চলচ্চিত্রে শাকিবের পথ চলার ২০ বছর
বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ মে ২০১৯, ১৫:২২ আপডেট : ২৮ মে ২০১৯, ১৫:৩২
সময়টা ১৯৯৯ সালের ২৮ মে, সারা দেশের প্রেক্ষাগৃহে নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। আর এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই নির্মাতা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের উপহার দেন নতুন এক নায়কের। তিনি আর কেউ নন, তিনি বর্তমান সময়ে ঢাকাই সিনেমায় রাজক্ত করা নায়ক শাকিব খান। দেখতে দেখতে চলচ্চিত্রে ২০ টি বছর পর করে দিলেন তিনি। নানা চাড়াই-উৎরাই পার হয়ে বাংলা সিনেমার আজ শীর্ষ নায়কের তখমা পেয়েছেন তিনি।
৬ ফুট উচ্চতার সুদর্শন মাসুন রানা যিনি কিনা পরবর্তীতে সিনেমায় এসে হয়েছেন শাকিব খান তিনি তার চলচ্চিত্র জীবনের যাত্রা শুরু করেন ‘সবাইতো সুখী হতে চায়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ছবিটিতে তার বিপরীতে ছিলেন নবাগতা কারিশমা শেখ। চলচ্চিত্রটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আফতাব খান টুলু। তবে তার এ ছবিটি মুক্তির আগেই মুক্তি পায় ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছবিটি।
‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছবিটিতে শাকিবের বিপরীতে ছিলেন অভিনয়শিল্পী মৌসুমীর ছোট বোন ইরিন জামান। দু'জনেরই এটি ছিল প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র। ছায়াছবি হিসেবে অনন্ত ভালোবাসা খুব একটা সফল না হলেও নায়ক হিসেবে শাকিব খান সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অভিনয় জীবনের দ্বিতীয় বছরেই তিনি সে সময়ের শীর্ষ অভিনেত্রী শাবনূর এর বিপরীতে ইস্পাহানী-আরিফ জাহান পরিচালিত গোলাম চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম শাবনূরের বিপরীতে অভিনয় করে আলোচিত হন। এই বছর তিনি এজে রানা পরিচালিত আজকের দাপট চলচ্চিত্রে প্রথম পূর্ণিমার বিপরীতে, আবু সাঈদ খান পরিচালিত দুজন দুজনার চলচ্চিত্রে প্রথম পপির বিপরীতে, এবং দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত বিষে ভরা নাগিন চলচ্চিত্রে প্রথম মুনমুনের বিপরীতে অভিনয় করেন।
২০০১ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত শিকারী, স্বপ্নের বাসর, মায়ের জেহাদ, রাঙ্গা মাস্তান, হিংসার পতন, বন্ধু যখন শত্রু ছায়াছবি গুলো। এফআই মানিক পরিচালিত স্বপ্নের বাসর চলচ্চিত্রে রিয়াজ ও শাবনূরের পাশাপাশি তার অভিনয় প্রশংসিত হয়।
২০০২ সালে মুক্তি পায় এফআই মানিক পরিচালিত ফুল নেবনা অশ্রু নেব, ও স্ত্রীর মর্যাদা, শাহাদাৎ হোসেন লিটন পরিচালিত ও প্রিয়া তুমি কোথায়, জিল্লুর রহমানের নাচনেওয়ালী এবং বাদল খন্দকারের বিশ্ব বাটপার। স্ত্রীর মর্যাদা ছায়াছবিতে তিনি প্রথম মৌসুমীর বিপরীতে অভিনয় করেন।
২০০৩ সালে অভিনয় করেন সাহসী মানুষ চাই, প্রাণের মানুষ, ক্ষমতার দাপট, ও সবার উপরে প্রেম চলচ্চিত্রে। এ বছর তার অভিনীত মুহম্মদ হান্নান পরিচালিত সাহসী মানুষ চাই চলচ্চিত্রটি প্রশংসিত হয় এবং তিনটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।
২০০৪ সালে তার অভিনীত চলচ্চিত্র গুলোর মধ্যে নয়ন ভরা জল, আজকের সমাজ, বস্তির রানী সুরিয়া, রুখে দাড়াও উল্লেখযোগ্য।
২০০৫ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত এমএ রহিম পরিচালিত সিটি টেরর। এ চলচ্চিত্রে তিনি অভিনেতা মান্নার সাথে অভিনয় করেন। এছাড়া শাহীন-সুমন পরিচালিত বাধা সিনেমায় রিয়াজ ও পূর্ণিমার সাথে অভিনয় করেন।
২০০৬ সালে তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প সুভা অবলম্বনে নির্মিত চাষী নজরুল ইসলাম এর পরিচালনায় সুভা চলচ্চিত্রে পূর্ণিমার বিপরীতে অভিনয় করেন। এ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ২০০৭ সালে প্রদত্ত লাক্স-চ্যানেল আই পারফরম্যান্স পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে দর্শক জরিপ ও সমালোচক উভয় শাখায় মনোনীত হন।
একই বছর মুক্তি পায় এফআই মানিক পরিচালিত কোটি টাকার কাবিন, পিতার আসন, দাদীমা, ও চাচ্চু, এবং দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত মায়ের মর্যাদা। কোটি টাকার কাবিন ছায়াছবিতে তিনি প্রথম অপু বিশ্বাসের সাথে অভিনয় করেন। চাচ্চু চলচ্চিত্রটি দিয়ে শাকিব প্রথম জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
২০০৭ সালে মা আমার স্বর্গ, আমার প্রাণের স্বামী, কাবিনামা, স্বামীর সংসার, ডাক্তার বাড়ী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পিএ কাজল পরিচালিত আমার প্রাণের স্বামী চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি সমালোচক শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে প্রথম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন।
২০০৮ সালে তার অভিনীত ছায়াছবিগুলো হল তোমাকে বউ বানাবো, আমার জান আমার প্রাণ, সমাধি, ১ টাকার বউ, ভালোবাসার দুশমন, প্রিয়া আমার প্রিয়া, টিপ টিপ বৃষ্টি, তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা, আমাদের ছোট সাহেব, সন্তান আমার অহংকার, যদি বউ সাজো গো, মনে প্রাণে আছ তুমি।
এ বছর বদিউল আলম খোকন পরিচালিত প্রিয়া আমার প্রিয়া চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার এবং লাক্স-চ্যানেল আই পারফরম্যান্স পুরস্কার অর্জন করেন। পিএ কাজল পরিচালিত ১ টাকার বউ চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাবনূর ও রুমানা খান। চলচ্চিত্রটি একটি বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার এবং একটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।
২০০৯ সালে তিনি অভিনয় করেন আমার প্রাণের প্রিয়া, স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা, ভালোবাসা দিবি কিনা বল, মন যেখানে হৃদয় সেখানে, বলোনা কবুল, বিয়ের প্রস্তাব, জন্ম তোমার জন্য, প্রেম কয়েদী, সাহেব নামের গোলাম, ও সাথী রে চলচ্চিত্রে।
এই বছর পিএ কাজল পরিচালিত স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা চলচ্চিত্রটি প্রশংসিত হয় এবং তিনটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত আমার প্রাণের প্রিয়া চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ২০১০ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন। এই চলচ্চিত্রের "কি জাদু করেছো বলোনা" গানটি এক বছর হিট গানের তালিকায় ছিল।
পরের বছর ২০১০ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত বলোনা তুমি আমার, প্রেম মানে না বাধা, টপ হিরো, পরান যায় জ্বলিয়া রে, ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না, টাকার চেয়ে প্রেম বড়, জীবন মরণের সাথী, প্রেমে পড়েছি, চেহারা: ভন্ড-২, প্রেমিক পুরুষ, হায় প্রেম হায় ভালোবাসা। জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না চলচ্চিত্রে একজন স্বাধীনচেতা যুবক সূর্য চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে তার বিপরীতে ছিলেন অপু বিশ্বাস ও রুমানা খান।
এই চলচ্চিত্রের জন্য ২০১১ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে পুরস্কৃত হন। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০১২ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে প্রথমবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন।
এছাড়া ২০১০ সালের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় তার অভিনীত নাম্বার ওয়ান শাকিব খান, চাচ্চু আমার চাচ্চু, ও নিঃশ্বাস আমার তুমি। বদিউল আলম খোকন পরিচালিত নাম্বার ওয়ান শাকিব খান ব্যবসায়িক সফলতা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
শাহাদাৎ হোসেন লিটনের জীবন মরণের সাথী, পিএ কাজলের চাচ্চু আমার চাচ্চু, এবং বদিউল আলম খোকনের নিঃশ্বাস আমার তুমি তিনটি চলচ্চিত্রেই তার বিপরীতে অভিনয় করে অপু বিশ্বাস এবং চলচ্চিত্রগুলো বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার অর্জন করে।
২০১১ সালে শাকিব খান অভিনীত সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কোটি টাকার প্রেম ও পরিচালক জুটি শাহীন-সুমন পরিচালিত টাইগার নাম্বার ওয়ান ব্যবসাসফল হয়। মালেক আফসারী পরিচালিত মনের জ্বালা চলচ্চিত্র তার বিপরীতে অভিনয় করে অপু বিশ্বাস। এই ছায়াছবিতে তিনি প্রথম নেপথ্য শিল্পী হিসেবে আমি চোখ তুলে তাকালেই সূর্য লুকায় গানে কণ্ঠ দেন।
মোহাম্মদ হোসেন জেমী পরিচালিত কিং খান চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করে অপু বিশ্বাস ও লামিয়া মিমো। এটি এই বছরের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ২০১২ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কার অর্জন করেন।
শাহাদাৎ হোসেন লিটন পরিচালিত আদরের জামাই ছায়াছবির জন্য মনোনীত হন মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ সমালোচক শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে। মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত বস নাম্বার ওয়ান ও শাহ আলম কিরণ পরিচালিত মাটির ঠিকানা বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন।
২০১২ সালে অভিনয় করেন সে আমার মন কেড়েছে, বুক ফাটে তো মুখ ফুটেনা, এক টাকার দেনমোহর, মাই নেম ইজ সুলতান, ডন নাম্বার ওয়ান, খোদার পরে মা, ঢাকার কিং চলচ্চিত্রে। বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ডন নাম্বার ওয়ান চলচ্চিত্রের জন্য ২০১৩ সালে দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অর্জন করেন।
শাহীন-সুমন পরিচালিত খোদার পরে মা মুন্না চরিত্রে অভিনয় করেন। এতে তার বিপরীতে ছিল সাহারা এবং তার মায়ের ভূমিকায় ছিলেন ববিতা। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ২০১৪ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে তার দ্বিতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া নায়ক হিসেবে রেকর্ডসংখ্যক পারিশ্রমিকের অধিকারী শাকিব খান সর্বশেষ চমক সৃষ্টি করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে।
২০১৩ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত ঢাকা টু বোম্বে, ফুল এন্ড ফাইনাল, জোর করে ভালবাসা হয় না, ভালোবাসা আজকাল, নিষ্পাপ মুন্না, জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার, দেবদাস, মাই নেম ইজ খান, পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী। এফআই মানিক পরিচালিত জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে ছিলেন পূর্ণিমা। এছাড়াও এই ছায়াছবিতে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর একসাথে অভিনয় করেন রাজ্জাক, সোহেল রানা ও আলমগীর। ছায়াছবিটি ব্যবসাসফল হয়। বদিউল আলম খোকন পরিচালিত মাই নেম ইজ খান চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে ছিল অপু বিশ্বাস।
অপরাজেয় কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বিখ্যাত উপন্যাস দেবদাস অবলম্বনে নির্মিত দেবদাস চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম এবং শাকিব খানের বিপরীতে পার্বতী চরিত্রে অভিনয় করেন অপু বিশ্বাস ও চন্দ্রমুখী চরিত্রে অভিন করেন মৌসুমী। চলচ্চিত্রটি একই পরিচালকের ১৯৮২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দেবদাস চলচ্চিত্রের পুনঃনির্মাণ।
শাকিব খান ২০১৪ সালে অভিনয় করেন রাজত্ব, ফাঁদ, সেরা নায়ক, ডেয়ারিং লাভার, কঠিন প্রতিশোধ, হিটম্যান, হিরো: দ্যা সুপারস্টার ছায়াছবিতে। এস. কে. ফিল্মসের ব্যানারে হিরো: দ্যা সুপারস্টার ছায়াছবিটি প্রযোজনা করেন শাকিব খান নিজেই। বদিউল আলম খোকন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে তার সাথে অভিনয় করেন অপু বিশ্বাস, ইয়ামিন হক ববি, ববিতা ও নূতন।
ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত ছায়াছবিটি ব্যবসাসফল হয় এবং ঢালিউডের সর্বকালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের সেরা দশে অবস্থান করে। এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি ২০১৫ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা বিভাগে পুরস্কৃত হন।[ এছাড়া চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ প্রযোজিত এক কাপ চা ছায়াছবিতে একটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৫ সালে তিনি এইতো প্রেম, আরো ভালোবাসবো তোমায়, ও দুই পৃথিবী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
সোহেল আরমান পরিচালিত এইতো প্রেম তার অভিনীত প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। এতে তার বিপরীতে প্রথমবার অভিনয় করেন আফসানা আরা বিন্দু। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ২০১৬ সালে প্রদত্ত মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-এ দর্শক জরিপ শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে মনোনীত হন।
এস এ হক অলিক পরিচালিত আরো ভালোবাসবো তোমায়-এ তিনি প্রথমবারের মত অভিনয় করেন পরীমনির বিপরীতে। এই চলচ্চিত্রে শাকিব খান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি তৃতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।এই বছর ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত লাভ ম্যারেজ ছবিটি ব্যবসাসফল হয় এবং ঈদুল আযহায় মুক্তি পায় তার অভিনীত প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র রাজা বাবু।
২০১৬ সালে উত্তম আকাশ পরিচালিত রাজা ৪২০ এবং সাফি উদ্দীন সাফি পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২ মুক্তি পায়। পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২ ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনীর অনুবর্তী পর্ব। দুই ক্রিকেটারের দ্বন্দ্ব নিয়ে নির্মিত এই ছায়াছবিতে তার সাথে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান ও মামনুন হাসান ইমন। এই বছর ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় তার অভিনীত শিকারি, রানা পাগলা, সম্রাট। যৌথ প্রযোজনার শিকারি পরিচালনা করেন বাংলাদেশী জাকির হোসেন সীমান্ত ও ভারতীয় জয়দেব মুখার্জী। এতে টালিউড অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের সাথে প্রথম জুটি বেঁধে সমাদৃত হন। আর এই শিকারি দিয়েই যেন নতুন এক শাকিবের উদয় হলো।
শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত রানা পাগলা-এ তার বিপরীতে প্রথম অভিনয় করেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। সম্রাট পরিচালনা করেন মুহম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। এতে তার সাথে অভিনয় করেন অপু বিশ্বাস ও কলকাতার ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। ঈদুল আযহায় মুক্তি পায় তার অভিনীত বসগিরি ছায়াছবি। শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত এই ছায়াছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন নবাগত শবনম বুবলি। এই বছরের ডিসেম্বরে মুক্তি পায় তার অভিনীত ধূমকেতু। শফিক হাসান পরিচালিত ছবিটিতে তার বিপরীতে ছিলেন পরীমনি।
২০১৭ সালের শুরুতে মুক্তি পায় তার অভিনীত চলচ্চিত্র সত্তা। কথাসাহিত্যিক সোহানী হোসেনের মা গল্প অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি পরিচালনা করেছেন হাসিবুর রেজা কল্লোল এবং এতে প্রথমবার শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেন কলকাতার পাওলি দাম। এই সিনেমায় শাকিব খানের অভিনয় সব শ্রেনীর দর্শকের মন কাড়ে, সিনেমার ব্যবসাও সন্তোষজনক। এ বছর ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় তার অভিনীত নবাব ও রাজনীতি।
ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার নবাব পরিচালনা করেন জয়দীপ মুখার্জী এবং এতে প্রথমবারের মত তার বিপরীতে অভিনয় করেন কলকাতার শুভশ্রী গাঙ্গুলী। ১২৮টি হলে মুক্তি পাওয়া ছবিটি ব্যবসাসফল হয় এবং ২০১৭ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান করে নেয়। এছাড়া শাকিব নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ ও অভিনয়ের জন্য প্রশংসিত হন। অন্যদিকে, রাজনীতি ছবিটি পরিচালনা করেন বুলবুল বিশ্বাস। এতে দীর্ঘ একবছর পর তাকে অপুর বিপরীতে দেখা যায়।ছবিটি দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে। ঈদুল আযহায় মুক্তি পায় শাকিব অভিনীত রংবাজ ও অহংকার। দুটি ছবিতেই তার বিপরীতে ছিলেন শবনম বুবলি।
২০১৮ সালে ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় পাংকু জামাই, চিটাগাইংয়া পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া এবং সুপারহিরো। ঈদুল আযহায় শাকিব অভিনীত ক্যাপ্টেন খান চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত চলচ্চিত্রটি ২০১৪ সালের তামিল চলচ্চিত্র আনজান ও তেলেগু চলচ্চিত্র সিকান্দার-এর অনুকরণে নির্মিত।
চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে শাকিব খান সর্বাধিক ছবি করেছেন নায়িকা অপু বিশ্বাসের সঙ্গে। চিত্রাঙ্গণে শাকিব-অপু অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে। ‘কোটি টাকার কাবিন’ চলচ্চিত্রে প্রথম জুটিবদ্ধ হয়েছিলেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন এফ আই মানিক। এরপর শাকিব খানের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে আরো ৭২টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন অপু বিশ্বাস।
এদিকে আসছে ঈদে শাকিব খান অভিনীত ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি। চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন মাস্টার মেকার মালেক আফসারি। আর এ ছবির মাধ্যমে দ্বিতীয় বারের মতো ছবি প্রযোজনা করলেন শাকিব খান।
বাংলাদেশ জার্নাল / এএ