করোনায় আক্রান্ত হাজার হাজার, দেশজুড়ে মাস্ক সংকট
চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্ন্ত ৬৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে চীনা স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার চীনে নতুন করে আরো ৩ হাজার ১৪৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩১ হাজার ১৬১তে গিয়ে দাঁড়ালো।
এ অবস্থায় দেশজুড়ে মাস্ক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে মুখে ব্যবহারের মাস্ক চেয়ে অন্য দেশগুলোর সহায়তা কামনা করেছে চীনা সরকার।
যদিও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বরাবরই এসব মাস্কের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান। তারপরেও মুখ ঢাকার মাস্ক সাধারণ মানুষ ও হাসপাতাল স্টাফরা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। চীনে স্বাস্থ্য উপদেশ হিসেবে প্রতিনিয়ত মাস্ক পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়া হয়। মেডিকেল টিমের জন্য এটি দিনে চারবার।
এর মানে হলো প্রতিদিন বিশ লাখ মাস্ক দরকার শুধু মেডিকেল স্টাফদের জন্য। এটা হলো উহানের অন্যতম প্রধান একটি হাসপাতালে অনুসরণ করা একটি প্রক্রিয়া। ভাইরাস আক্রান্ত অন্য প্রদেশগুলোর তথ্য এ মূহুর্তে নেই কিন্তু ধারণা করা যেতে পারে সেখানকার অবস্থাও একই রকম।
তবে চীনের প্রায় পাঁচ লাখ গণপরিবহণ কর্মীকে মাস্ক পরিধান করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আরো কিছু পাবলিক প্লেসে জনসাধারণকে মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হয় ভেতরে প্রবেশের শর্ত হিসেবে। এরপর দেশটিতে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপকভাবে মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা আছে সেটি স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শে থাকুক আর না থাকুক।
তাই এটি বলা খুবই কঠিন যে আসলে কত মাস্ক দেশটিতে দরকার হয়। তবে এটি পরিষ্কার যে এর চাহিদা ব্যাপক এবং সেটিও বাড়ছে। আর এবার নববর্ষের ছুটির পর কাজে ফেরা মানুষের জন্য এ সংখ্যা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো কত মাস্ক উৎপাদিত হয় চীনে ?
সাধারণ পরিস্থিতিতে চীনে প্রতিদিন দুই কোটির মতো মাস্ক উৎপাদিত হয়, যা পুরো বিশ্বের দৈনিক উৎপাদনের অর্ধেক। তবে দেশটিতে নববর্ষের ছুটি আর করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে মাস্কের উৎপাদন এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফলে এখন যা পাওয়া যাচ্ছে তা চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে মানসম্পন্ন মাস্ক যা বেশি কার্যকর এবং এখন যেটি বেশি প্রয়োজন।
এর মধ্যে একটি হলো এন৯৫ রেসপিরেটর যা এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে করে বাতাসে থাকা ৯৫ভাগ কণাকে ফিল্টার করতে সক্ষম। এগুলো সাধারণ সার্জিক্যাল বা মেডিকেল মাস্কের চেয়ে ভালো, তবে এটিও বারবার পরিবর্তন করতে হয়।
দেশটির শিল্প মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী চীন এখন প্রতিদিন প্রায় ছয় লাখ উঁচু মানের মাস্ক উৎপাদন করছে। এক রিপোর্টে বলা হয়েছে ঝেজিয়াং প্রদেশে প্রতিদিন এ ধরণের ১০ লাখ মাস্ক দরকার এবং অন্য প্রদেশগুলো বলছে তারা শুধু এটুকু চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
এর বাইরে হাসপাতালগুলোর বড় ধরণের কোনো মজুদ নেই, সাধারণত তারা দু সপ্তাহের মাস্ক সংগ্রহে রাখে। এখনকার চাহিদা নিয়ে চীনের অনলাইন শপিং সাইট টাওবাও বলছে জানুয়ারিতে দুদিনে তারা আট কোটি মাস্ক বিক্রি করেছে।
চীন কী বিদেশ থেকে মাস্ক পেতে পারে?
চীন গত ২৪শে জানুয়ারি থেকে ২রা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ২২ কোটি মাস্ক কিনেছে এবং মূলত দক্ষিণ কোরিয়া তাদের এটি সরবরাহ করেছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে কর্তৃপক্ষ মেডিকেল উপকরণে সব শুল্ক ও ট্যাক্স প্রত্যাহার করে নেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান '৩এম' যারা উচ্চ মানের মাস্কের বড় উৎপাদক, তারা বলছে বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতে তারা উৎপাদন বাড়াবে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্যামব্রিজ মাস্ক কোম্পানি যারা উচ্চ মানের রেসপিরেটরি মাস্ক উৎপাদন করে তারা বলছে ব্যাপক চাহিদার কারণে তাদের সব মাস্ক বিক্রি হয়ে গেছে। আবার তাইওয়ান ও ভারতের মতো কিছু দেশ ফেস মাস্কের মতো কিছু দ্রব্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। তাইওয়ান বলছে তাদের নিজেদের নাগরিককে সুরক্ষা দেয়াটাই তাদের কাছে অগ্রাধিকার এবং মাস্ক কেনার ক্ষেত্রে একটি রেশনিং সিস্টেম চালু করেছে তারা।
আবার কিছু দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে এমন আতঙ্ক তৈরি হওয়ার কারণে মাস্ক সংকট দেখা দিয়েছে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ১১ জন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খরব নিশ্চিত করে। দেশটিতে ইতোমধ্যেই মাস্ক সংকট দেখা দিয়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলেছে তারা সাধারণ মানুষকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে না।
এন৯৫ রেসপিরেটরি মাস্ক
এমএ/