ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রিয়াঙ্কাকে নিয়েই ঢাকা-দিল্লি ক্ষোভ

প্রিয়াঙ্কাকে নিয়েই ঢাকা-দিল্লি ক্ষোভ

গত দু’মাস আগে রাজধানী দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীর সাক্ষাৎকারে প্রাথমিক ভাবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রের নাম ছিল না। পরে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহেই কিছুক্ষণ পরে সেখানে পৌঁছান ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি। তার সঙ্গে শেখ হাসিনার আলিঙ্গনাবদ্ধ ছবিটি প্রিয়ঙ্কার টুইটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

আর প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার এই হৃদ্যতাপূর্ণ ছবি থেকেই নাকি ঢাকা-দিল্লি ক্ষোভের শুরু। এমনটি দাবি করেছে খোদ ভারতের বাংলা সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার।

কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে রোববার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আনন্দবাজার জানায়, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে শৈত্যের যে বাতাবরণ দেখা যাচ্ছে, শুরু হয়েছিল সে দিনই।

পত্রিকাটি বলছে, ‘বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে বড় ভূমিকা নেওয়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পরিবারের প্রতি নৈকট্য সে দিন গোপন করেননি হাসিনা। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, মোদি সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রেখেও নেহরু-গান্ধী পরিবারের প্রতি প্রীতির সম্পর্ক বজায় রাখতে চান তিনি। সূত্রের মতে, বিষয়টিতে কিছুটা আড়ষ্টতা তৈরি হয় সাউথ ব্লকে।’

এ ঘটনার পর যখন কলকাতা ইডেন গার্ডেনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও ভারত দলের ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে কলকাতায় পৌঁছান শেখ হাসিনা, বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে দিল্লি থেকে কোনও মন্ত্রী বা শীর্ষ কূটনীতিককে পাঠায়নি মোদি সরকার। এই বিষয়টি যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ করেছে ঢাকাকে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের এক কূটনীতিকের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানায়,‘বাংলাদেশ সব ব্যাপারে পাশে থাকবে বলে ধরেই নিয়েছে নয়াদিল্লি। তাই কিছু ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। শুধুমাত্র কলকাতা সফর তো নয়, অক্টোবরে নয়াদিল্লি সফরেও প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছিল প্রথম বারের সাংসদ এক নতুন মন্ত্রীকে। নরেন্দ্র মোদি নিজে না পারেন, কোনও সিনিয়র মন্ত্রীকে কি পাঠানো সম্ভব ছিল না ?’

এই মন কষাকষির মধ্যেই চলে আসে আসামে এনআরসি নিয়ে অশান্তি এবং এবং তার পরে নাগরিকত্ব আইন পাশ করানোর প্রক্রিয়া। এর মধ্যে একবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাইড বৈঠকে এবং অক্টোবরে নয়াদিল্লি সফরকালে এনআরসি নিয়ে মোদির কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এই বিল পাশ কারনোর সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদের দুই কক্ষে বার বার পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে একই বন্ধনীতে রাখায় ক্ষুব্ধ হয় বাংলাদেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

আনন্দবাজার বলছে, ‘আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি কট্টর ইসলামি অংশ রয়েছে, যাদের মতামতকে গ্রাহ্য করে চলতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে সাড়া না-পাওয়া সত্ত্বেও, হাসিনা কেন উদার ভারতনীতি নিয়ে চলছেন, এই প্রশ্ন তুলেছে সেই কট্টর অংশ। নাগরিকত্ব আইনে বিষযটি আরও জটিল হয়েছে।’

ঢাকা সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি আরো জানাচ্ছে, ‘পর পর দুই মন্ত্রী ও প্রতিনিধি দলের ভারত সফর বাতিল করে সেই অভ্যন্তরীণ রোষকে ধামাচাপা দিতে পেরেছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী।’

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিল হওয়ার পরে চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে দু’দেশের যৌথ নদী কমিটির বৈঠকটিও বাতিল করে দেয় বাংলাদেশ সরকার।

স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পনিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেন, তাড়াহুড়ো করে নয়াদিল্লি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। নয়াদিল্লিকে বলে দেওয়া হউক সংশ্লিষ্ট নদী সংক্রান্ত যথেষ্ট তথ্যাদি বিশ্লেষণ করা হয়নি।

আর এ প্রসঙ্গের উল্লেখ করে আনন্দবাজারের বক্তব্য, ‘এর পিছনে যে নির্দিষ্ট কূটনৈতিক বার্তা দেয়ার ছিল, দিল্লিকে তা পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে বলেই মনে করছে ঢাকা।’

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত