প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২০, ১৭:৩৬
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সেমিনার
করোনা মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা দিয়ে যুদ্ধ করবো: আনোয়ার খান এমপি
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) সাধারণ সম্পাদক এবং আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার হোসেন খান এমপি বলেছেন, করোনার মোকাবেলায় আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে যুদ্ধ করবো। প্রথমদিকে আমরা অন্ধকারের মধ্যে ছিলাম। এখন অভিজ্ঞতার আলোকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছি।
|আরো খবর
রোববার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় গণমাধ্যম ও বেসরকারি হাসপাতালে ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনার তিনি এসব কথা বলেন। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এই সেমিনারের আয়োজন করে।
ড. আনোয়ার হোসেন খান এমপি আরো বলেন, আমাদের হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দেশের মানুষের কাছে আমাদের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। হাসপাতালে প্রত্যেকটা স্বাস্থ্যকর্মীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তারা এখন অনেক অভিজ্ঞ।
দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক ভালো বলে উল্লেখ করে ড. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, প্রত্যেকটি উন্নত রাষ্ট্রে যে হারে মানুষ মারা গেছে, সেই তুলনায় আমরা অনেক ভালো আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের শক্তি যুগিয়েছেন। সেই শক্তি নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি।
করোনা মহামারি প্রতিরোধে অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ড. আনোয়ার হোসেন খান এমপি বলেন, দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই আমরা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কয়েকদিনের ব্যবধানে একটি করোনা হাসপাতাল নির্মাণ করেছি। জনবল বা লজিস্টিক সাপোর্ট যা যা দরকার ছিল সবকিছু করা হয়েছিল। তবে প্রথমদিকে আমরা অন্ধকারের মধ্যেই ছিলাম। এখন আমরা অভিজ্ঞতার আলোকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছি।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচনায় আরো অংশ নেন বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইউজিসির অধ্যাপক ডাক্তার এবিএম আব্দুল্লাহ।
ড. আনোয়ার হোসেন খান এমপি। ছবি: নিজস্ব
ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, করোনা মহামারি মানসিকভাবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এর কারণে প্রত্যেক মানুষই আতঙ্কিত হয়ে গেছে। তবে করোনার কারণে মেডিকেল সেক্টর অনেক উন্নত হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে অনেক উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, করোনা মহামারিতে গণমাধ্যমকর্মীরা সাহসিকতার পরিচয় দেখিয়েছেন। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক খবর অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের আরেকটু সতর্ক থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনা সারাবিশ্বের মতো আমাদের কাছেও একেবারে নতুন। এরই মধ্যে অনেক কিছু আমরা জেনেছি। অনেক কিছু জানার চেষ্টা করছি। আবার অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে। এই করোনা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ সব ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
প্রতিরোধের বিষয় উল্লেখ করে এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনা নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। শুরুতে যেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। আমরা সেই বিভ্রান্তি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। ডা. আব্দুল্লাহ আরো বলেন, করোনায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সফল চিকিৎসা হচ্ছে। কোথাও কোথাও স্বাস্থ্যকর্মীদের কিছু বদনাম হয়েছিল। প্রথম প্রথম ভয় পাওয়ার কারণে এটা হয়েছিল। সেই ভয় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এখন আমাদের ডাক্তার-নার্সরা অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। করোনার চিকিৎসা সেবার মান উন্নত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা উল্লেখ করে ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, তিনি সবকিছুই মনিটরিং করছেন। তার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছি। যারা করোনাকালে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে তাদের ঝুঁকি ভাতা প্রদানের প্রস্তাব করেছি।
সেমিনারে বক্তারা। ছবি: নিজস্ব।
ভ্যাকসিন পাওয়া প্রসঙ্গে ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, করোনার ভ্যাকসিন কবে পাওয়া যাবে সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে এ ক্ষেত্রে অনেকের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশই ভ্যাকসিন পাওয়ার চেষ্টা করছে। ভ্যাকসিন এলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সারাদেশে মানুষের মাঝে একটা গা ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, করোনাকালে তাদের কার্যক্রম দেশের জন্য মাইলফলক। আওতায় আনা গেলে তারা আরও উদ্যোমে কাজ করবেন।
এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ও ভালো চিকিৎসা হচ্ছে। আমাদের দেশের জনসংখ্যার তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা কম। সে কারণে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা দেয়া যাচ্ছে না। তাদেরও ছোটখাটো ভুল তুলে না ধরে ভালো কাজগুলো তুলে ধরেতে হবে। না হলে মানুষের ভেতর আরো ভীতির সৃষ্টি হবে।
অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। ছবি: নিজস্ব।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে বলা যায়। আমরা আগেই দেখেছি করোনা প্রাদুর্ভাবের পর মাস্ক, পিপিই, স্যানেটাইজারসহ স্বাস্থ্য সামগ্রীর মূল্য বেড়ে যায়, সংকট সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় ঢেউয়ে যেন এই সমস্যার সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমরা আর স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি দেখতে চাই না।
আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এখলাসুর রহমান বলেন, করোনার শুরুতে আমরা কোভিড হাসপাতাল গড়ে তুলি। প্রথম থেকেই আমরা আমাদের হাসপাতালে জনবল এবং লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধি করেছি। হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষিত করেছি। এতে আমরা ক্রমান্বয়ে ভালো অবস্থানের দিকে গিয়েছি।
অধ্যক্ষ এখলাসুর রহমান আরো বলেন, কিছুদিন আগে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে একটি সার্ভে হয়। সেখানে স্কোরিংয়ের দিক থেকে আমাদের হাসপাতাল ভালো অবস্থানে ছিল। আমাদের সেবার মান ভালো ছিলো বলেই আমরা ভালো করেছি। স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, করোনায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরিধান, নিয়মিত হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার মাধ্যমে কোভিড মোকাবেলা করতে হবে। সর্বোপরি সবাইকে সচেতন হতে হবে।
সেমিনারে আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী বলেন, করোনা মোকাবেলায় বেসরকারি হাসপাতাল শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। করোনা মোকাবেলায় সচেতনার বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনএম