ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

বেছে বেছে মুসলিমদের ওপর হামলা হচ্ছে

বেছে বেছে মুসলিমদের ওপর হামলা হচ্ছে

ভারতের রাজধানী দিল্লির উত্তর-পূর্বে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩৪ জন নিহত এবং আরও দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। বলাবাহুল্য এসব হতাহতদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু মুসলিম। কেননা গত ৩ দিন ধরে দিল্লির মুসলিমদের টার্গেট করেই চলেছে হামলা, লুটতরাজ এবং ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। সেই ভিডিও অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদনটি।

সোমবার থেকেই মুসলিমদের ওপর চড়াও হয়েছে ভারতের চরমপন্থি হিন্দুরা। দেশের পুলিশ ও প্রশাসনের সমর্থনেই তারা এসব হামলা চালায়। আর এটাকে কোনওভাবেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলা যায় না, যেমনটা সাধারণত ভারতে হয়ে থাকে। কেননা এধরনের দাঙ্গায় সাধারণত দুটি ভিন্ন ধর্ম বা গোষ্ঠীর লোকজন পরস্পরের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু দিল্লিতে কেবল মুসলিদের টার্গেট করে হামলা হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এমনকি ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতেও দিল্লিতে মুসলিমদের ওপর বহুবিধ হামলার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যেমন এক প্রতিবেদনে আনন্দবাজার বলছে, ‘দোকানের মালিক কোন ধর্মের, তা দেখেই আগুন লাগানো হয়েছে। এ পাড়ায় ধর্মের জোরে যাদের দোকান বেঁচে গিয়েছে, অন্য গলিতে সেই ধর্মের জেরেই দোকান পুড়েছে।’

ধর্ম যাচাই করতে উলঙ্গ

ওইসব হামলাকারীরা রাস্তায় লোকজনকে আটকে বেছে বেছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের হত্যা করেছে বা পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। ওই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন সরফরাজ নামের এক যুবক। এসময় তিনি ও তার বাবা একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন। হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচতে তিনি একটি হিন্দু নাম বলেছিলেন। কিন্তু তারপরও বাঁচতে পারেননি। তারা তার প্যান্ট খুলে দেখে নেয় ধর্ম। এরপর তার মাথার হেলমেট খুলে পেটাতে শুরু করে। বাদ যায়নি তার বাবাও। তারা তার মোটরসাইকেলটি কেড়ে নিয়ে এটি জ্বালিয়ে দেয়। এসময় তারা সরফরাজ ও তার বাবাকে জয় শ্রীরাম (হিন্দুদের জাতীয় স্লোগান) স্লোগান দিতে বাধ্য করে।

সরফরাজ বিবিসিকে বলেন, ‘ওরা নাম ধরে ধরে মুসলানদের চিহ্নিত করে শুধু তাদেরই মেরেছে। আর যাদের নাম ও আইডি হিন্দু তাদের ছেড়ে দিয়েছে।’

হামলা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স গাড়িতেও

কেবল মুসলিমদের ওপর হামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। আহত মুসলিমদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সগুলোতেও চলেছে হামলা। এমনই একটি অ্যাম্বুরৈন্সে করে একজন আহত মুসলিমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এই অপরাধে হামলাকারীরা রড দিয়ে পিটিয়ে ওই অ্যাম্বেুলেন্সের জানালার কাচগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। গাড়ির বনেটেও হামলা চলে। এ প্রসঙ্গে ওই অ্যাম্বুলেন্সের এক কর্মচারী বিবিসিকে বলেন,‘ হামলাকারীদের বোঝা উচিত ছিল এটা সরকারি গাড়ি এবং এটি হিন্দু-মুসলিম সবার জন্য। আমাদের কাজ তো সবাইকে সাহায্য করা।’

এখনও সক্রিয় কট্টরপন্থী হিন্দুরা

এদিকে তিন দিনের সহিংসতা শেষে দিল্লীর সড়কগুলোতে পুলিশের উপস্থিতি বেড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় লাঠি হাতে সাধারণ মানুষকেও পাহারা দিতে দেখা গেছে। এতে করে অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে বলা যাচ্ছে না। কেননা বিবিসির ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে এখনও ভেসে আসছে জয় শ্রীরাম স্লোগান। অর্থাৎ তারা এখনও চালানোর জন্য মুখিয়ে আছে।

তবে কি বিক্ষোভ বন্ধ?

হিন্দু হামলাকারীদের ভয়াবহ হামলার পর আতঙ্কে আছে মুসলিমরা। তাই দিল্লিতে আর নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভ হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কেননা দিল্লির মুসলিমরাই এই আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সহিংসতার পর তাদের মনে ভয় ঢুকে গেছে।

এসম্পর্কে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের পাশে না থাকায় সবাই ভয় পাচ্ছে। প্রশাসন সব ওদের (হিন্দু জনগোষ্ঠী) পক্ষে। আমাদের পক্ষে কেউ নাই।’তাই এখন বিতর্কিত ওই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার অবস্থানে নেই মুসলিমরা। এছাড়া তাদের অনেকেই তো এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অন্যত্র চলে গেছে। েএ অবস্থায় আর যাই হউক আন্দোলন তো চলে না। আন্দোলন তো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের কাছে নিজের অধিকার আদায়ের বিষয়। এই মুহূর্তে বিশেষ করে হিন্দুবাদী দল বিজেপির শাসনামলে মুসলিমদের কি সেই অধিকার আছে?

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত