ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘পানিপথ’ নিয়ে নতুন যুদ্ধ

‘পানিপথ’ নিয়ে নতুন যুদ্ধ

একটি টুইটের জের ধরে ৪০০ বছরের পুরনো যুদ্ধ নিয়ে আধুনিক যুগেও নতুন করে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। বলিউডের নতুন চলচ্চিত্র পানিপাতে আফগান নেতা আহমদ শাহ আবদালির চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। শুক্রবার চলচ্চিত্রটির মুক্তি পায়।

আমার ছায়া যেখানে পড়ে মৃত্যু সেখানে আঘাত হানে, লিখেছেন বলিউডের অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত।

পানিপাতকে বাংলাতে অনেকে পানিপথ লেখেন। ঐতিহাসিক পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধকে উপজীব্য করে চলচ্চিত্রটি তৈরি করা হয়েছে। যেখানে মারাঠা সাম্রাজ্যের সাথে দূররানি সাম্রাজ্যের যুদ্ধে মারাঠা সাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল।

আশা করা হয়েছিল যে, চলচ্চিত্রটির মুক্তির পর এটি নিয়ে আলোড়ন তৈরি হবে। কিন্তু এর পরিবর্তে একটি আন্তর্জাতিক ঘটনাকে উস্কে দিয়েছে। আর তা হলো, বলিউডের আফগান ভক্তদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।

পানিপাত চলচ্চিত্রে মূলত ১৭ শতকে ভারতের একজন সম্রাট এবং আফগান নেতা আবদালির নেতৃত্বে পরিচালিত সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধকে চিত্রিত করা হয়েছে। তিনি আফগানদের কাছে আবদালি তাদের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতীয় নায়ক।

কিন্তু ভারতীয়দের কাছে আবদালি একজন আক্রমণকারী যিনি দিল্লির উত্তরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পানিপথের যুদ্ধে হাজার হাজার মারাঠা যোদ্ধাকে হত্যা করেছিলেন।

চলচ্চিত্রটি তৈরির ঘোষণার পর থেকেই এ নিয়ে এক ধরণের উদ্বেগ ছিল। ২০১৭ সালে মুম্বাইয়ে অবস্থিত আফগান কনস্যুলেট এ নিয়ে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হাজির হয়েছিল।

আহমদ শাহ আবদালির জন্য আফগান জনগণের হৃদয়ে এবং মনে বিশেষ স্থান রয়েছে, বলেন নাসিম শারিফি, যিনি মুম্বাইয়ে আফগানিস্তানের কনসাল জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বলেন, যখন চলচ্চিত্রটি তৈরি করা হয়েছিল তখন আমরা এর নির্মাতাকে অনুরোধ করেছিলাম যে মূল ঘটনাকে যাতে এড়িয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আমাদের একাধিক চেষ্টার পরও নির্মাতার কাছ থেকে কোন সাড়া পাইনি।

কিন্তু এরপর হাজির হলেন সঞ্জয় দত্ত তার অভিনীত চরিত্রের একটি ছবিসহ যাকে আফগানিস্তানের জনগণ তাদের জনক বলে শ্রদ্ধা করে ডাকেন আহমদ শাহ বাবা বলে। আর এর প্রায় সাথে সাথেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

তাকে দেখতে ভয়ংকর দেখায়। সে সুরমা পড়েছে। কিন্তু আবদালি এমনটা ছিলেন না। সে যেভাবে যে ধরণের কাপড় পড়েছে, যেভাবে সে কথা বলে, সেটা আফগানিস্তানের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং তাকে আরব মনে হয়, বিবিসিকে একথা বলেন এলাহা ওয়ালিজাদেহ নামে একজন আফগান ব্লগার।

কয়েক প্রজন্ম ধরে আফগানরা বলিউড সিনেমা, যেমন: খুদা গাওয়াহর মতো চলচ্চিত্র যেখানে অমিতাভ বচ্চন একজন সাহসী ও দেশপ্রেমিক আফগান প্রোটাগনিস্টের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তা দেখে দেখে বেড়ে উঠেছে। এগুলো আনন্দের ছিল এবং অন্ধকার তালেবান যুগে এগুলো অনেক আফগানির জন্য আশার সঞ্চার করেছে।

২০১৮ সালে পদ্মাবত আসে, যেখানে আলাউদ্দিন খিলজির চরিত্রে অভিনয় করেন সুপারস্টার রনবীর কাপুর। আলাউদ্দিন খিলজি ছিলেন একজন তুর্ক-আফগান শাসক যিনি ১২ শতকে দিল্লি শাসন করেছিলেন।

এতে খিলজিকে যে ধরণের নিষ্ঠুর ও দুষ্ট চরিত্রের বলে উপস্থাপন করা হয়েছে তা অনেক আফগানকে ক্ষুব্ধ করে- যদিও এই সংখ্যাটা ছিল খুবই নগণ্য।

একইভাবে, ২০১৯ সালের একটি নাটক যেখানে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২১ শিখ সেনা এবং ১০ হাজার আফগান সেনার মধ্যে যুদ্ধের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, সেখানেও আফগানদেরকে আক্রমণকারী এবং জোর করে ভূমি দখলকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই প্রবণতার বিরুদ্ধেও সমালোচনা হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে মানুষ এ ধরণের ভুল উপস্থাপনা সম্পর্কে জানতে পারছে। আফগান তরুণরা এ ধরণের ট্রেন্ড খেয়াল করছে এবং এ নিয়ে তারা আলোচনাও করছে, ওয়ালিজাদেহ বলেন।

তিনি বলেন, আগে যেখানে কোন চলচ্চিত্রে আফগানদের উল্লেখ থাকলে মানুষ সেটাকে আগ্রহ নিয়ে দেখতো এখন সেটাকে সতর্কভাবে দেখে এবং যাচাই করে। যদিও ভুল উপস্থাপনা এখন একটা বৈশ্বিক সমস্যা, তবুও বলিউডের সাথে আফগানদের সম্পর্কের দিক থেকে দেখতে গেলে তারা আসলে আরো ভাল কিছু প্রত্যাশা করে।

আমাদের একটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দল রয়েছে যারা সচেতনভাবেই বলিউডের নরম শক্তিকে ব্যবহারের সুযোগ নিতে চায়, বলেন হাফিংটন পোস্ট ইন্ডিয়ার বিনোদন সম্পাদক অঙ্কুর পাঠক।

তবে অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা আশুতোষ গোয়ারিকর।

তিনি অনলাইন চ্যানেল ফিল্ম কম্পানিয়নকে বলেন, হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধ নিয়ে এই চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়নি। এটা একজন আক্রমণকারীকে প্রতিহত করার কাহিনী। এটা আপনার সীমান্ত, আপনার ভূমিকে রক্ষা করার বিষয়ক, এটাই চলচ্চিত্রটির দেশাত্মবোধক মূলভাব। এক্ষেত্রে আবদালি যে আক্রমণ করেছিল সেটা দেখানো যাবে কিন্তু ওই চরিত্রটির মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।

কিন্তু আফগান কনসাল জেনারেল শারিফি পানিপাতের প্রভাব নিয়ে এখনো উদ্বিগ্ন। যদিও সঞ্জয় দত্ত তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, চরিত্রটি নেতিবাচক হলে তিনি সেটিতে অভিনয় করতে রাজি হতেন না।

সঞ্জয় দত্তের প্রতিক্রিয়া জানতে তার সাথে যোগাযোগ করেছে বিবিসি। কিন্তু তিনি কোন জবাব দেননি।

বাংলাদেশ জার্নাল/জেডআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত