ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

সেলসম্যান ছাড়াই চলছে যেসব দোকান

সেলসম্যান ছাড়াই চলছে যেসব দোকান

মনে করুন আপনি হাঁটছেন এক সরু রাস্তা দিয়ে। এর দু’পাশে ঘন জঙ্গল। সেই রাস্তায় চলতে চলতে মাঝে মাঝেই আপনাকে থমকে দাঁড়াতে হবে। কারণ জনমানবহীন রাস্তার ধারে সুন্দর ভাবে সাজানো রয়েছে ছোট ছোট দোকান। কোনও দোকানে ফল-সব্জি রাখা, তো কোনওটায় ফুল; কোনটায় আবার আচার-সহ নানা খাদ্যদ্রব্য। এখান থেকে আপনি পছন্দমত যে কোনো জিনিস নিতে পারবেন। তবে সেগুলোর দাম দেয়ার জন্য কোনো লোক পবেন না। নির্দিষ্ট বাক্সে টাকা রেখে চলে আসবেন পছন্দের জিনিস নিয়ে। সবগুলো পণ্যের গায়েই যে দাম লেখা রয়েছে! এভাবে দোকানি বা কোনো সেলসম্যান ছাড়াই চলছে এসব দোকানের বেচাকেনা।

উপরে যে চিত্রটি তুলে ধরা হলো এটি কোনো রূপকথার গল্প নয়, বাস্তব। ভারতের মিজোরাম রাজ্যে বেড়াতে গেলেই মিলবে এসব অভিনব দোকানের দেখা। এই দোকানগুলোতে না আছে কোনও দরজা, না পাবেন সারাদিনে কোনও দোকানদারের দেখা। নিজেই পছন্দমতো বাজার করুন আর তার ন্যায্য দাম দিয়ে বাড়ি ফিরুন। ভারতের বাংলা সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকায় তুলে ধরা হয়েছে এই অভিনব দোকানের কথা।

যেন সততার এক বিরল নজির গড়েছে মিজোরামের গ্রামটি। এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা মুখোমুখি না হলেও, তাদের সম্পর্ক যেন কোনও এক সততার মালায় সুন্দর করে গাঁথা। মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ছোট এই গ্রাম সেলিঙ্গ। সেই গ্রামের মানুষদের মূলত চাষাবাদই জীবিকা।

প্রায় সকলেই ঝুম চাষী। ফলে চাষের জন্য প্রায়ই নতুন নতুন এলাকায় ঘুরে বেড়াতে হয় তাদের। পরিবারের সকলেই একসঙ্গে রোজ সকাল হলেই চাষাবাদের কাজে বেরিয়ে পড়েন। সারাদিনে দোকানে বেচাকেনা খুব একটা হয় না। এই অবস্থায় যদি পরিবারের কেউ সারাদিন দোকানে বসেই কাটিয়ে দেন, তা হলে চাষের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। সে কারণে রোজ সকাল হলেই চাষীরা তাদের জমির ফসল, বাগানের ফল নিয়ে নিজের দোকানে চলে আসেন। প্রতিটা সব্জির গায়ে মূল্য লিখে দিয়ে কাঠের তৈরি ছোট দোকানে পসরা সাজিয়ে দেন।

সাধারণত চক বা কালি দিয়েই সব্জি, ফলের গায়ে আলাদা আলাদা দাম লিখে রাখেন তাঁরা। পাশে টাকা জমার একটা কাঠের বাক্সও রেখে দেন। দোকান সাজিয়ে তারা চলে যান চাষের কাজে। সন্ধ্যায় ফেরার সময় ফের একবার দোকানে এসে সব্জির মূল্য সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরেন। এইভাবেই দিন চলে এই গ্রামের।

ভাবতে অবাক লাগলেও, ঠিক এমনটাই কিন্তু চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ওই মিজোরামের মানুষেরা সরল মানুষগুলো ক্রেতাদের উপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখেন। ক্রেতারাও কখনও তাদের বিশ্বাসের অমর্যাদা করেননি। কারও কাছে যদি খুচরো টাকা না থাকে, তা হলে তিনি ন্যায্য মূল্যের বিনিময়ে ওই কাঠের বাক্স থেকেই ফেরত টাকা নিয়ে নেন। আহা!মানুষের ওপর মানুষের সে কী বিশ্বাস!

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত