ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

কাঁদছে দিল্লি, কাঁদছে ভারত

কাঁদছে দিল্লি, কাঁদছে ভারত

ভারতে বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনসহ মোদি সরকারের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বরাবরই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে দিল্লির বিখ্যাত জহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটি (জেএনইউ)। সম্প্রতি হস্টেল ফি বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলো বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীরা। এর বদলা নিতে রোববার সন্ধ্যায় মুখোশ পরে হামলা চালাল একদল যুবক।

এই হামলার ঘটনায় ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষসহ একাধিক ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছেন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে মুখোশধারীদের হাতে মার খেয়েছেন জেএনইউয়ের ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব রিজিওনাল ডেভেলপমেন্ট’-এর অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন-সহ একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে। সুচরিতাকে এমস-এ ভর্তি করতে হয়েছে।

এই হামলার জন্য বিজেপি সমর্থিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারত বিদ্যার্থী পরিষদকে (এবিভিপি) দায়ী করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও অভিযোগ, দিল্লি পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মদতে এবিভিপি-র সদস্যেরা মুখ ঢেকে ক্যাম্পাসে ঢুকে এই হামলা করেছে।

জানা যায়, দিল্লির প্রখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে দীর্ঘদিন ধরেই বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে মোদি সরকারের নানা সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই ছাত্র সংসদের সাবেক সভাপতি কানহাইয়া কুমার এখন ভারতের জাতীয় রাজনীতিতেও পরিচিত মুখ। এনআরসি আর সাম্প্রতিক সময়ে নাগরিকত্ব আইন নিয়েও মোদি সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করেছে জেএনইউ’র শিক্ষার্থীরা। দিন কয়েক আগে হস্টেল ফি বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলো বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীরা। ধর্মঘট ডেকেছিল বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।

ধর্মঘট আহ্বানকারী বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিকালে এবিভিপির নেতা-কর্মীদের হাতাহাতি হয়েছিল। সন্ধ্যার পর অর্ধশত মুশোখধারী ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা ছাত্রী হোস্টেলেও হামলা চালায়। হামলার প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার খান শিক্ষকরাও।

রোববারের ওই হামলায় ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষসহ অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। রক্তাক্ত ঐশী ঘোষের ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘটনার পরে রক্তাক্ত অবস্থায় কাঁদতে কাঁদতে ঐশী বলেন, ‘আমাকে নৃশংস ভাবে মারধর করা হয়েছে। আমি কথা বলার অবস্থাতেই নেই।’

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ১৮ জন পড়ুয়াকে এমস-এ ভর্তি করা হয়েছে। অন্তত দু’জনের অবস্থা গুরুতর। শুধু হস্টেল নয়, ক্যাম্পাসে গাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। পাথর ছোড়া হয়। মেয়েদের হস্টেলে অ্যাসিড নিয়েও হামলার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ।

জেএনইউ’তে যখন হামলা চলছে, তখন গেটের বাইরে ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘জয় শ্রী রাম’স্লোগান ওঠে বলে অভিযোগ। দিল্লির পুলিশ অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালিএ ঘটনায় পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এই ভয়াবহ হামলায় স্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা ভারত। কান্নজড়িত কণ্ঠে আবেগজনিত পোস্ট দিয়েছেন অনেকে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশটির নানা পেশা ও নানা শ্রেণির মানুষ। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ভেতরে দুষ্কৃতিরা কিভাবে ঢুকতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে পুলিশের পদক্ষেপ নিয়েও। আর এই পরিস্থিতিতে আক্রান্ত ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা।

ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করে সরাসরি পুলিশের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন অভিনেত্রী ও পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক অপর্ণা সেন। এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিচালক অঞ্জন দত্ত, বিখ্যাত নাট্যব্যাক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, কবি জয় গোস্বামী, বলি অভিনেত্রী নেহা ধুপিয়া ও রীতেশ দেশমুখ।

তবে সবচেয়ে আলোড়ন তুলেছে বলিউড অভিনেত্রী স্বরা ভাস্করের ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিও। সেখানে স্বরা বলেছেন, ‘‌আপনারা সবাই জানেন জেএনইউয়ে কী হচ্ছে। আমি জানি না আপনারা কী বলবেন। কিন্তু আমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। আপনারা দয়া করে যে যেখানে আছেন, এখুনি জেএনইউয়ের নর্থ গেটে পৌঁছে যান। ওখানে গুন্ডামি চলছে। আমার মা বাবা ওখানে আছেন। আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আপনারা যতজন পারেন এখন জেএনইউ যান। অবস্থা খুব খারাপ।’‌ ঝরঝর করে কাঁদছিলেন স্বরা।

হামলার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। টুইটারে তিনি এ নিয়ে লিখেছেন, ‘‌কোথায় পৌঁছে গিয়েছে আমাদের দেশ?’‌

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত