ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

যে কারণে আলোচিত তরুণী এমপি নাদিয়া

যে কারণে আলোচিত তরুণী এমপি নাদিয়া

এবারের যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচনের পর আলোচনায় এসেছেন তরুণী এমপি নাদিয়া হুইটমোর। ২৩ বছর বয়সী নাদিয়া ব্রিটিশ সংসদের সবচেয়ে কমবয়সী সংসদ সদস্য। নির্বাচনের আগে তিনি লোকজনের কাছে অপরিচিতই ছিলেন। কিন্তু নিজের বেতনের অর্ধেকের বেশি অংশ স্থানীয় সম্প্রদায়কে দান করার ঘোষণা দেয়ার পর ব্রিটেন জুড়ে আলোচনায় এসেছেন নাদিয়া। তাকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিপুল আগ্রহ।

বিবিসিকে নাদিয়া জানন, ইংলিশ মিডল্যান্ডসের নটিংহ্যাম ইস্ট আসনে বিজয়ী হওয়ার আগে তিনি একটি অস্থায়ী চাকরি খুঁজছিলেন।

পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তার ঘোষণা, কর প্রদানের পর তার বাৎসরিক বেতনের অর্ধকেরও কম পরিমাণ অর্থ তিনি গ্রহণ করবেন। বাকি অর্থ দান করবেন।

বছরে ৮০ হাজার পাউন্ড বেতন পাওয়া এই সংসদ ৪৫ হাজার পাউন্ডই দান করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একজন সাধারণ শ্রমিক গড়ে যেই বেতন পায়, আমি ততটুকুই নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাকি অর্থ আমি আমার এলাকার উন্নয়নে ব্যয় করবো। ওই অর্থের মথ্যে দান, তহবিল গঠন, তৃণমূল পর্যায়ের প্রকল্প তৈরির মত কাজগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হবে।’

তবে দান করা বা কেবল মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্য থেকেই এরকম সিদ্ধান্ত নেননি নাদিয়া হুইটমোরের। অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকে পাবলিক সেক্টরের যেসব কর্মীরা চাকরি থেকে ছাটাই হয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

তার ভাষায়, ‘সাংসদদের এত বেতন প্রাপ্য না - এই মানসিকতা থেকে আমার বেতনের অংশ দান করছি না আমি। আমি বিশ্বাস করি আমাদের শিক্ষক, সেবিকা ও দমকল কর্মীদেরও আরো বেতন পাওয়া উচিত। যেদিন তাদের বেতন বাড়ানো হবে, সেদিন আমিও আমার পুরো বেতন নেবো। আমি আশা করি আমার সিদ্ধান্ত আয়ের বৈষম্যের বিতর্কটিকে উস্কে দেবে।’

নাদিয়া হুইটমোর একসময় বিদ্বেষের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের সহায়তা প্রদানের কাজ করতেন। আইন বিষয়ে তার একটি ডিগ্রি রয়েছে এবং নটিংহাম ইস্ট আসনের জন্য এবারের নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন তিনি। নির্বাচনের কয়েক মাস আগেও বড়দিনের জন্য ন্যুনতম বেতনের অস্থায়ী কাজ খুঁজছিলেন নাদিয়া। কিন্তু তখন তিনি চিন্তাও করতে পারেননি যে, তিনি সাংসদ নির্বাচিত হবেন এবং তার আর ওই কাজের প্রয়োজন হবে না।

একজন অভিভাবক পরিচালিত পরিবারে বড় হয়েছেন হুইটমোর। কৈশোরেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতিতে যোগ দেয়ার। সেসময় অর্থনৈতিক মন্দার জের ধরে সরকার বেশকিছু খাতে অর্থ বরাদ্দ দেয়া কমিয়ে দেয় - যার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে।

‘আমি নিজের চোখে দেখেছি আমার প্রতিবেশী ও বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই তাদের প্রতিদিনকার খাবারও ঠিকমতো জোগাড় করতে পারছে না,’বলেন নাদিয়া হুইটমোর।

তিনি আরো বলেন, ‘নিউ ইয়র্ক থেকে এই নটিংহাম পর্যন্ত পুরো পশ্চিমা বিশ্বেই প্রগতিশীল কিছু রাজনীতিবিদ আলোচনার কেন্দ্রে আসছেন। আমাদের মত রাজনীতিবিদরা কর্মজীবী শ্রেণি থেকে এসেছে। আমরা জানি অত্যাচারিত হতে এবং বিদ্বেষের শিকার হতে কেমন লাগে।’

নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর অনেক ভোটার সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে তার বেতনের বড় অংশ দান করে দেয়ার সিদ্ধান্তকে সবাই সহজভাবে নিতে পারেনি।

লেবার পার্টির সাবেক সাংসদ মেলানি অন টুইট করে নাদিয়া হুইটমোরকে ব্যঙ্গ করেছেন। তিনি লিখেছেন: ‘লোক দেখানো সৌজন্যের রীতি এখনো বিদ্যমান। গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বের জন্য ঠিকভাবে বেতন পেলেও যেন কর্মজীবী শ্রেণীর সহ্য হয় না।’

কিন্তু বিবিসি'র ভিক্টোরিয়া ডার্বিশায়ার অনুষ্ঠানে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন হুইটমোর।

তিনি বলেন, ‘সাংসদদের কাজ ছোট করে দেখানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু এই একই অঙ্কের অর্থে একজন দমকল কর্মী, সেবিকা বা শিক্ষক স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন চালাতে পারেন। তাহলে সাংসদ কেন পারবেন না?’

আর নিজের এই ঘোষণায় দেশের সাধারণ লোকজনের কাছ থেকে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন নাদিয়া। আর এটাই তার জন্য অনেক বড় পুরস্কার। মাত্র ২৩ বছর বয়সে এমপি নির্বাচিত হওয়া এবং এরপরই বেতনের অর্ধেক দান করার সিদ্ধান্ত কিন্তু অনেক বড় বিষয়। বলা যায়, শুরু থেকেই একের বড় এক চমক দেখিয়ে চলেছেন এমপি নাদিয়া। শুভাকাঙ্খীদের প্রত্যাশা, আগামীতে আরো অনেক ভালো ভালো কাজ করবেন ব্রিটেনের এই তরুণ এমপি।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত