প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২১, ১৫:৩৯
ধামরাইয়ে মিষ্টি কুমড়া চাষে হতাশ কৃষক
ঢাকার ধামরাইয়ে সবজির হাট নামে খ্যাত রোয়াইল ইউনিয়নের খরারচর বাজার। সারি সারি মিষ্টি কুমড়া পালা দিয়ে রাখা দেখে মনে হয় কৃষকরা সবজি চাষে স্বাবলম্বী। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টো।
|আরো খবর
বিকেল হলেই কৃষকরা তাদের বড় বড় ঝুঁড়ি বা ভ্যানগাড়ি করে শত শত মিষ্টি কুমড়া নিয়ে উপজেলার খরারচর বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসে। কৃষকদের নামের তালিকা করে যার যার কুমড়ার উপর নামের তালিকা রেখে দেন।
স্থানীয় কিংবা ঢাকা থেকে বেপারীরা আসে কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ক্রয় করার জন্য। কিন্তু উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় হতাশায় প্রহর গুনতে হয় স্থানীয় কৃষকদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় শতাধিক কৃষক তাদের মিষ্টি কুমড়া, টমেটো নিয়ে বাজারে আসলেও নেই উপযুক্ত দাম। স্থানীয় বেপারিরা নামমাত্র দাম দিয়ে এই সব সবজি ক্রয় করে ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে থাকে। আর হতাশায় সময় কাটাতে হয় কৃষকদের। একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে তাদের সম্পর্কে খরচের হিসাব জানা যায়।
খরারচর এলাকার কৃষক শুকুর আলী বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে ধানের চাষ না করে বেশি লাভের আশায় প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ করে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছি। কিন্তু এখন তার পুরোই উল্টো। প্রায় দুই কেজি ওজনের মিষ্টি কুমড়া কেজি ২ টাকা, তিন কেজি ৬ টাকা, পাঁচ কেজি ১২ টাকা ও প্রায় ৯-১০ কেজি ওজনের মিষ্টি কুমড়ার দাম মাত্র ৩০ টাকা। তাও যদি ঢাকা থেকে ব্যাপারী আসে। আর স্থানীয় ব্যাপারীর হাতে পড়লে কোনো দিন মিষ্টি কুমড়া রেখেই বাড়ি চলে যাই।
তিনি আরো বলেন, মিষ্টি কুমড়া ছাড়াও জমিতে পাতা কপি, টমেটো নষ্ট হচ্ছে। তুলে বাজারে এনে কোনো লাভ নেই। টমেটো ২-৩ টাকা কেজি, বড় সাইজের একটা পাতা কপি ৩-৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই এসব সবজি জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।
আরেক কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছি। কিন্তু এখনো ২০ হাজার টাকা ঘরে নিতে পারি নাই। প্রতিদিন পরিবারে ঝগড়া লাগে। ১০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ার বীজ ১২ শত টাকা দিয়ে ক্রয় করা হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় টাকা খরচের। সঠিক পরামর্শ নিয়ে চাষ করার জন্য পাওয়া যায়নি কৃষি কর্মকর্তাদের। নিজেদের মতো করে চাষ করেছি।জমিতেই অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যাবে। স্থানীয় ব্যাপারীদের কারণে বেশির ভাগ মিষ্টি কুমড়াই পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এমন আক্ষেপের কথা বলেন ঔই ইউনিয়নের একাধিক কৃষক। তারা ধান বা অন্য কিছু চাষ না করে সবজির দিকে ঝুঁকে এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে। অনেকেই আবার হতাশার কারণে সবজি চাষ করা বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছে। অনেকেই সবজি চাষে ক্ষতির কারণে পারিবারিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ অনেকেই ধার দেনা করে সবজির চাষ করে আজ লোকসান গুনছে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে