ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

করোনাভাইরাস

ট্রাম্পের পরামর্শে রাসায়নিক উপাদান সেবন, ১ জনের মৃত্যু

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২০, ১৭:৩৪

ট্রাম্পের পরামর্শে রাসায়নিক উপাদান সেবন, ১ জনের মৃত্যু

মার্কিন প্রেনসিডেন্ট ট্রাম্প গবেষকদের জোর গলায় বলেছেন যে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ক্লোরোকুইন সম্ভাব্য ওষুধ হিসাবে কাজ করতে পারে। বিবিসি ও এনবিসি সংবাদ চ্যানেলের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন কথার ফলশ্রুতিতে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টায় ক্লোরোকুইন ফসফেট খেয়ে আমেরিকার অ্যারিজোনায় এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার স্ত্রীর অবস্থাও সঙ্কটজনক।

এদিকে ট্রাম্প চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ওষুধ হিসাবে এই রাসায়নিক উপাদানটির ট্রায়ালের জন্য ইতোমধ্যেই বড় ধরনের গবেষণা কর্মসূচির নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরের ওই দম্পতি যেটি খেয়েছিলেন সেটি পোষা মাছের পানির ট্যাংক পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক। সেটি খাবার অল্পক্ষণ পরেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে ওই রাজ্যের হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়। দুজনেরই বয়স ৬০এর ওপর।

ওই মহিলা এনবিসি সংবাদ চ্যানেলে বলেন সম্প্রতি তিনি টেলিভিশনে মি. ট্রাম্পকে একটি সংবাদ ব্রিফিং-এ কোভিড-১৯এর চিকিৎসায় ক্লোরোকুইনের সম্ভাব্য কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করতে শুনেছিলেন।

তিনি জানান, আমরা মি. ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলন টিভিতে দেখেছি। অনেকবার সেটা টিভিতে দেখিয়েছে। ট্রাম্প বারবার বলেছেন এই ভাইরাসের বলতে গেলে একমাত্র নিরাময় এই ওষুধেই সম্ভব। এসময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারি বলে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম বলেও জানান তিনি।

ফিনিক্সের ওই দম্পতি বলেছেন তাদের পোষা কই মাছের চিকিৎসায় তারা আগে ক্লোরোকুইন ব্যবহার করেছিলেন। প্যাকেটে কিছুটা ওষুধ বাকি থেকে গিয়েছিল । ওই দম্পতি তাদের পানীয়র সঙ্গে অল্প পরিমাণ ওই ক্লোরোকুইন মিশিয়ে তা সেবন করেন এবং ২০ মিনিটের মধ্যে দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পানির ট্যাংকে মাছের জন্য যে ক্লোরোকুইন ব্যবহার করা হয় তা রাসায়নিক উপাদানের দিক দিয়ে ম্যালেরিয়ার জন্য ব্যবহৃত ক্লোরোকুইনের থেকে কিছুটা আলাদা।

মি. ট্রাম্প গত সপ্তাহেই বড় গলায় বলেছিলেন কোভিড ১৯ এর চিকিৎসায় ক্লোরোকুইনের বিরাট সম্ভাবনা আছে বলে তিনি মনে করেন। মহিলা বলেন, আমি বমি করতে শুরু করি আর আমার স্বামীর শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা শুরু হয়ে যায়।

অ্যারিজোনার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতি জারি করে সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে ম্যালেরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইন যেন কোভিড-১৯ ঠেকানোর বা চিকিৎসার জন্য কেউ ব্যবহার না করে। এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আমরা জানি এই মারত্মক রোগ সংক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ এটা ঠেকাতে যে কোন পদ্ধতি ব্যবহারের ঝুঁকি নিতে তৈরি। কিন্তু নিজে নিজের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবেন না।

গত সপ্তাহেই মি. ট্রাম্প এই ক্লোরোকুইন নিয়ে বিরাট আশার কথা শুনিয়েছিলেন। তিনি তার এক টুইটে লিখেছিলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে এই ওষুধ। এর সম্ভাবনা বিশাল। অ্যান্টিবায়েটিক অ্যাজিথ্রোমাইসিনের পাশপাশি এই ক্লোরোকুইন সেবন করলে এই রোগ সারার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে।

হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি গত সপ্তাহেই বলেন, আমরা অবিলম্বে এই ওষুধ বাজারে ছাড়ব। এফডিএ দারুণ কাজ করেছে। তারা অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। তারা এর ব্যবহার অনুমোদন করেছে।

এর পরপরই এফডিএ জানায় ক্লোরোকুইন কোভিড-১৯এর চিকিৎসা, প্রতিহত করা বা নিরাময় কোনটার জন্যই অনুমোদন করা হয়নি। কারণ এই ভাইরাসের ওপর এই ওষুধের কার্যকারিতা এখনও প্রমাণিত হয়নি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের পর নাইজেরিয়াতে ক্লোরোকুইন কেনার হিড়িক পড়ে গেছে এবং ক্লোরোকুইনের বিষক্রিয়ায় অন্তত তিন ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে নাইজেরিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আমেরিকায় কোন ওষুধ বাজারে ছাড়ার লাইসেন্স দেয় যে সংস্থা, ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ), তারা ম্যালেরিয়া, লুপাস এবং রিউমাটয়েড বাতের জন্য এই ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এর কার্যকারিতা এখনও পরীক্ষায় প্রমাণিত না হওয়ায় কোভিড-১৯এর চিকিৎসার জন্য এ ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন তারা দেয়নি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত