খুব পড়ালেখা করতেন, তার জ্ঞানের ভাণ্ডার ছিল সমৃদ্ধ। অজানাকে জানার বিষয়ে তার খুব আগ্রহ ছিল।

তিনি বলেন, আমরা ভীষণ ক্লোজ ছিলাম। ভীষণ সখ্যতা ছিল আমাদের। আজ তার জন্মদিন। এমন বিশেষ দিনে ফরীদিকে মনে পড়ছে। তার জন্য আমার ভালোবাসা। যেখানে আছেন শান্তিতে থাকুন।

তারিক আনাম খান বলেছেন: ফরীদি সবার থেকে আলাদা। আমার কাছে হুমায়ুন ফরীদি মানে অনেক কিছু। তার সঙ্গে যাদের সময় কাটানোর সুযোগ হয়েছে, শুধুই তারাই বলতে পারবে ফরীদি আসলে কী! তার বাস্তব চরিত্রে এমন একটি ম্যাজিক ছিল, আমাদের সবার মন মুগ্ধ হয়ে থাকত। তার কাছে থাকলেই আনন্দিত থাকতাম সবাই। আমার সঙ্গে ফরীদির অনেক অনেক স্মৃতি আছে। যেগুলো মনে পড়লে এখনও একা একা আমি মুচকি হাসি।

এর পর আমার চোখের কোণে জল চলে আসে। সব স্মৃতি বাদ দিয়ে একটি স্মৃতির কথা বলি। সেটি হলো ওর দায়িত্ববোধ। আমি আর ফরীদি একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলাম তৌকীর আহমেদের। চলচ্চিত্রটির নাম ‘জয়যাত্রা’। পর্দার বাইরে ফরীদি যে এতটা দায়িত্ববান একজন মানুষ, সেটি সেই সিনেমার শুটিংয়ে টের পেয়েছিলাম।

তার সম্পর্কে শুধু এইটুকই বলতে চাই, ফরীদির মতো এমন হৃদয় নিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রিতে এর আগে কেউ জন্মেছিল বলে আমার মনে পড়ে না। ভবিষ্যতেও তার মতো কেউ জন্মাবে কি না আমি জানি না। অভিনয়গুণ, বন্ধুত্ব, দায়িত্ববোধ এই জায়গাগুলোতে হুমায়ুন ফরীদি সবার থেকে আলাদা।

আফজাল হোসেন বলেছেন: ফরীদি আমাদের একটি গৌরব। দেশের আরও অনেক গৌরবগাঁথার মতো ফরীদিও একটি গৌরব। কিন্তু প্রচণ্ড ভালো এই অভিনেতাকে আমরা দুর্দান্ত সব কাজ করার মতো পরিবেশ দিতে পারিনি। হতাশ হওয়ার আগেই সে চলে গেছে। তাই ফরীদির মৃত্যু আমার কাছে বেদনার নয়, দুঃখের। আমি তখন মতিঝিল কলোনিতে থাকতাম। বন্ধুদের মধ্যে তখন শুধু আমিই উপার্জন করতাম। অনেক বন্ধুই এসে তখন আমার বাসায় থাকত।

একদিন রাত করে ফিরছি। দরজার কাছে আসতেই ঘরের ভেতর থেকে কাশির শব্দ পেলাম। বুঝতে পারলাম ফরীদি এসেছে। আমার পায়ের শব্দে ফরীদিও বুঝতে পেরেছে আমি আসছি। ঘরে ঢুকে দেখলাম ফরীদির মুখটা বিষণ্ন। বললাম,‘তোর কি মন খারাপ?’ ফরীদি আমাকে ছোট বারান্দায় নিয়ে গিয়ে ওর গল্প শুরু করল।

বলল, ওর সৎমা ওকে অনেক কষ্ট দেয়। ওর এসব ভালো লাগে না। এসব শুনে আমারও মন খারাপ। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি আর ওর মুখোমুখি হতে পারছি না, এমন একটা অবস্থা। বিষয়টা বুঝতে পেরে ফরীদি বলল, ‘ওগুলো সব তার বানানো গল্প।’ এমন অনেক স্মৃতি আছে তার সঙ্গে।

ঢাকা থিয়েটার করতে গিয়ে আমাদের পরিচয়। সেই থেকে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গভীর সম্পর্ক অটুট ছিল। ঢাকা থিয়েটার করার সময় কত দিন আমরা একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছি বেইলি রোডের নাটকপাড়ায়। সত্যি কথা বলতে ওর সঙ্গ ছিল দারুণ আনন্দের। ওর কথা শুনলে কেউ মন খারাপ করে থাকতে পারত না। পরিবেশটাই সুন্দর হয়ে উঠত। কী যেন একটা ম্যাজিক জানত ফরীদি!

শিমূল ইউসুফ বলেছেন: তার রক্তেই যেন অভিনয় ছিল। হুমায়ুন ফরীদি এক নক্ষত্রের নাম। ঠিক তেমনি একটি দীর্ঘশ্বাসেরও নাম। আমরা কেবল সহকর্মী ছিলাম না, পরস্পরের ভালো বন্ধুও ছিলাম। ব্যক্তি ফরীদিকে আমি ভাই হিসেবে, বন্ধু হিসেবে আপন করে নিয়েছিলাম। সৃষ্টি নিয়ে একই রকম ভাবনা, এক সঙ্গে দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়া, হাসি-গান-গল্প-আড্ডার মধ্য দিয়ে রক্তের সম্পর্কের ঊর্ধ্বে গিয়ে আত্মার সম্পর্কে পৌঁছেছিলাম আমরা।

মনে হতো, তিনি যেন আমার ঘরেরই একজন। মন চাইলে যেকোনো সময় বাসায় চলে আসতেন ফরীদি। এসেই বলতেন ‘কী রেঁধেছিস? ভাত দে, খিদা লাগছে।’ এই কথাগুলো এখনও কানে বাজে।

আপাতদৃষ্টিতে হুমায়ুন ফরীদি সবার কাছে একজন কীর্তিমান অভিনেতা। কিন্তু আমার বিশ্বাস, সে আরও অনেক কিছু আমাদের দিতে পারত। অনেক কিছুই তার করার বাকি ছিল। এটি আমার জন্য অনেক কষ্টের। তার মতো অভিনেতাকে আমরা ব্যবহার করতে পারলাম না। ফরীদি অসম্ভব রুচিশীল ও উদার মনের মানুষ ছিলেন। যাকে ভালোবাসতেন, তাকে মন দিয়েই ভালোবাসতেন। কোনো ভণিতা তার মধ্যে দেখিনি। রবীন্দ্রসংগীত, পুরোনো দিনের আধুনিক গানে অন্যরকম দখল ছিল।

নাটকের শো শেষ করে আমরা গলা ছেড়ে গাইতাম। ফরীদির প্রাণবন্ত গলা আসর মাতিয়ে রাখত। তার হাসিমাখা মুখটা বারবার মনে পড়ে। কোথাও ঘুরতে গেলে খুব মজা করত। মাঝেমধ্যে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটাত। আসলে ফরীদি ছিল এমনই মানুষ হিসেবে সাধারণ আর শিল্পী হিসেবে অসাধারণ। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পীর মৃত্যু নেই। সৃষ্টি দিয়ে আজীবনই থাকবেন স্মৃতিতে অমলিন।

ইয়ামিন হক ববি ফেসবুকে লিখেছেন: তিন ধরনের শিল্পী আছে পৃথিবীতে। ভালো শিল্পী, বিপদগ্রস্ত শিল্পী আর অশিল্পী। বিপদগ্রস্ত শিল্পী সবসময় মনে করে, এই বুঝি পড়ে গেলাম!...এখনকার শিল্পীরা ত্রস্ত। দৌড়াচ্ছে। এই দৌড়টা বন্ধ করে হেঁটে যাও। টাকার পেছনে না ছুটে ভালো অভিনয় করো। টাকা এমনিই আসবে।- হুমায়ুন ফরীদি

জন্মদিনে অনেক ভালোবাসা হে কিংবদন্তি। আপনার অভিনয় আমাদের জন্য শিক্ষা হয়ে থাকবে। জীবনকে দেখার চোখ ভিন্ন বলেই এমন অসামান্য অভিনয় করতে পারতেন। জন্মদিনে অনেক রঙিন বেলুন উড়িয়ে দিলাম আপনার ঠিকানায়। কারণ, আপনি খুব পছন্দ করতেন। জন্মদিনে অনেক ভালোবাসা হে কিংবদন্তি।

আরও পড়ুন: কিংবদন্তি হুমায়ুন ফরিদীর জন্মদিন আজ

বাংলাদেশ জার্নাল/জিকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত